উত্তম-সৌমিত্র-শুভেন্দু-শমিত ভঞ্জ পরবর্তী যুগে বাংলা ছবির অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতা ছিলেন সন্তু মুখোপাধ্যায়। উত্তমকুমারের সঙ্গে একাধিক ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। সন্তুর স্বাভাবিক এবং সাবলীল অভিনয় ছিল তাঁর সাফল্যের চাবিকাঠি। দীর্ঘ অভিনয় জীবনে তিনি কাজ করেছেন তপন সিংহ, তরুণ মজুমদার, পূর্ণেন্দু পত্রী, অরিবন্দ মুখোপাধ্যায়, বীরেশ সরকার, অজিত গঙ্গোপাধ্যায়, অঞ্জন চৌধুরী, প্রভাত রায় ও হরনাথ চক্রবর্তী প্রমুখ পরিচালকের ছবিতে। প্রথম ছবিই ছিল তপন সিংহের ‘রাজা’ (১৯৭৫)। এই বছরই কাজ করেছেন তরুণ মজুমদারের ‘সংসার সীমান্তে’ ছবিতে।
advertisement
সন্তু মুখোপাধ্যায় অভিনীত ‘জাল সন্ন্যাসী’ (১৯৭৭) ছবিতে ডাক্তার, ‘শেষরক্ষা’য় বিনোদ, ‘টুসি’ (১৯৭৮)-র কমল চরিত্রগুলি আজও বাংলা ছবির দর্শক মনে রেখেছেন। সন্তু-অভিনীত উল্লেখযোগ্য কিছু ছবি হল– হারমোনিয়াম, কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী, গণদেবতা, বিদ্রোহী, দেবদাস, সন্ধ্যাতারা, খেলাঘর, জাল সন্ন্যাসী, প্রতিমা, কালবেলা, ভালবাসা ভালবাসা, স্ট্রাইকার, মালঞ্চ, এ শুধু আমার, সুইট হার্ট ইত্যাদি৷ মালঞ্চ ছবিতে মাধবীর সঙ্গে কাজ করেছিলেন তিনি। সন্তুর মৃত্যুতে এই ছবির স্মৃতি পথ ধরেই হেঁটে আবেগতারিত হয়ে পড়েছিলেন মাধবী। তাঁর শেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘সাঁঝবাতি’। তিনি প্লে-ব্যাক করেছিলেন ‘দেবদাস'(১৯৭৯), ‘ব্যাপিকা বিদায়’ (১৯৮০), ‘কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী’ (১৯৮১) ইত্যাদি ছবিতে। কমবেশি নব্বইটির মতো ছবি করেছেন। একদা তিনি ছিলেন যাত্রার অত্যন্ত জনপ্রিয় গায়ক-নায়ক। সেইসময় বাংলা যাত্রাপালায় স্বপনকুমার, তপনকুমার, অশোককুমার প্রমুখ অভিনেতা দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। তবুও সন্তু মুখোপাধ্যায়ের যাত্রা দেখার জন্য দর্শকেরা ভিড় করতেন। সেইসময় সন্তু মুখোপাধ্যায় যাত্রাজগতে একাধিক তারকা-অভিনেতার ভিড়ে মাথা উঁচু করে রাজ করে গেছিলেন ।
একাধিক ধারাবাহিকেও অভিনয় করেছেন সন্তু। বহু জনপ্রিয় ধারাবাহিকে দাপটে অভিনয় করেছেন। ইদানীংকালের একটি হল ‘অন্দরমহল’। শেষ ধারাবাহিক ‘মোহর’। জানা যায়, এই ধারাবাহিকে জানুয়ারি পর্যন্ত কাজ করেছিলেন সন্তু। উৎপল দত্তের পিএলটি-তে সন্তু অভিনয় করেছেন ‘দুঃস্বপ্নের নগরী’-তে। গ্রুপ থিয়েটারে নাটকের অভিনয় শিক্ষা তাঁকে অনেকটাই পরিণত করেছিল। প্রথম অভিনয় করেন শৌভনিক-এ, তারপর পিএলটি, থিয়েট্রন। এছাড়াও পেশাদার রঙ্গালয়ে প্রজাপতি, ছদ্মবেশী, রাজদ্রোহী ইত্যাদিতে নিয়মিত নাটক করেছেন। পদ্মপুকুর ইনস্টিটিউট থেকে হায়ার সেকেন্ডারি পাশ করে কলেজে ভর্তি হলেও অভিনয়ের টানে লেখাপড়া আর শেষ করতে পারেননি সন্তু। সংগীত শিক্ষা গীতবিতানে। নাচ শিখেছিলেন গোপাল ভট্টাচার্যের কাছে। শুধু তাই নয় সন্তু মুখোপাধ্যায় যে খুব ভাল গান করতেন তা অনেকেরই অজানা ছিল। তাঁর দুই মেয়ে স্বস্তিকা ও অজপা এবং নাতনিকে নিয়ে সুখেই ছিলেন তিনি। স্ত্রীর মৃত্যুতে অনেকটা ভেঙে পড়েছিলেন অভিনেতা। তবে ক্যান্সারের সঙ্গে শেষ লড়াইটা আর করা হল না তাঁর। তবে তাঁর সরল স্বভাব ও অভিনয়ের জন্য তিনি সকলের মনে থেকে যাবেন চীরকাল।
