কঠিন পরিস্থিকে অনেকটা হালকা করে দেয় রসবোধ। তাঁর বর্তমান পরিস্থির কথা জিজ্ঞেস করতে, রসিকতা করেই সুদীপ্তা বললেন, ‘আমি অন্ধকারের যাত্রী, প্রভু আলোর দৃষ্টি দাও। অন্ধকারে বসে আছি। ঝড়ের পরে ইলেকট্রিসিটি চলে গিয়েছিল। রাত ২ টো নাগাদ এসেছিল। বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা নাগাদ চলে গিয়েছে আর এখনও আসেনি।’
ছোট্ট মে্য়ে শাহিদা ও বোনঝিকে নিয়ে নাজেহাল অবস্থা সুদীপ্তা ও তাঁর পরিবারের। বাড়িতে জল নেই। ওভারহেড ট্যাঙ্ক খালি। বিদ্যুৎ নেই, তাই ওয়াটার পিউরিফায়ার কাজ করছে না। সুদীপ্তা বললেন, ‘খাবার জল কিনে্ রান্না, খাবার বাথরুম, বাসন মাজা সব চলছে। এ ছাড়া তো কোনও উপায় নেই। বাচ্চা দু’টো গরমে কষ্ট পাচ্ছে। মশার কামড়ে ঘুমতে পারছে না। ওদের দিদির বাড়িতে পাঠিয়ে দিলাম। আমি, আমার মেজদি ও স্বামী বাড়িতেই আছি।’
advertisement
যোধপুর পার্ক চত্তরে সুদীপ্তার বাড়ি। সেখানে বেশ গাছপালা রয়েছে। ঝড়ের সময় তেমন কিছু ভেঙে যায়নি বাড়িতে। তবে জানালার ফাক ফোকর দিয়ে হু হু করে জল ঢুকেছে। তাঁর কথায়, ‘বন্ধ জানালার ফাঁক দিয়ে জল ঢুকেছে। বারান্দা, ছাদে গাছ পড়ে তচনচ হয়ে গিয়েছে। অন্য আরেকটা সমস্যাও হচ্ছে। বাড়ির সামনে নোংরা ফেলার গাড়ি রয়েছে। কর্পোরেশন থেকে রোজ অনলোড করে নিয়ে যায়। রাস্তায় গাছ পড়ায় পৌরসভার গাড়ি ঢুকতে্ পারছে না। আমার বাড়িরা সামনে গোটা যোধপুর পার্কের ময়লা জমা হয়ে, ভয়াবহ একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।’
বাড়িতে পোষ্য রয়েছে, তাই সকলে মিলে বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়া সম্ভব নয়। তবে বাংলার গ্রামেগঞ্জে এত মানুষের ক্ষতি হয়েছে তা দেখে নিজের সমস্যা খুব ছোট বলে মনে হচ্ছে সুদীপ্তার। তিনি বললেন, ‘সাধারণ মানুষের যা ক্ষতি হয়েছে, তারপর নিজের কষ্টের কথা আর বলতে ইচ্ছে করছে না। গাড়ি স্টার্ট করে মোবাইল চার্জ করছি। ইন্টারনেটে টুকটাক খবর দেখছি। মানুষের বিরাট ক্ষতি হয়েছে। সেই তুলনায় আমি অনেক ভাল আছি।’
গোটা শহর জুড়ে জেনারেটর ভাড়া করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সুদীপ্তা। কিছুতেই কোনও ব্যবস্থা করে উঠতে পারছেন না। সুদীপ্তা কথায়, ‘আমার অ্যাপার্টমেন্টে সব ক’টা ফ্ল্যাটে বয়স্ক মানুষ রয়েছে। তাঁদের অবস্থা চোখে দেখা যাচ্ছে না।’
সুদীপ্তার সমস্যার কথা জানতে পেরে বন্ধু-বান্ধব, পরিচিত প্রচুর লোকজন খবর নিয়েছেন, সেটা মন ছুঁয়ে গিয়েছে তাঁর। সুদীপ্তার কথায়, ‘কেউ ফোন করে বলছেন খাবার দিয়ে যাচ্ছি। কেউ বলছেন জল দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের এক বন্ধু তাঁর খালি ফ্ল্যাটে গিয়ে থাকতে বলছেন। এগুলো তো কিনতে পাওয়া যায় না। আগে বুঝতেই পারিনি আমাকে এত মানুষ ভালবাসেন।’
যতই প্রতিযোগিতাময় হয়ে উঠুক পৃথিবী, সহমর্মিতা এখনও রয়েছে। এতো সমস্যার মধ্যে এটাই ভাল লাগার, এমনটাই মনে করেন সুদীপ্তা।
Arunima Dey