বোনি আর আমার জীবনের উপর দিয়ে আয়লা, আমফান বয়ে গিয়েছিল এক সময়ে। সেই ঝড় হৃদয় বিদীর্ণ করে দিয়েছিল বললে কম বলা হবে। আমাদের মেরুদণ্ডে আঘাত করেছিল। কিন্তু আজ আমরা এক জায়গায় দাঁড়িয়ে। তার কারণ পরিবারের চারটি মেরুদণ্ড একজোট হয়েছিল তখন। আমার, বোনির, মায়ের, বাবার। তাই ভাইফোঁটায় নতুন করে কিছু প্রমাণ করার দরকার পড়ে না। কারণ প্রতিটা দিন আমাদের কাছে খুব জরুরি।
advertisement
তাও এবারের ভাইফোঁটা আমার জন্য একটু বেশিই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আজ বুঝলাম, আমার বোনি বড় হয়ে গিয়েছে। রোজগার করে আমাকে দেড় হাজার টাকা উপহার দিয়েছে! বোন আমার অধ্যাপক এখন। ইচ্ছে আছে, ওই টাকাটা কোনও দিন খরচ করব না। থাকবে আমার ওয়ালেটের এক কোণে। মনে হচ্ছে, যেন নিজের চোখের সামনে মেয়েকে বড় হতে দেখছি।
আরও পড়ুন: শুধু ভাই নয়, আরও এক বিশেষ মানুষকে ফোঁটা দিলেন ঋদ্ধিমা, দেখে নিন
আসলে বোনি আমার থেকে অনেকটাই ছোট। বয়সের ফারাক সাত বছর। একদম ছোট্টবেলা থেকেই মা-বাবা আমাদের ক্রেশে রেখে কাজে বেরিয়ে যেতেন। আমরা থাকতাম বাটানগরে। আর সেখান থেকে কলকাতায় কাজে আসতেন মা-বাবা। অতটা সময়ে আমিই বোনির খেয়াল রাখতাম।
মনে আছে, একদিন ক্রেশ থেকে ফিরে বুঝলাম বোনির খিদে পেয়েছে। এদিকে মায়ের একটু দেরি হত ফিরতে। তখন আমিও ৭ বছরের ছোট্ট একটা ছেলে। অত বুঝি না। কিন্তু মাকে দেখে দেখে শিখে গিয়েছিলাম বোধহয়। একদিন সেটাই চেষ্টা করি নকল করতে। বোনির যে খিদে পেয়েছে। নিজে নিজে দুধ গরম করে ফিডিং বোতল থেকে কয়েক ফোঁটা হাতে নিয়ে দেখলাম, সেটা খব গরম কিনা, তার পর বোনের হাতে বোতল দিয়ে দূরে বসে দেখলাম। বোন ধীরে ধীরে পুরোটা শেষ করে ফেলল। ওদিন যে কী আনন্দ হয়েছিল তা ভাষায় কী ভাবে বোঝাব! আর সেদিন বুঝেছিলাম, আমি সেরা দাদা।
তার পরেও যখন কেউ আমার আর বোনির সম্পর্কের দিকে আঙুল তোলে, সেটার থেকে ভয়াবহ কিছুই হতে পারে না। এর পরে বোনকে জড়িয়ে ধরতে গেলে অন্য কিছু মাথায় চলতে পারে না। যদি কেউ তার বোনকে জড়িয়ে ধরার সময়ে অন্য কিছু ভাবতে থাকে, তা হলে তার ডাক্তার দেখানো উচিত। আমার নয়।
আরও পড়ুন: দাদা জিৎ-কে ফোঁটা দিয়ে ভাতৃদ্বিতীয়া পালন শুভশ্রীর, কেমন কাটল তারকার ভাইফোঁটা? দেখুন
আর তাই বোনির প্রতি ভালবাসা প্রমাণ করার দরকার নেই আমার। বাবা-মা সারা জীবন থাকবে না, এটা সত্য। শেষ পর্যন্ত আমি আর বোনিই একসঙ্গে থেকে যাব। একে অপরের জন্য। এক পরিবারের মতো। ভাই আর বোনের মতো। যার থেকে সুস্থ, স্বাভাবিক আর কিছুই হতে পারে না।