TRENDING:

Satyajit Ray Birth Anniversary :‘ফেলুদাকে চিনি না, আমি ব্যোমকেশ পড়ি, স্বপনকুমার আমার খুব ভাল লাগে!’ ৫০ বছর আগে সত্যজিৎকে বলেছিলেন হবু তোপসে

Last Updated:

Sonar Kella 50: সকলে অপেক্ষা করে ছিলেন ‘সোনার কেল্লা’-র সংরক্ষিত সংস্করণ বা রেস্টোর্ড ভার্সন প্রথম বার বড় পর্দায় দেখবেন বলে৷ ৫০ বছর আগে মুক্তি পাওয়া এই ছবি শুধু স্মৃতি নয়৷ বরং ফেলুভক্ত বাঙালির দিনযাপনের অঙ্গ৷

impactshort
ইমপ্যাক্ট শর্টসলেটেস্ট খবরের জন্য
advertisement
কলকাতা : ‘‘স্মার্ট ছেলেরা এসব পাউডার টাউডার মাখে নাকি!’’ এই এককথায় তোপসের ইচ্ছেয় জল ঢেলেছিলেন দীর্ঘদেহী স্রষ্টা৷ ফলে এক বিন্দু মেকআপ না করেই তপেশরঞ্জন মিত্র হয়ে জীবনে প্রথম বার পর্দায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন পাঠভবন স্কুলের প্রাক্তনী৷ ‘সোনার কেল্লা’ ছবি ঘিরে এরকমই শতেক স্মৃতিচারণায় ১ মে ভরে উঠেছিল নন্দন প্রেক্ষাগৃহ৷ একটু আগেই বাইরে তখন বৈশাখের তপ্ত দুপুর৷ আর্দ্রতা, ঘাম, তাপপ্রবাহ সবকিছুকে ছাপিয়ে অপেক্ষা করে আছে সর্পিল লাইন৷ সেই ভিড়ে নানাবয়সিদের মধ্যে চমকে দিচ্ছে আজকের প্রজন্মের উপস্থিতিও৷ সকলে অপেক্ষা করে ছিলেন ‘সোনার কেল্লা’-র সংরক্ষিত সংস্করণ বা রেস্টোর্ড ভার্সন প্রথম বার বড় পর্দায় দেখবেন বলে৷ ৫০ বছর আগে মুক্তি পাওয়া এই ছবি শুধু স্মৃতি নয়৷ বরং ফেলুভক্ত বাঙালির দিনযাপনের অঙ্গ৷ এই ছবির প্রতিটা মুহূর্ত, সংলাপ জড়িয়ে গিয়েছে বঙ্গজদের শ্বাস প্রশ্বাসে৷ সেই কথাই আরও একবার ধরা পড়ল পরিপূর্ণ নন্দনে৷
এই ছবির প্রতিটা মুহূর্ত, সংলাপ জড়িয়ে গিয়েছে বঙ্গজদের শ্বাস প্রশ্বাসে
এই ছবির প্রতিটা মুহূর্ত, সংলাপ জড়িয়ে গিয়েছে বঙ্গজদের শ্বাস প্রশ্বাসে
advertisement

‘সোনার কেল্লা’ ছবির ৫০ বছর উপলক্ষে সত্যজিৎ রায়ের জন্মবার্ষিকীর আগের দুপুরে ‘সোসাইটি ফর দ্য প্রিজারভেশন অব সত্যজিৎ রায় আর্কাইভস’-এর উদ্যোগে নন্দনে আয়োজিত হয়েছিল আলোচনাসভার৷ যোগ দিয়েছিলেন অশোক মুখোপাধ্যায়, সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায়, শান্তনু বাগচী এবং কুশল চক্রবর্তী৷ সেখানে আইকনিক ছবির এই কয়েকটি মুখ নিজেরাও ফিরে গেলেন অর্ধশতক আগের জয়লসমীরে৷ সঙ্গে করে নিয়ে গেলেন দর্শকদেরও৷ আলোচনার সূত্রধর তথা সঞ্চালক ছিলেন পরিচালক সন্দীপ রায়৷ সত্যজিৎপুত্র নিজেও ছিলেন এই ছবির ইউনিটের অন্যতম সদস্য৷ সঞ্চালক প্রথমেই মাইক্রোফোন দিলেন সেই ‘সাংবাদিক’-এর হাতে৷ ‘মুকুল ধর কি জাতিস্মর’ শিরোনামে যাঁর প্রতিবেদন দেখে গুপ্তধনের খোঁজে মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন অমিয়নাথ বর্মন এবং মন্দার বোস৷

advertisement

ছবির সেই আংটি পরা সাংবাদিক অশোক মুখোপাধ্যায় আজ প্রবীণ৷ জানালেন তাঁর মঞ্চাভিনয় দেখে ভাল লেগেছিল সত্যজিৎ রায়ের৷ সাতের দশকে তাঁর বাড়িতে টেলিফোন ছিল না৷ পড়শির বাড়িতে ফোন করেছিলেন স্বয়ং সত্যজিৎ রায়৷ জিজ্ঞাসা করেছিলেন তাঁর ছবিতে ছোট ভূমিকায় অভিনয় করতে অশোক রাজি কিনা৷ শুনে মঞ্চের দাপুটে অভিনেতা অশোক বলেছিলেন, রাজি হবেন না মানে! সত্যজিৎ রায়ের ছবির শ্যুটিঙে শুধু দাঁড়িয়ে থেকে দেখার অনুমতি পেলেও তিনি আগ্রহী৷

advertisement

তিন দিনের বদলে দু’দিনেই হয়ে গিয়েছিল অশোকের কাজ৷ তাঁর সঙ্গে একই দৃশ্যে ছিলেন প্রখ্যাত আলোকচিত্রী নিমাই ঘোষ৷ ছবিতেও তিনি ছিলেন চিত্রগ্রাহকের ভূমিকাতেই৷ তবে তাঁর আক্ষেপ ছিল যে ছবিতে তিনি সংলাপহীন৷ পরিচালককে বলেছিলেন, ‘মানিকদা, আপনি সব সংলাপ তো অশোককেই দিয়ে দিলেন৷’ সঙ্গে সঙ্গে তৈরি হয়েছিল নতুন সংলাপ৷ আলোকচিত্রী বলেছিলেন, ‘একটু হাসো তো খোকা৷ হাসো৷ হাসলে ছবি ভাল হয়৷’ উত্তরে মুকুল বলেছিল ‘আমার হাসি পাচ্ছে না৷’ কিংবদন্তির ইম্প্রোভাইজেশনও আজ মাইলফলক৷

advertisement

ছবিতে আগাগোড়া গোমড়া মুকুলের মুখে হাসি ফুটেছিল শেষ দৃশ্যে৷ যখন গাড়িচালকের পাঁজাকোলাবন্দি হয়ে সোনার কেল্লা ছাড়ছেন নকল ডাক্তার হাজরা৷ ফেলুদা, তোপসেদার সঙ্গে কলকাতায় নিজের বাড়িতে ফিরেছিল মুকুল নিজেও৷ সেই যে পূর্বজন্মের ফেলে আসা ভাঙা বাড়ি ছেড়েছিল মুকুল, গিয়েছিল চার দশক পর, ২০১৬ সালে৷ মঞ্চে বসে অতীতে ফিরেছিলেন অভিনেতা কুশল চক্রবর্তী৷ বললেন দ্বিতীয় বার সোনার কেল্লায় গিয়ে অভূতপূর্ব অভ্যর্থনা পেয়েছিলেন৷ দেখেছিলেন তাঁর নামে দোকান৷ যেখানে থরে থরে সাজানো আছে ‘সোনার পাথরবাটি’৷ জয়সলমীরের স্থানীয়রা তাঁকে বলেছিলেন, সত্যজিতের ছবির আগে রাজস্থানের বাকি অংশের লোকেরা ওই জেলাকে বলত ‘যাঃ শালে মর!’ অর্থাৎ এতটাই বন্ধুর, প্রতিকূল ছিল সীমান্তবর্তী ওই এলাকা, যে ওখানে গেলে মৃত্যু অবধারিত৷ সেই শহরকে পর্যটন মানচিত্রে প্রথমসারিতে বসিয়েছেন সত্যজিৎ৷ তাঁর প্রতি চিরকৃতজ্ঞ জয়সলমীরবাসীরা কুশলকে বলেছিলেন, ‘‘মাথার উপরে ভগবান৷ পায়ের নীচে বালি৷ আর আমাদের পাশে সত্যজিৎ৷ উনি আমাদের ভাস্কোদাগামা৷ আমাদের আবিষ্কার করে উনিই পরিচিতি দিয়েছেন৷’’

advertisement

নন্দনে ‘সোনার কেল্লা’-র কুশীলবরা

এহেন ফেলুস্রষ্টাকে কিনা মুখের উপর সদ্য গোঁফের রেখা ওঠা কিশোর সিদ্ধার্থ বলেছিলেন ‘‘আমি ব্যোমকেশ পড়ি৷ খুব একটা বুঝি না৷ স্বপনকুমার খুব ভাল লাগে৷ তবে কে ফেলুদা, আমি চিনি না৷’’ স্কুলের শিক্ষক পার্থ বসুর বাড়িতে বাংলা ব্যাকরণ বুঝতে গিয়েছিলেন সাড়ে তেরো বছরের সিদ্ধার্থ৷ সেখান থেকে মাস্টারমশাইয়ের সঙ্গে সোজা বিশপ লেফ্রয় রোডের আমোঘ বাড়িতে৷ তাঁর স্বপনকুমারপ্রীতি জেনে একটুও রেগে যাননি সত্যজিৎ৷ বরং একটু একটু করে নানা কথায় আগ্রহী করে তুলেছিলেন অভিনয়ে৷ যদিও ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়ে প্রথমেই নাকচ করেছিলেন স্কুলপড়ুয়া৷ জানতেন বাবা মা’র অনুমতি মিলবে না৷ কিন্তু সত্যজিতের ব্যক্তিত্বের কাছে শেষ পর্যন্ত নতজানু হয়েছিল অভিভাবকের আপত্তি৷ ফেলুবেশী সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে হাওড়ার ৮ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে ৭ নম্বর আপ তুফান এক্সপ্রেসে তোপসে হয়ে বসেছিলেন সিদ্ধার্থ৷ ফেলুর মতো মাস্টার যেমন তোপসে পেল না৷ ঠিক তেমনই, অভিনয় থেকে বহুদূরে নিজের পেশায় লব্ধপ্রতিষ্ঠ হলেও নামী রেস্তরাঁর কর্ণধার সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায়ও বঙ্গহৃদয়ে বিরাজ করে গেলেন প্রদোষচন্দ্র মিত্রের স্যাটেলাইট হয়েই৷

সন্দীপ রায় এবং সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায়

পাঠভবনের প্রাক্তন শিক্ষক পার্থ বসুর সূত্রে দ্বিতীয় মুকুল শান্তনু বাগচীকেও খুঁজে পেয়েছিলেন সত্যজিৎ৷ তাঁর সঙ্গে প্রথম আলাপের দৃশ্য আজও ভাসে সন্দীপের চোখে৷ বললেন তাঁরা শান্তনুর বাড়িতে অপেক্ষা করছিলেন৷ পর্দার পিছন থেকে স্কিড করে এসে ঘরে ঢুকেছিল সেই খুদে৷ এই আবির্ভাবেই মুগ্ধ হন সত্যজিৎ৷ পরে ছবিতেও পর্দার পিছন থেকেই উকিল ঠাকুরদা শিবরতন মুখুজ্যের বৈঠকখানায় বসে থাকা ফেলুদাদের সামনে আসে ‘বেলুচিস্তান থেকে আগত’দের হাতে অপহৃত হওয়া দ্বিতীয় মুকুল৷ এয়ারগান হাতে তার বলা ‘মিসটেক, মিসটেক’ আজ অমর সংলাপ৷ ঘটনাচক্রে তিনি নিজেও আজ পরিচালক৷ বললেন ছোটদের সঙ্গে সত্যজিৎ মিশতেন বন্ধুর মতো৷ তাই পর্দায় তাঁর শিশুচরিত্ররা এত প্রাণবন্ত, এত সাবলীল৷ তাঁকে একবাক্যে সমর্থন করলেন মঞ্চে বসা সিদ্ধার্থ এবং কুশলও৷

ঠিক একইভাবে বন্ধু হয়ে ছ’ বছরের কুশলকে সত্যজিৎ বলেছিলেন পছন্দের থিয়েটার থেকে কিছু অভিনয় করে দেখাতে৷ ছোট্ট কুশল নাটক দেখতে ভালবাসতেন৷ বাড়িতে দিব্যি নকলও করতেন তাবড় অভিনেতাদের৷ ঠিক সেভাবেই অতশত কিছু না ভেবে সত্যজিতের বৈঠকখানায় তিনি অভিনয় করে দেখিয়েছিলেন ‘তিন পয়সার পালা’ থেকে অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়কে৷ সঙ্গে তাঁর হাতের আঁকাও মুগ্ধ করেছিল পরিচালককে৷ ছবিতেও নানা দৃশ্যে মুকুলকে ছবি আঁকতে দেখা গিয়েছে৷ পূর্বজন্মের টুকরো স্মৃতির ঘোরে ভেসে আসা রতনদের বাড়ি, গিরিধারীর বাড়ি, তাদের হোলি খেলার জায়গা সে ধরে রাখত আঁকার খাতাতেই৷

নন্দনে সোনার কেল্লা-র সংরক্ষিত সংস্করণ প্রদর্শনের আগে তিন চার মিনিটের কিছু ফুটেজ দেখানো হয় স্ক্রিনে৷ শ্যুটিঙের সময় সেই মুহূর্তগুলি ক্যামেরাবন্দি করেছিলেন সন্দীপ রায়৷ অমূল্য সেই ছবিতে শ্যুটিঙে মগ্ন সত্যজিৎ৷ পরম যত্নে তৈরি করছেন, আগলে রাখছেন আমাদের ছোটবেলা৷ যাতে আমরাও মুকুলের মতো কোনওদিন বড় না হই৷ বড় না হওয়া সেই দর্শকদের মুহুর্মুহু করতালিতে ভেসে গেল পর্দায় ৫০ বছর আগে ২৭ ডিসেম্বর মুক্তি পাওয়া এক ম্যাজিক৷

বাংলা খবর/ খবর/বিনোদন/
Satyajit Ray Birth Anniversary :‘ফেলুদাকে চিনি না, আমি ব্যোমকেশ পড়ি, স্বপনকুমার আমার খুব ভাল লাগে!’ ৫০ বছর আগে সত্যজিৎকে বলেছিলেন হবু তোপসে
Open in App
হোম
খবর
ফটো
লোকাল