গত কয়েক বছর ধরে প্রচার তথা বিনোদন জগতের থেকে অনেকটাই দূরে রয়েছেন সংযুক্তা। তবে এখনও আমজনতা তাঁর মধ্যেই খুঁজে পান দশভুজাকে। পরবর্তীতে দূরদর্শনের ‘কথায় কথায়’ অনুষ্ঠানে এসে সংযুক্তা বলেছিলেন মা দুর্গার ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার নেপথ্যে ছিল নাচের প্রতি ভালবাসা।
খুব ছোট থেকেই নাচ শিখছেন সংযুক্তা। জ্যাঠতুতো দিদি যেতেন পাড়ার স্কুলে গান শিখতে। তাঁর সঙ্গে বায়না করেই সেখানে যেতেন সংযুক্তাও। নাচ শিখবেন বলে। প্রথমে লোকনৃত্য, তার পর কত্থকের প্রশিক্ষণ নেওয়া সংযুক্তার মনে চিরকালের জন্য আসন পেতে বসল ভরতনাট্যম নৃত্যকলা।
advertisement
বাবা মায়ের সঙ্গে যামিনী কৃষ্ণমূর্তির একটি অনুষ্ঠান দেখতে গিয়েছিলেন সংযুক্তা। সেই শৈশবেই তাঁর চোখে এবং মনে লেগে যায় যামিনী কৃষ্ণমূর্তির নৃত্যশৈলী। সেদিনই তিনি ঠিক করেন ভরতনাট্যমই শিখবেন। অন্তরাত্মার ডাক শুনে অনুভব করেন, এই ধারার নাচের সঙ্গেই একাত্ম বোধ করছেন।
এর পর গোবিন্দন কুট্টি এবং তাঁর স্ত্রী থাঙ্কমণি কুট্টির কাছে দীর্ঘ দিন ধরে ভরতনাট্যম, মোহিনীআট্যম এবং কথাকলির প্রশিক্ষণ নেন সংযুক্তা৷ তাঁর সেই প্রিয় ‘কলামণ্ডলম্’ নাচের স্কুলেই পান দশভুজার ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার সুযোগ৷ ১৯৯৪ সালে তখন তিনি শ্রী শিক্ষায়তন কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী৷ তাঁর নাচের স্কুলে দূরদর্শনের উচ্চপদস্থ কয়েক জন কর্মী যান৷ কিছু অনুষ্ঠানের জন্য শিল্পী বাছতে৷ সেখানেই তাঁকে দুর্গা হিসেবে পছন্দ করা হয়৷
তার আগে ‘চিচিং ফাঁক’-সহ দূরদর্শনের কিছু অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন সংযুক্তা৷ কিন্তু মহালয়ার প্রভাতী অনুষ্ঠানে দশভুজার ভূমিকেয় অভিনয় করতে এসে বুঝলেন আগের অনুষ্ঠাবের সঙ্গে এর প্রচুর পার্থ্ক্য৷ এর পর শুরু হয় দীর্ঘ প্রশিক্ষণ৷ ফাইটমাস্টারের কাছে শেখেন কীভাবে মহিষাসুরের সঙ্গে লড়াইয়ে দৃশ্যে অভিনয় করবেন৷ ওয়ার্কশপের পর হত শ্যুটিং৷ স্টুডিওর পাশাপাশি আউটডোরেও হত শ্যুটিং৷ তার জন্য চলত মানসিক প্রস্তুতিও৷ বেশ ক’দিন ধরে হবিষ্যান্ন বা সাত্ত্বিক আহার গ্রহণ করতেন সংযুক্তা৷ আধ্যাত্মিকতাকে অনুভব করতেন মননে ও যাপনে৷
মাটির আট হাত শরীরের সঙ্গে লাগিয়ে করতে হত শ্যুটিং৷ তার জন্য শরীরে কালসিটেও পড়ে যেত৷ কিন্তু সে কথা এক বারের জন্যেও বোঝা যেত না তাঁর নাচের মুদ্রায়৷ এতটাই ছিল কাজের প্রতি তাঁর নিষ্ঠা৷
তাঁর জীবনের প্রথম থেকে শেষ পছন্দ পর্যন্ত রয়েছে নাচ৷ নৃত্যকলা ছাড়া অন্য কিছু ভাবতেই পারেন না সংয়ুক্তা৷ বিয়ের পর বেশ কয়েক বছর তিনি প্রবাসী৷ আমেরিকার একাধিক শহর এবং কানাডার টরন্টোতে তিনি বসবাস করেছেন৷ সেখানেও তিনি নাচ নিয়ে গবেষণা করেছেন, নাচ নিয়ে পড়িয়েছেন, নাচ শিখিয়েছেন এবং অবশ্যই নিজে নাচ পরিবেশন করেছেন৷ শারদোৎসব বা অন্যত্র এখনও তাঁর কাছে সবথেকে বেশি আর্জি আসে দশভুজা রূপে অবতীর্ণ হওয়ার জন্যই৷
প্রচারের আলো তথা বিনোদন জগৎ থেকে দূরে নিভৃতে নিজের মতো জীবনকে উপভোগ করছেন সংযুক্তা৷ এখনও তাঁর মননের সঙ্গী সেই, নাচই৷