স্যমন্তক লিখছেন, "শিল্পীদের একে অপরকে অপমান করাটা নতুন গজিয়ে ওঠেনি।" এক সময়ে এক সিনিয়র গায়ক স্যমন্তককে গান গাওয়া নিয়ে তির্যক মন্তব্য করেছিলেন। সেই অভিজ্ঞতাই শেয়ার করলেন তিনি।
গায়ক লিখছেন, "২০১১ সালে তৎকালীন একটি সংবাদ-মাধ্যমে আমাকে ও আরও কিছু গায়ক ও গায়িকাদের ডাকা হয়েছিল। সেই সময়ে “গানের ওপারে” ধারাবাহিকটি সদ্য শেষ হয়েছে, যার সুবাদে আমার ডাক পড়েছিল। অনুষ্ঠানে এক বিখ্যাত জাতীয়-পুরস্কারপ্রাপ্ত গায়ক (যার বাংলা আধুনিক গান শুনে আমাদের অনেকেরই ২০০০ সালের শুরুটা কেটেছে বিভিন্ন এফ.এম চ্যানেলের মাধ্যমে) আমাকে বিচ্ছিরিভাবে অপমান করা শুরু করেন এবং নানা রকম ভেংচি কেটে, আমার গান গাওয়া কালীন (“বাঁধ ভেঙে দাও”) বিকট অঙ্গভঙ্গী করে চেয়ার ছেড়ে উঠে নাচতে আরম্ভ করেন। এরপর আমাকে ভেঙ্গিয়ে, মানে “গানের ওপারের” গোরার চরিত্রটিকে ভেঙ্গিয়ে, গান গাইতে আরম্ভ করেন। সঞ্চালিকা মুখে তীর্যক হাসি রেখে ওই গায়ককে উপর্যুপরি ইন্ধন জোগাতে থাকেন। আমাকে ওই গায়ক আরও বলেন - “ও স্বরলিপি দেখে গাওয়ার যোগ্যতা রাখেনা, তাই ঐভাবে গায়”। আমি যে একটা চরিত্রের জন্যে গাইছিলাম, নিজের ইচ্ছেমতো রবীন্দ্রনাথের গানকে ডিকন্সট্রাক্ট করতে গাইনি, সেটা বেমালুম, আরো হাজার হাজার মানুষের সঙ্গে এই গায়কও আমাকে নিচু করে অপমান করার তালে মনে রাখেননি।"
advertisement
স্যমন্তক লিখছেন, "আমি তখন নেহাতই ছেলেমানুষ, কলেজ পাশ করে নিজের ব্যান্ড তৈরী করছি, নিজের লেখা অরিজিনাল গান গাওয়ার স্বপ্ন নিয়ে। এই বিখ্যাত গায়ক আমার গান গাওয়ার ইচ্ছের কোমরে সপাটে, পাবলিকলি লাথির পর লাথি মেরে চললেন। কিসের এতো জিঘাংসা বোঝার আগেই অনুষ্ঠানশেষে মুখে দিগ্বিজয়ীর হাসি নিয়ে বিরাট কেতা মেরে বেরিয়ে গেলেন চ্যানেলটির অফিস থেকে। অন্য অনেক নবাগত শিল্পীরা হয়তো এই মব-লিনচিং-এর কারণে আর গান গাইতেন না পরের দিন থেকে। এই অনুষ্ঠানটি অনেকেই সেই সময়ে দেখেছিলেন ও সামাজিক মাধ্যমে ছোটোখাটো প্রতিবাদও জানিয়েছিলেন। তাঁদের আমার ভালোবাসা।"
স্যমন্তকের পোস্টেও সেই একই প্রশ্ন উঠেছে, কী ভাবে একজন শিল্পী হয়ে আর একজনকে এভাবে কটূক্তি করতে পারেন। গায়কের কথায়, "দু’সপ্তাহ হয়েছে একই ধরণের বিতর্কের শেষ দেখা যাচ্ছেনা। গায়ক হয়ে আরেক গায়ককে অপমান করা, ও কয়েক ঘন্টার মধ্যেই অপমানের লক্ষ্য যিনি তাঁর অনুষ্ঠানে অসুস্থ হয়ে পড়ে অকস্মাৎ মৃত্যু, আগুনে ঘৃতাহুতির মতন কাজ করেছে - আর স্বভাবতঃই নানা প্রশ্নের মুখে ফেলেছে শ্রোতাদের। অনেকেই হতবাক হয়ে যাচ্ছেন যে একজন শিল্পী আরেকজন শিল্পীকে এইভাবে নিচু করেন কীভাবে?এইরকম জঘন্যভাবে বুলি করেন? এও কী সম্ভব?"
শেষ পর্যন্ত স্যমন্তক বলছেন, "একজন শিল্পীর সৌজন্যবোধ নেই আরেক শিল্পীর প্রতি?? দুঃখের সঙ্গে জানাই, না নেই। সংগীত জগতের বাইরের মানুষেরা পরিস্থিতিটা এই ঘটনার জেরে টের পেলেন। একে ওপরের গুনগান গাওয়া আর ভাইচারা আওড়ানোগুলো বেশিরভাগ সময়েই নির্লজ্জ দেখনদারি যখন তারা নিজেদের গোষ্ঠির শিল্পী না হন। নিজের দলের হলে তো সব ঠিক আছে - নিজেরাই নিজেদের তানসেন বলে পিঠ-চাপড়াচাপড়ি করে, সংগীত-জগতের সমস্ত কাজ নিজেরাই বাগিয়ে নিয়ে, এবং যারা এই গোষ্ঠীর পেটোয়া - তেল মেরে তাদের পশ্চাৎদেশ তুলতুলে করে দিয়েছে - তারা বাদে, বাকিদের লাথি-ঝ্যাঁটা বা বাদের খাতায়। গণ-ধোলাই’এর পোস্টার-বয় এইসব লোকজন একদিনে তৈরী হয়না। তাদের হয়ে ওঠার জন্যে আশেপাশের অতি এনার্জেটিক enablers - রাও থাকেন।"
স্যমন্তক জানান, তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় গণধোলাইয়ের পক্ষপাতী নন। তাই নাম না করেই পোস্ট করেছেন। যার ফলে জল্পনা শুরু হয়েছে, কার জন্য এই পোস্ট করেছেন তিনি। এই একই কারণেই এতদিন পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিষয়টি তুলে ধরেননি।