সানগ্লাস-এর কঙ্কণা চশমা পড়লেই দেখতে পেয়ে যান ভবিষ্যৎ। যা তিনি কিনেছিলেন নাসির উদ্দিনের অ্যান্টিক দোকান থেকে। ধীরে ধীরে বদলে যায় কঙ্কণার জীবন। বাস্তব এবং পরা বাস্তবের যে এক অদ্ভুত মিল হতে পারে, তা এই ছবিতে করে দেখিয়েছিলেন ঋতুপর্ণ ঘোষ। 'সানগ্লাস' কোনও হলে মুক্তি পায়নি। ভাগ্য করে নন্দনে ছিল একটি মাত্র শো। যারা দেখেছেন একমাত্র তারাই জানেন অবিশ্বাস্য ছবি তৈরি করেছিলেন ঋতু।
advertisement
'ঊনিশে এপ্রিল' থেকে শুরু করে 'অসুখ', 'দহন' হোক বা 'রেনকোট' সব ছবিতেই একটা মানসিক অন্ধকার যেন ফুটে উঠত তাঁর ছবিতে। কোথাও গিয়ে একটা একাকিত্ব কাজ করত! প্রতিটা ছবি ঋতুপর্ণর মন থেকে উঠে এসেছিল। কিন্তু এক মাত্র 'সানগ্লাস' এই সব ছবি থেকে একেবারে আলাদা ছিল। ঋতুপর্ণ বেঁচে থাকলে এর পর নিশ্চয় সব অন্ধকার কাটিয়ে আলোর ছবি বানাতেন। কিন্তু তা হয়নি।
কেমন মানুষ ছিলেন ঋতুপর্ণ? একটা শিশু-সুলভ মন ছিল তাঁর। যিশুর সঙ্গে চলছে শ্যুট। সময় মতো এসেছেন সেটে ঋতুও। প্রথম শট নিতেই কেমন যেন হয়ে গেলেন ঋতু। দৌড়ে কোণায় গিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলেন। এদিকে সেটে লাইট ক্যামেরা অভিনেতা সবাই তৈরি। ঋতু কোথাও নেই! জানা গেল হঠাৎ করেই বাড়ি চলে গিয়েছেন তিনি। কাউকে কিচ্ছু না জানিয়ে। ওই শটটি মন ছুঁয়ে গিয়েছিল তাঁর। আবেগ ধরে রাখতে না পেরে নিজেকে ঘর বন্দি করেছিলেন।
আরও পড়ুন: ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার জাদু মন্ত্র! কমবে ওজন, কোলস্টেরল! জানুন সুস্থ থাকার মন্ত্র!
'সানগ্লাস'-এর গল্পটি ঋতুপর্ণ লিখেছিলেন অনেক আগে। সে সময় তিনি পত্রিকার জন্য ফিচার লেখেন। নাম ছিল 'চৈতালির চশমা'! এই গল্পটি ঋতুপর্ণ প্রথম পড়িয়েছিলেন তাঁর প্রিয় শুধু নয়, আইডল অপর্ণা সেনকে। সেদিন ওই ছেলের লেখা পড়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন মিসেস সেন! পুরুষ থেকে নারী মনে অবতরণ করেছিলেন ঋতু। আর বোধ হয় এই কারণেই মনে মনে তিনি ছিলেন ভীষণ একা। খুব একা! তাইতো নিজেকে মাঝে মধ্যেই লুকিয়ে ফেলতেন বইয়ে ঠাসা ঘরে। রবি ঠাকুরকে ঋতু যেভাবে চিনেছিলেন, খুব কম জনেই তেমন জানেন। তবে তাঁর তৈরি রবীন্দ্রনাথ তেমন জায়গা পায়নি।
ঋতু একদিন জানলা দিয়ে দেখতে পান, তাঁর বাড়ির সামনে ফুল কিনছেন অপর্ণা সেন। ছুটে গিয়ে আলাপ করতে ইচ্ছে হয়। কোনও কিছু না ভেবে, সত্যিই গিয়ে আলাপ করেছিলেন তিনি। ঋতুপর্ণ এমন একটা মানুষ ছিলেন, যে সকলের সঙ্গেই, তাঁর নানা স্মৃতি রয়েছে। হাতে ধরে অভিনয় শিখিয়েছেন যিশু, রাইমা থেকে শুরু করে অনেককেই! মনে একা হলেও সিনেমা জগৎ তো ঋতুর সাজানো সংসার ছিল! আজ তাঁর জন্মদিন। অথচ মানুষটাই নেই! এত কিসের তাড়া ছিল ঋতুপর্ণর! এই ঋতু আর বদলাবে না! চীরতরে বিদায় নিয়েছে! তবে তাঁর তৈরি সিনেমা বারে বারে নানা রঙের ঋতুতে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে আগামীকে!