TRENDING:

‘ম্যায় শায়ার তো নেহি....’ রোমান্টিক নায়কের ট্র্যাজিক বিদায়

Last Updated:

‘ম্যায় শায়ার তো নেহি....’ রোমান্টিক নায়কের ট্র্যাজিক বিদায়

impactshort
ইমপ্যাক্ট শর্টসলেটেস্ট খবরের জন্য
advertisement
#মুম্বই: এ যেন মৃত্যু মিছিল। মন খারাপের মরসুমে আরও মন খারাপ বাড়িয়ে দিতে অজানা কোনও পর্বতে তপস্যা করতে চলে গেলেন ঋষি কাপুর। কাভি কাভি ও ফিরবেন না তিনি। দেখা হবে না সাগর কিনারে। অন্য মুলকে পাড়ি দিয়ে ফানা হলেন ঋষি। ফিরে দেখা তাঁর ফিল্মি সফর।
advertisement

বলিউডের প্রথম পরিবারের সন্তান তিনি। রাজ কাপুরের ছেলে। পৃথ্বীরাজ কাপুর এর নাতি। অভিনয় তাঁর রক্তে। অ্যাকশন আর কাটের মধ্যেই ঘোরাফেরা করবে তাঁর জীবন, এটা যেন আগেই লেখা হয়ে গিয়েছিল কোথাও। ছোটবেলা ছবি তোলার সময় মুখের নানা অঙ্গিভঙ্গি করে নজর কারার চেষ্টা করতেন। তখনই তাঁর বাবা রাজ কাপুর বুঝেছিলেন এই ছেলে নায়ক হবে। রাজই তাঁকে হাতে ধরে নিয়ে আসেন সিনে জগতে। শ্রী ৪২০- এর প্যার হুয়া ইকরার হুয়া গানটা সকলের স্মৃতিতে এখনো স্পষ্ট। বৃষ্টির মধ্যে হেঁটে যাওয়া বাচ্চা ছেলে দুটোর মধ্যে একটি ছিলেন ঋষি। সেটে এসে নাকি একেবারে অভিনয় করতে ইচ্ছে করছিল না তাঁর। অবশেষে নার্গিস তাঁকে চকলেট খাওয়ানোর লোভ দেখান। তারপরে কোন হাঙ্গামা ছাড়াই সিনটা সেরে ফেলেন ঋষি। তারপর পর্দায় আবার ফিরে আসেন ১৬ বছর বয়সে। এবারও বাবার জুতোয় পা গলালেন  ঋষি। মেরা নাম জোকার-এ রাজ কাপুরের কৈশোর কালের চরিত্রটি করেন তিনি। শিশুশিল্পী হিসেবে এই ছবির জন্য  জাতীয় পুরস্কারের সম্মান পান তিনি। পুরস্কারটা হাতে নিয়ে তাঁর শিক্ষাগুরু বাবা, রাজ কাপুরের সঙ্গে দেখা করতে যান। বাবা বলেন আগে ঠাকুরদার সঙ্গে কথা বলতে। পৃথ্বীরাজ কাপুরের পায়ে জাতীয় পুরস্কার রাখেন ঋষি। আশীর্বাদ চান তাঁর কাছে। তখনই অঝোরে কাঁদতে শুরু করেন পৃথ্বীরাজ। মাথায় হাত রেখে বলেন, রাজ নে মেরা karz উতার দিয়া আজ। সেইদিন এইকথার মানে বোঝেন নি  তিনি। তবে বুঝেছিলেন পরে। তাইতো উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্মান চিরকাল বজায় রাখার চেষ্টা করেছেন ঋষি।

advertisement

ঋষির নায়ক হিসেবে ডেবিউ ছবি ববি। ডিম্পল কাপাডিয়ার বিপরীতে মিষ্টি ঋষিকে দেখে তখন মন হারিয়েছেন বহু তন্বীরা। তবে ঋষিকে এই ছবি দিয়ে লঞ্চ করার কোনও রকম পরিকল্পনা ছিল না রাজের। মেরা নাম জোকার ছবিটি করতে গিয়ে বেশ দেনায় পড়ে গিয়েছিলেন রাজ কাপুর। সেই দেনা শোধ করার জন্যই রাজ ঠিক করেন একটি টিন  এজ লাভ স্টোরি বানাবেন। তেমন কোনও বড় স্টারকে নেওয়ার মতো ক্ষমতা সেইসময় ছিলনা রাজ কাপুরের। নিজের ছেলেকে নিয়ে ফাটকা খেললেন তিনি। gamble-এ জিতে যান রাজ। এই ছবি হয়ে যায় কাল্ট। ববি প্রিন্ট জামা থেকে এই ছবির গান , এখনও ববির ক্রেজ একটুও কম হয়নি। এই ছবির সেটে মৃদু প্রেম হয় ডিম্পল ঋষির। তবে তা matured করার আগেই বিয়ে হয়ে যায় ডিম্পলের।

advertisement

ববি ছবিটি দিয়ে রাজ কাপুর উপহার দেয় বলিউডের প্রথম চকলেট হিরো ঋষিকে। সত্তরের দশকে ছবি বানানোর ধরন ছিল একই রকম। গ্যাংস্টার ক্রাইম থ্রিলার, খড় চিবাতে চিবাতে  নায়কের এন্ট্রি, অ্যাংরি ইয়ং ম্যান টাই তখনকার ট্রেন্ড। আজ আমরা যেটাকে রোম কম বলে থাকি, সেই ছবির চল ঋষি কাপুর শুরু করেন।

ঋষির দ্বিতীয় ছবি জাহেরিলা ইনসান বিশেষ ব্যবসা করেনি। তবু কিশোর কুমারের গলায় ও হাসিনা গানটি আজও সমানভাবে জনপ্রিয়। ডিম্পল কাপাডিয়ার পর নিতু সিং এর সঙ্গে জুটি বাঁধলেন তিনি। খেল খেল মে ছবিটিতে দুজনের রসায়ন চোখে পড়ার মতো। তারপর অমর আকবর অ্যান্থনি, দুসরা আদমি, ঝুটা কাহি কা, ধন দৌলত এর মতো বেশ কিছু ছবিতে একসঙ্গে কাজ করেছেন ঋষি ও নিতু। কাজ করতে করতেই প্রেমে পড়েন তাঁরা। ১৯৮১ সালে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হন এই দম্পতি।

advertisement

সত্তর এবং আশির দশকে ঋষির ছবির হাত ধরে যেন তরুণ-তরুণীরা নতুন করে প্রেম করতে শেখেন। লায়লা মজনুর মত লিজেন্ডারি প্রেমের ছবিতে নিজের ছাপ ফেলেছেন ঋষি। সরগম, প্রেম রোগ, এই ধরনের ছবির পাশাপাশি তিনি করেছেন কর্য-এর মত থ্রিলার ছবি। ১৯৮৫ সালে ববির পর আবার ডিম্পল এর সঙ্গে জুটি বাঁধলেন ঋষি। কামাল হোসেনের মতো বড় অভিনেতা থাকলেও ঋষি সমস্ত স্পটলাইট টেনে নিয়েছিলেন তাঁর দিকে। ঋষি- ডিম্পলের কেমিস্ট্রিতে আবারও মজলেন দর্শক। সাগর ছবির সময় একটি মজার ঘটনা ঘটে। শর্ট এর মাঝে যখন লোকেশন চেঞ্জ এর জন্য সময় লাগে, তখনকার দিনে মেকআপ ভ্যানের চল ছিল না। সেটেই বসে থাকতেন অভিনেতা-অভিনেত্রীরা। লাইটিং করা হয়ে গেলে রমেশ সিপ্পি বলতেন, কামাল জিকে ডেকে আনো। চিন্টু কেও আসতে বল। কৌতুক করে একবার ঋষি তাঁর পরিচালককে বলেছিলেন কামাল হাসানের থেকে তিনি বয়সেও বড়, বেশিদিন ইন্ডাস্ট্রিতে কাজও করছে। ওকে জি সম্মধন করে সম্মান দেওয়া আর আমাকে চিন্টু? তার এই চিন্টু ডাকনাম একেবারেই পছন্দ ছিল না। তবে সাহস করে সেই কথা কোনদিন বাবা-মার কাছে প্রকাশ করতে পারেননি তিনি। কাপুর খানদানের, একটি রীতি আছে। অন্যান্য পরিবারের মতো এই পরিবারের বাবা ছেলের সম্পর্ক তেমন সহজ নয়। ঋষি তার বাবা রাজ কাপুর কে সাহাব বলে ডাকতেন। গল্প করা তো দূরের কথা। রাজ কাপুরের বেঁচে থাকার শেষ দিন পর্যন্ত তাঁকে যথেষ্ট ভয় পেতেন ঋষি। একইভাবে গড়ে উঠেছিল রণবীর ও তাঁর সম্পর্ক। একটা কাচের দেয়াল ছিল তাঁদের মধ্যে। একে অপরকে দেখতে পেতেন ঠিকই, কিন্তু অনুভব করতে পারতেন না। ছেলের সঙ্গে সহজ হতে চাইতেন। কিন্তু কোথাও যেন একটা

advertisement

আশির দশকের শেষে ঋষি জুটি বাঁধলেন শ্রীদেবীর সঙ্গে , ছবির নাম চাঁদনী। বিনোদ খান্না, ঋষি কাপুর, শ্রীদেবী । ছবি হিট তো বটেই গানগুলি অসম্ভব জনপ্রিয়। ভাগ্যের পরিহাস চাঁদে গ্রহণ লাগিয়ে চলে গিয়েছেন এই ছবির সব কটি নক্ষত্র।

হেনা, বোল রাধা বোল, দিওয়ানার মতো ছবিতে প্রায় অর্ধেক বয়সী নায়িকাদের সঙ্গে রোমান্স করেছেন তিনি। কেরিয়ারের সেকেন্ড ইনিংস টা ঋষি খেলেছেন বেশ সতর্ক হয়ে। লাক বাই চান্স, লাভ আজকাল, ডি ডে প্রত্যেকটা ছবিতে ঋষির চরিত্রের মেয়াদ যতই ছোট হোক না কেন তার সঙ্গে সম্পূর্ণ জাস্টিস করেছেন তিনি। বিশেষ করে কাপুর এন্ড সন্স এবং মুলক ছবি দুটিতে ঋষি যা অভিনয় করেছেন অন্য কোন অভিনেতা করতে পারতেন কিনা যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।

সেরা ভিডিও

আরও দেখুন
নদীতে পারে উৎসব! ঝাঁকে ঝাঁকে মানুষ ছুঁটছে নদীর দিকে! কারণ শুনলে চমকে উঠবেন
আরও দেখুন

ঋষি একটু অধৈর্য ছিলেন। বারবার একই শট দিতে বললে মেজাজ হারাতেন। বাচ্চাদের মত অভিমান করতেন। তবে তিনি তাঁর ভুল স্বীকার করতে জানতেন। কাপুর এন্ড son's ছবির শুটিংয়ের সময় পরিচালক শাকুন বাত্রার সঙ্গে বেশ কয়েকবার ঝগড়া করেছেন। তবে ছবিটি যখন মুক্তি পায়, তখন ছবিটা দেখে নিজের ভুল স্বীকার করেন। হাসিমুখে নিজের ভুল মেনে নিতে জানেন তিনি। খেতে, আড্ডা দিতে, হই হই করেতে ভালোবাসতেন তিনি। সকলের চোখে জল এনে ৩০ শে এপ্রিল সকাল বেলা হঠাৎই আলবিদা জানিয়ে দিলেন। দু বছর ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করলেও শেষ রক্ষা হলো না। চলে গেলেন ঋষি কাপুর। মনে রয়ে গেল তার মিষ্টি হাসিটা।

বাংলা খবর/ খবর/বিনোদন/
‘ম্যায় শায়ার তো নেহি....’ রোমান্টিক নায়কের ট্র্যাজিক বিদায়
Open in App
হোম
খবর
ফটো
লোকাল