TRENDING:

Theatre Review: মেফহিলে দেখা আয়নার মুখ, দেবাশিসের ‘নূরজাহান’ দাপিয়ে বেড়ায় মগজে

Last Updated:

Theatre Review: বিশ্বের প্রান্তরে যখন মাঝে মাঝেই উচ্চস্বরে, সদর্পে দাপিয়ে বেড়াতে দেখা যায় ফাসিস্ত শক্তিকে, যখন স্বৈরাচার জনপ্রিয়তার শীর্ষে ওঠে, তখন ‘নূরজাহান’-এর আয়নার আলোয় যাঁরা নিজের মুখ দেখতে পান, তাঁদেরকে সতর্ক করে দেবাশিসের এই নাটক৷

impactshort
ইমপ্যাক্ট শর্টসলেটেস্ট খবরের জন্য
advertisement
বাংলা সাধারণ রঙ্গালয়ের দেড়শো বছর৷ পরিচালক দেবাশিস সেই উপলক্ষে ‘থিয়েটার প্ল্যাটফর্ম’ দলে তৈরি করেছেন দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের লেখা ‘নূরজাহান’ নাটকটি৷ মূল নাটকটি বহরে অনেক বড়৷ সম্পাদনা করে দু’ঘণ্টার কিছু বেশি সময়ের বেড়ায় বেঁধেছেন তিনি এই নাটককে৷ ইতিহাস চিন্তকেরা হয়ত নাটকের প্রেক্ষাপট ও ঐতিহাসিক তাৎপর্য নিয়ে অনেক কথা বলতে পারবেন, বলতে পারবেন নাট্যকার কতটা ঐতিহাসিক তথ্যের প্রতি সৎ থেকেছেন৷ কিন্তু আমরা আজ না হয় সেসব কথা বললাম না, বরং নির্মাণ নিয়ে হোক আমাদের আজকের এই আলোচনা৷
নূরজাহান নাটকের একটি দৃশ্য
নূরজাহান নাটকের একটি দৃশ্য
advertisement

দেবাশিসের কাজ যাঁরা নিয়মিত দেখেন, তাঁরা জানেন, তিনি শুধু মাত্র আধুনিক চিন্তনের নাট্য নির্মাতা তাই নন, তিনি ক্লাসিক্যালের উল্টোপিঠে দাঁড়ানো এক উদ্ধত, নির্দিষ্ট বক্তব্য৷ নির্মাণের ক্লাসিক চেতনার থেকে তাঁর নির্মাণ স্বত্তা লাফিয়ে লাফিয়ে অনেক দূর চলে গিয়েছে৷ তিনি বৃত্তের বাইরে রাখছেন নিজের চিন্তাকে৷ যে ভাবে আলোকবর্ষ পেরিয়ে তরঙ্গের মতো কাঁপতে কাঁপতে তারার আলো এসে ধাক্কা খায় আমার-আপনার চোখে, দেবাশিসের নির্মাণ তেমনই, তরঙ্গের মতো সুক্ষ কিন্তু তীব্র, ইন্দ্রিয়কে তা আঘাত করতে বাধ্য৷ ‘প্রথম রাজনৈতিক হত্যা’, ‘রাবন রিলোডেড’-এর নির্দেশক এখানেই আলাদা৷ মঞ্চের চলিত জ্যামিতিকে তিনি প্রথমেই ভেঙে দিয়েছেন সানন্দে৷

advertisement

দেবাশিসের দ্বিতীয় নির্মাণ নৈপুন্যের পরিচয় তাঁর ‘স্পেস’ ও ‘প্রপ’-কে ব্যবহারের অত্যাশ্চর্য ক্ষমতায়৷ প্রসেনিয়ামের নির্দিষ্ট নিয়মের গণ্ডী ভেঙে দেন তিনি বাংরবার৷ মঞ্চের উপরে যা আছে, আশেপাশে যা আছে, সব, সবই নাটকের অংশ হয়৷ কখনও সেটা মঞ্চের দু’পাশের সিঁড়ি, কখনও পর্দা, কখনও মঞ্চের সামনের পরিসর৷ কেতাবী অর্থে আরও কঠিন করে এই তত্ত্বের কথা উল্লেখ করা যেত বটে, তবে এ ক্ষেত্রে মোদ্দা কথা হল, দেবাশিস এই নাটকে এমন কিছু স্পেসের ব্যবহার করেন বাংরবার, যা দৃশ্যকাব্যের মিতাক্ষর চেতনাকে আঘাত করে৷ ‘নূরজাহান’ তাই এক নব আবিস্কার৷

advertisement

দেবাশিস নিজে এই নাটকে জাহাঙ্গীরের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন, রায়তী ভট্টাচার্য অভিনয় করেছেন ‘নূরজাহানে’র ভূমিকায়৷ প্রতিবাদী ‘লায়লা’র চরিত্রে অ্যাফ্রোদিতে রায়, ‘শের খাঁ’-এর চরিত্রে সৌরভ সাহা, ‘শাহাজাহানে’র চরিত্রে রাজু ধর ও ‘খসরু’-র চরিত্রে অভ্যুদয় দে৷ এই নামগুলি ছাড়াও আরও জনা পঁচিশেক নাম আছে অভিনেতার৷ উল্লেখ করলে সকলেরই করতে হয়, তবু এঁদের নাম আলাদা করে উল্লেখ করার কারণ, এঁরা কোথাও বাকিদের তুলনায় একটু করে এগিয়ে গিয়েছেন৷ তবে দেবাশিসের নৈপুন্যে এখানেও, যে তিনি কাপ্তান বাবুর মতো কাউকে ‘শো’-অফের সুযোগ দেননি, বেঁধে দিয়েছেন, শিল্পের দড়িতে, যা এক গুরুত্বপূর্ণ কাজ৷ অধুনা বাংলা নাটকে অনেক ‘নায়ক সুলভ’ অভিনেতাই বুঝে গিয়েছেন, মঞ্চে দাঁড়িয়ে কোন দিকে কাঁধ ঝাঁকালে নারী হৃদয়ে হিল্লোল তোলা সম্ভব, তাই প্রয়োজন না হলেও তাঁরা মঞ্চে উঠে তেমন করছেন৷ দেবাশিস বুঝিয়েছেন, নাটক আগে, শিল্পীর ব্যক্তিগত ঝলক, পরে৷

advertisement

এই নাটকের সমস্ত কথাতেই বারংবার দেবাশিসের নাম আসবে, কারণ, আলো, মঞ্চ, সম্পাদনা ও নির্দেশনা এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয়, সবই দেবাশিস একাই করেছেন৷ তপন থিয়েটারের যে শো দেখতে আমি গিয়েছিলাম, সেখানে তার বাইরেও একটি নাম আলাদা করে জানতে চেয়েছিলেন দর্শকেরা৷ সঙ্গীতশিল্পীর নাম৷ এই নাটকে অসংখ্য গান ব্যবহৃত হয়েছে৷ একটি শানিত গানের দল আগাগোড়া নাটকের বিভিন্ন ইমোশনকে ধরতাই দিয়েছেন গানে৷ গানের দলে ছিলেন, জয়দীপ সিনহা, মঞ্জিমা চট্টোপাধ্যায়, তালবাদ্যে ছিলেন অভ্যুদয় দে, পৃথ্বীরাজ চৌধুরী, এ ছাড়া সহ-শিল্পীরা হলেন শুভ্রজিৎ সেনগুপ্ত, অনীক সেনগুপ্ত, মৈনাক মুখোপাধ্যায়৷ গানের গবেষণার কাজ করেছেন ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, বাংলা নাটকে ক্রমে নিজেকে উচ্চতায় প্রতিষ্ঠা করছেন তিনি৷ এই নাটকের সহকারী নির্দেশনার পাশাপাশি ভাস্কর পোশাক ও আবহের কাজও করেছেন, যাতে তাঁর চিন্তার অদ্ভুত দার্শনিকতাও উপচে ওঠে৷

advertisement

সেরা ভিডিও

আরও দেখুন
লালগোলাতে রাজরাজেশ্বরী রূপে পূজিতা হন মা কালী! দেওয়া হয় ইলিশের ভোগ
আরও দেখুন

নূরজাহান কোনও কালের নাটক নয়৷ আসলে ইতিহাসকে ক্ষমতার চাতাল থেকে সূর্যের আলো আড়াআড়ি করে ফেলে এক ব্যবচ্ছেদ করার অপরেশন টেবিল৷ নূরজাহান চরিত্রটিও কোনও লিঙ্গ, জাতি ভেদ মানে না, শুধু অবক্ষয়ের সময়ে ক্ষমতার এক প্রতিরূপ হয়ে সে গেয়ে যায় নিজেরই রূদালি৷ সে জানে ধ্বংস অনিবার্য, মৃত্যু নিশ্চিত, তবু তাঁকে পেয়ে বসে ক্ষণিকের ক্ষমতার মত্ততা৷ বিশ্বের প্রান্তরে যখন মাঝে মাঝেই উচ্চস্বরে, সদর্পে দাপিয়ে বেড়াতে দেখা যায় ফাসিস্ত শক্তিকে, যখন স্বৈরাচার জনপ্রিয়তার শীর্ষে ওঠে, তখন ‘নূরজাহান’-এর আয়নার আলোয় যাঁরা নিজের মুখ দেখতে পান, তাঁদেরকে সতর্ক করে দেবাশিসের এই নাটক৷

বাংলা খবর/ খবর/বিনোদন/
Theatre Review: মেফহিলে দেখা আয়নার মুখ, দেবাশিসের ‘নূরজাহান’ দাপিয়ে বেড়ায় মগজে
Open in App
হোম
খবর
ফটো
লোকাল