সফল আইটি কর্মী থেকে হঠাৎ সিনেমা-সিরিজ কেন?
এর জন্য দায়ী 'বাকিটা ব্যক্তিগত (Baki Ta Bektigyata) ।" প্রদীপ্ত ভট্টাচার্যর ছবি। এই ছবিটা দেখার পর থেকেই আমার মধ্যে একটা সিনেমা তৈরির খিদে কাজ করতে থাকে। যদিও আমি এর আগে থেকেই লেখালেখি করতাম। এরপর অমিতদার সূত্রে প্রদীপ্তদার সঙ্গে যোগাযোগ করি। সে সময় একটা ৬০ হাজার টাকা বাজেটের ছোট্ট সিনেমা বানাবো বলে ঠিক করি। এবং প্রদীপ্তদার কাছে যাই এডিট করে দেওয়ার জন্য। তখন দাদার পরামর্শ আমার খুব কাজে আসে। এবং জানতে পারি দাদা রূপকলা কেন্দ্রর ছাত্র। সেই দেখে আমিও পরীক্ষা দিই। কিন্তু একবারেই যে আমি সুযোগ পেয়ে যাব ভাবিনি। শুরু হয় পড়াশুনো।
advertisement
আর চাকরিটা?
প্রথমে ভেবেছিলাম চাকরি করতে করতেই আমি রূপকলা কেন্দ্রে পড়বো। কিন্তু দুটো হয়ে ওঠে না। তাই ছেড়েই দিই চাকরি।
কিন্তু সিনেমায় তো ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত!
সে তো জানতাম। কিন্তু সে সময় আমার চোখে শুধু সিনেমা লেগে ছিল। আমার রূপকলা কেন্দ্রের পড়া এখনো শেষ হয়নি। করোনার জন্য পিঁছিয়ে গিয়েছে।
'রক্তবিলাপ' দানা বাঁধল কী ভাবে?
করোনার জন্য আমাদের ডিপ্লোমা আটকে গেল। বাড়িতে বসে আছি। খুব বিরক্ত সব কিছু নিয়ে। তখন আমি একটা গল্প লিখি। এবার ফেসবুকের মাধ্যমে ওটিটি মাধ্যমে যুক্ত একজনের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। তাঁকে মেসেজ করি ফেসবুকে। তিনি প্রথম আমার ওই লেখাটা পড়েন। এবং এক সপ্তাহ পরে বলেন 'আমার কাছে কি এমন কোনও গল্প আছে, যেটা একটাই লোকেশনে হতে হবে।" আমি হ্যাঁ বলে দিই। কিন্তু কিছুই ছিল না। ভেবেছিলাম লিখতে সময় পেয়ে যাব হয়ত। তবে আধ ঘণ্টার মধ্যেই পাঠাতে হবে বুঝিনি। এবার ওই ৩০ মিনিটে আমি একটি গল্পের খসড়া তৈরি করি। যার নাম ছিল 'কন্ট্রোলার'। আটটা চরিত্র। এবং ভিডিও গেমের ওপর তৈরি সেই গল্প। এটা পাঠাই। কিন্তু ফের রিপ্লাই আসে না।
তারপর?
সে সময় আমার বাড়ির কম্পিটিউটারটা খারাপ ছিল। পাশেই আমার বন্ধু অর্নিত ছেত্রী থাকে। ওর কাছে যাই। বলি চল কিছু একটা করি। তারপর দু'জনে মিলে ওর বাড়িতেই দিনের পর দিন রাত জেগে স্ক্রিপ্ট তৈরি করি। এবং একের পর এক ওটিটিতে যাই এবং না শুনি। এমনকি হইচই-এর অফিসে আমাদের প্রথমবার কারও সঙ্গে দেখা করতেই দেওয়া হয়নি। তবে শেষ পর্যন্ত যোগাযোগ হয়। আমরা স্ক্রিপ্ট পড়ে শোনাই। সে সময় কল্লোল লাহিড়ি আমাদের স্ক্রিপ্টে অনেক কিছু সাহায্য করেন। এছাড়াও তৃষা নন্দী, সঞ্চিতা কাঞ্জিলাল মানে পূজাদির অবদান ভোলার নয়। তবে ভিডিও গেমের ওপর যে ভাবনাটা আমার ছিল সেটা বদলে যায়। তখন মাথায় আসে 'রক্তবিলাপ'(Rawkto Bilaap)। আমি আর অর্নিত দু'জনে এক সঙ্গেই পরিচালনা করেছি এই সিরিজ। নতুনদের পাশে দারুণ ভাবে থেকেছেন ভিনোদ ভাল্লা স্যর। অনেক ধন্যবাদ তাঁকে।
নতুন পরিচালক। সোহিনী সরকার, তুহিনা দাস, কাঞ্চন মল্লিক সহ এত জন অভিনেতার সঙ্গে কাজ করতে অসুবিধে হয়নি?
সে আর এক অধ্যায়। আমাদের একদিন হাউস থেকে ডাকা হল। স্ক্রিপ্ট পড়ে শোনাতে হবে। গিয়ে দেখি একটা ঘরে টলিউডের বহু জনপ্রিয় অভিনেতা। আমাকে বলা হয় সকলে স্ক্রিপ্ট শুনতে চান। আমার তো অবস্থা খারাপ। সকলেই খ্যাতনামা। আমি নতুন। যাই হোক আমি আর অর্নিত হাল ছাড়িনি। বহু অভিনেতা আমাদের স্ক্রিপ্ট শুনেছেন। শেষ পর্যন্ত সোহিনী সরকার, সপ্তর্ষি মৌলিক, তুহিনা দাস, কাঞ্চন মল্লিক, ইন্দ্রাশিস রায়, গৌরব রায় চৌধুরী, মোক্ষ সেনগুপ্ত, প্রান্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়, শাওন চক্রবর্তী, চান্দ্রেয়ী ঘোষ, সুদীপ মুখোপাধ্যায়কে নিয়েই সব ফাইনাল হয়।
শ্যুটিংয়ের সময় ঠিক কী মনে হয়েছিল?
আমি অভিনেতাদের কাট-অ্যাকশান বলতেও দু'বার ভেবেছি। যেমনটা হয় আরকি। তবে সকলেই এত ভাল যে আমাকে সকলেই সাহায্য করেছেন। আট দিনের শ্যুটিং যে কীভাবে কেটে গিয়েছে বুঝতে পারিনি। কাজ, এক সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া। বিশেষ করে সোহিনীদি থাকলেই শ্যুটিং মাতিয়ে রাখতেন।
মজাও হয়েছে নিশ্চয় অনেক?
আমাদের সেটে একটা ইলেকট্রো ম্যাগনেটিং মেশিন ব্যবহার করা হয়েছে। ঘোস্ট হান্টিং মেশিন। প্যারানরমাল কাজ যে সত্যি হয় এই মেশিন তাঁর প্রমাণ। আমরা এটা বিদেশ থেকে আনাই। অনেকে বলেছেন এসব কিছু নেই। কিন্তু একজন ইঞ্জিনিয়ার হয়ে আমি বলছি এটা সত্যিই আছে। তা এই মেশিনে মাঝে মধ্যে আলো জ্বলে ওঠে। ভূতের সন্ধানে আলো জ্বলে। শ্যুটিং মাঝে মধ্যেই ওই মেশিন আওয়াজ করত। ব্যস ভূতের ভয়ে অভিনেতারাই কাবু। প্রায় সকলেই ভয় পেয়েছেন। তারপর কাঞ্চনদা আর পায়রা, সে নিয়ে তো মজার ঘটনার শেষ নেই। তবে আমাদের শ্যুটিং একটা ছোট্ট মেয়ে অভিনয় করেছে রাইমা। ওকে যত দেখেছি অবাক হয়েছি।
কেন? সে কী দুষ্টুমি করল?
ওকে রাত ১১ টায় কলটাইম দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেটা রাত ২টো হয়ে যায়। রাইমা তো ঘুমিয়ে পড়েছে। এবার ওকে ডেকে বলছি, সোনা মা চলো চকলেট দেব। উঠবে তুমি? সে সোজা উঠে বলে, "ওসব লাগবে না, কী করতে হবে বল?" ওইটুকু মেয়ে এত বুদ্ধিমতী ভাবা যায় না।
তোমার পরের কাজ কী?
'দাশু' নামের একটা গল্প নিয়ে কাজ এগোচ্ছে। কমেডির ছলে আসবে। এটা আমি একাই পরিচালনা করব। আপাতত এটুকুই।
টলিউডের দৌড়ে টিকে থাকার কৌশল তাহলে রপ্ত?
সে জানি না। তবে কাজটা শিখতে পেরেছি 'রক্তবিলাপ'-এর হাত ধরে। এটুকুই অনেক। আমি সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের খুব ভক্ত। টলিউডের অনেককে দেখেই আমি স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি। আর একজন যার কথা সব সময় বলতে হয়, সে হল দেবালয় ভট্টাচার্য। দাদার সাজেশন ভোলার নয়। দেখা যাক সে দৌড় কোথায় গিয়ে থামে।