Filmgyan-এর কাছে শিল্পার স্বামী বলেন যে, ‘বিগত প্রায় ২০ বছর ধরে দু’টি বিকল কিডনি নিয়েই জীবনযাপন করছেন প্রেমানন্দজি। এক দিনে ৫ ঘণ্টার জন্য তাঁকে ডায়ালিসিস করতে হয়। তা সত্ত্বেও তাঁর মুখে হাসি লেগেই থাকে। তিনি আনন্দেই থাকেন। আর তাঁকে একটা প্রশ্ন করার বদলে আমি তো বলেছিলাম যে, স্যার আমি আপনাকে একটি কিডনি দান করতে চাই। আর আমি নিশ্চিত যে, আমার মতো শয়ে শয়ে মানুষ এটাই করতে চান। আর আমার কিডনি, আমি যাঁকে ইচ্ছা দেব। কিন্তু এই ছোট্ট বিষয়টা নিয়ে অনলাইনে ব্যাপক ট্রোলিং শুরু হয়েছে।’
advertisement
নিজের এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে রাজ কুন্দ্রা তো খোলামেলা ভাবে আলোচনা করেছেন। কিন্তু কিডনি দান করার প্রক্রিয়ার বিষয়ে বিশদে অনেকেই জানেন না। আর কিডনি দাতা এবং গ্রহীতার কী কী মেনে চলা উচিত। এই বিষয়ে আলোকপাত করছেন ব্যাঙ্গালোরের অ্যাস্টার হোয়াইটফিল্ড হাসপাতালের নেফ্রোলজি অ্যান্ড কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট বিভাগের লিড কনসালট্যান্ট ডা. তপতী মুখোপাধ্যায়। তিনি জানান যে, কিডনি দান বা কিডনি ডোনেশন সাধারণ ভাবে একটি নিরাপদ প্রক্রিয়া। কিডনি দান করার পরেও দাতারা সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবেন।
আসলে একবার কিডনি ডোনেট করা হলে অন্য কিডনিটি আকারে বৃদ্ধি পায়। আর দেহের সমস্ত কাজ করার জন্য একটা কিডনিই যথেষ্ট। ডা. তপতী মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘আসলে আজকাল হাইপারটেনশন এবং ডায়াবেটিস খুবই সাধারণ সমস্যা হয়ে উঠেছে। তাই আমরা কিডনি দাতাদের সব সময় ভাল খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রার অভ্যাস বজায় রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকি। সেই সঙ্গে কিডনি রিজার্ভ লো থাকার কারণে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাওয়া চলবে না।’
ডা. মুখোপাধ্যায় আরও তুলে ধরেন যে, যিনি কিডনিটি পাচ্ছেন, তাঁর শরীরে কিন্তু রিজেকশন, সংক্রমণ, ওষুধ সংক্রান্ত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মতো জটিলতা দেখা দিতে পারে। শুধু তা-ই নয়, প্রাথমিক সার্জিক্যাল কমপ্লিকেশনও হওয়ার আশঙ্কা থাকে। দীর্ঘমেয়াদি জটিলতার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে নতুন কোনও রোগের আবির্ভাব। তাঁর বক্তব্য, ‘এই ট্রান্সপ্ল্যান্ট বা প্রতিস্থাপন ইমিউনোলজিক্যাল ভাবে চ্যালেঞ্জিং হতে চলেছে। তবে এই জটিলতা অল্প সংখ্যক মানুষের মধ্যেই সাধারণত দেখা যায়। আর সম্ভাব্য জটিলতার বিষয়ে রোগীদেরও সচেতন করা হয়ে থাকে। সর্বোপরি ডায়ালিসিসে থাকার তুলনায় প্রতিস্থাপন বা ট্রান্সপ্ল্যান্ট চিকিৎসার আরও ভাল বিকল্প হয়ে উঠতে পারে।’
কী কী সতর্কতার কথা মাথায় রাখতে হবে?
মুম্বইয়ের কোকিলাবেন ধীরুভাই আম্বানি হাসপাতালের ইউরোলজিস্ট এবং রেনাল ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জেন কনসালট্যান্ট ডা. শ্যাম ভার্মা আবার indianexpress.com-এর কাছে জানিয়েছেন যে, কিডনি দান করতে গেলে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। সেটা কিডনি দানকারী এবং কিডনি প্রাপক উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
ব্যাখ্যা করে ডা. ভার্মা বলেন যে, ‘একজন দাতার জন্য প্রথম এবং প্রধান সতর্কতা হল সার্বিক সুস্থতা নিশ্চিত করার জন্য এবং উভয় কিডনি সুস্থ আছে কি না, তা নিশ্চিত করার জন্য একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ মেডিক্যাল চেক-আপ করানো। আসলে কিডনি দান করার পর অন্য কিডনিটি যাতে স্বাভাবিক ও সুস্থ ভাবে কাজ করতে পারে এবং ডোনারের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে পারে, তার জন্যই এই পরীক্ষা করা বাধ্যতামূলক।’
ডা. ভার্মার মতে, এক্ষেত্রে মানসিক প্রস্তুতিও একটা অন্যতম জরুরি বিষয়। কারণ কিডনি দান একটি স্বেচ্ছাসেবী কাজ এবং আর্থিক উদ্দেশ্য দ্বারা তা চালিত নয়। তাই কিডনি দানের প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যাওয়ার আগে ডোনার বা দাতার শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য সঠিক থাকা প্রয়োজন।
ডোনারের জন্য লাইফস্টাইল এবং ডায়েট সংক্রান্ত পরামর্শ:
কিডনি দান করার পরে দাতা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন। কিন্তু তার জন্য অস্ত্রোপচার বা সার্জারির পরে জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন আনা আবশ্যক।
১. কিডনি দানকারীদের ব্যালেন্সড ডায়েট মেনে চলতে হবে। অতিরিক্ত প্রোটিন সেবন চলবে না। কারণ অতিরিক্ত প্রোটিন সেবন করলে কিডনির উপর চাপ পড়ে।
২. লবণ সেবনের পরিমাণও কমিয়ে ফেলতে হবে। হাইড্রেটেড রাখতে হবে শরীরকে। দৈনিক আড়াই লিটার জল পান করা উচিত।
৩. নিয়মিত ব্যায়াম করা, সুস্থ ওজন বজায় রাখা এবং ডায়াবেটিস ও হাইপারটেনশন থাকলে তা নিয়ন্ত্রণ করা আবশ্যক।
৪. ধূমপান এবং মদ্যপান এড়িয়ে চলতে হবে।
৫. চিপস, পাঁপড় এবং রিফাইন্ড অয়েলের মতো প্রসেসড এবং প্যাকেজড খাবার খাওয়ার উপর রাশ টানতে হবে। কারণ এই সব খাবারে প্রচুর পরিমাণে প্রিজারভেটিভস এবং লবণ বেশি থাকে।
৬. দীর্ঘমেয়াদি মনিটরিংয়ের জন্য বছরে অন্তত একবার করে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে।
কিডনি দানকারী এবং প্রাপকের ঝুঁকি:
দুই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকই তুলে ধরেছেন যে, কিডনি দানের সঙ্গে যুক্ত থাকা ঝুঁকি নামমাত্র! যেসব প্রাপক ডায়ালিসিসের উপর ছিলেন, তাঁদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি আবার সামান্য আলাদা।
ডা. ভার্মার কথায়, ‘সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকির মধ্যে অন্যতম হল – রিজেকশন। আসলে এক্ষেত্রে প্রাপকের ইমিউন সিস্টেম নতুন কিডনিকে আক্রমণ করে বসে। তা প্রতিরোধ করার জন্য প্রাপককে সারা জীবন ইমিউনোসাপ্রেসিভ ওষুধ সেবন করে যেতে হবে। একটাও ডোজ মিস করা চলবে না। তবে সার্জারি অথবা প্রতিস্থাপনের অনেক পরেও কিন্তু রিজেকশন হতে পারে।’
হার্ট এবং রক্তবাহী নালীর সঙ্গে যুক্ত আরও একটা ঝুঁকি রয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে ডায়ালিসিস চললে তা কার্ডিওভাস্কুলার সিস্টেমকে দুর্বল করে দিতে পারে। যা সার্জিক্যাল এবং পোস্ট-সার্জিক্যাল রিস্ক বাড়িয়ে দিতে পারে। শুধু তা-ই নয়, ইমিউনোসাপ্রেসিং ওষুধের কারণে সংক্রমণও একটি উল্লেখযোগ্য আশঙ্কার বিষয়। এক্ষেত্রে আসলে ফাঙ্গাল এবং ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন খুবই সাধারণ বিষয়।