TRENDING:

নগরকীর্তন: কৌশিকের ‘ভুল’ ও ‘সঠিক’ প্রেমের গল্প !

Last Updated:
impactshort
ইমপ্যাক্ট শর্টসলেটেস্ট খবরের জন্য
advertisement
#কলকাতা: ‘আমার শরীরে ভুল রয়েছে মধু দা...ঠিক করতে হবে’, ‘আমেরিকায় শুনেছি ছেলে-ছেলে বিয়ে হয়...তুমি আমায় নিয়ে যাবে সুভাষ দা...’, ‘বল আমি ব্যাটা ছেলে, হিজড়া সেজে টাকা তুলছি !’
advertisement

ছবির সমালোচনা লেখার জন্য, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘নগরকীর্তন’ থেকে এই তিনটি সংলাপ ধার করলাম ৷ বলতে পারেন, গোটা ছবির এই তিনটি সংলাপ যেন বার বার কানে বিঁধছিল ৷ গোটা ছবিটাই যেন দাঁড়িয়ে এই তিনটি সংলাপের মধ্যে ৷ আর বাদ বাকিটা, ওই শরীরের ভিতরের ‘মন’ আর মনের ভিতরের আরেক শরীরের মধ্যে টানাপোড়েন ৷ যেখানে বাইরের শরীরটা ‘পুরুষের’ আর মনের ভিতরটা জুড়ে থাকা নারীর শরীর ! ‘প্যান্ট শার্ট পরালেই কী পুরুষ হওয়া যায় !’ মধুদাকে বলেছিল পুঁটি ! মধু দা কিন্তু থমকে গিয়েছিল... কিছুটা সময় নিয়ে পুঁটিকে বলেছিল, ‘তোমার মাথা থেকে নকল চুলটা কখনও খুলবে না !’

advertisement

শুরু হয় আসল-নকলের লড়াই ৷ প্রশ্ন ওঠে নকল চুল, শাড়ি, ঠোঁটে লিপস্টিক দিলেই কী আর ‘আসল’ নারী হয়ে ওঠা যায়?

তবে এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টাও করেনি কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের এই ছবি ৷ বরং এই আসল নকলের টানাপোড়েনের মধ্যে পুরুষের খাঁচায় আটকে থাকা এক ‘নারী’ ও একটি ‘পুরুষ’ এর ভালোবাসার গল্পই বলে চলে নগরকীর্তন ! যা ‘শরীর’ থেকে উর্ধ্বে গিয়ে !

advertisement

মধু (ঋত্বিক) ও পুঁটির (ঋদ্ধি) ভালোবাসার গল্প বলে নগরকীর্তন ৷ এই ভালোবাসা নিখাদ ৷ অন্যান্য ভালোবাসার গল্পের মতো এই গল্পে ভিলেন রয়েছে, সমাজ রয়েছে, ঘর ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া রয়েছে, শরীরী মিলন রয়েছে, রাগ-অভিমান সবই রয়েছে ফমুর্লা মেনে ৷ তবে রয়াসনটা এই ছবিতে ভিন্ন, এখানে প্রেম মানে সম-প্রেম, সম-শরীর ! তবে তা পুরোটাই সমাজের চোখে ! মধু আর পুঁটি শুধু ভালোবেসে যাচ্ছে মনের টানে !

advertisement

তবে পুঁটির কাছে ভালোবাসার থেকেও যেন মধুদা আঁকড়ে ধরার খড়খুঁটো ৷ ঠিক যেমন কিশোর বয়সে সুভাষদা ! পুঁটির জীবনের প্রথম ‘পুরুষ’ ! প্রথম ‘ধাক্কা’ ৷ প্রথম ছুট্টে বেরিয়ে আসা ‘নিজ জগতে’র খোঁজে ৷ বৃহন্নলা হয়ে ওঠা ! আর তারপর পুঁটির মনে একটাই অপেক্ষা ...কবে পুরো ‘নারী’ হয়ে উঠবে সে ৷ মনের খাঁচায় আটকে থাকা কবে নারীটি শরীর পাবে...

advertisement

কৌশির গঙ্গোপাধ্যায়ের এই ছবি পুঁটির হাতে ধরে ‘রূপান্তরকামী’ মানুষদের এই অপেক্ষার কথাও যেন ক্রমাগত বলে চলেন ৷ নারী শরীর পাওয়ার অপেক্ষা ৷ আর তাই মধু-র বউদি-র (বিদীপ্তা চক্রবর্তী) পোশাক বদলানোর দৃশ্যে, পুঁটির চোখের পলক পড়ে না ৷ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে পুঁটি ! চোখের চাউনিতে অপেক্ষা ! নিজের শরীরে নারী শরীর পাওয়ার অপেক্ষা ৷

ঠিক নদীর চোরা স্রোতের মতোই ধীরে ধীরে সাবপ্লটে অন্য গল্প লিখতে থাকেন পরিচালক ! আর সেটাই কীর্তনে রাধা-কৃষ্ণ, চৈতন্যের মধ্যে দিয়ে ‘নগরকীর্তন’-এর রূপ নেয় ৷ যে কীর্তন চেতনাতে আঘাত করে বারং বার ! তবে সবটাই প্রেমের গল্পের মধ্যে দিয়ে, ইচ্ছে পূরণের মধ্যে দিয়ে, যা সমাজের চোখে আঙুলের খোঁচার মতো !

কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘নগরকীর্তন’-এর সবথেকে ভালো দিকই হল এই ছবি কোন ট্যাবুকে বদলে ফেলার জন্য দর্শকদের তীব্র জ্ঞান দেয় না ৷ এমনকী কোনও শিক্ষাও দিতে চায় না এই ছবি ৷ তবে উপরের এই সব কটা বিষয়ই পরিচালক সাজিয়ে রাখেন প্রচ্ছন্নে !

‘নগরকীর্তন’ যতটা কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ছবি, ততটাই ঋদ্ধি সেনের ৷ বরং বলা ভালো গল্পের ওপরে গিয়ে অভিনয় করেছেন ঋদ্ধি ৷ পুঁটি চরিত্রে আগাগোড়া ‘শরীর’ দিয়েছেন ৷ যা দেখে হতবাক হতে হয় ৷

ঋত্বিক যে ভালো অভিনেতা, তা নতুন করে বলার কিছু নেই ৷ এমনকী, ঋত্বিকের প্রমাণ করাও কিছু নেই ৷ ঋত্বিক শুধু নিজেকে ভেঙেই চলেছেন বার বার ! এই ছবিতে যে সমস্ত বৃহন্নলা অভিনয় করেছেন, তাঁরা উজাড় করেছেন নিজেদের৷ আর যার কথা না বললেই নয়, তিনি হলেন সঙ্গীত পরিচালক প্রবুদ্ধ বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তাঁর সঙ্গীত যেন পুঁটি ও মধুর হৃদয় স্পদন !

সবশেষে বলতে হয় নগরকীর্তন এমন এক দলিল, যেখানে শরীর ও মনের উর্ধ্বে গিয়ে এক ভালোবাসার গল্প বলে, যা কিনা সমাজের চোখে সমপ্রেম ! যে প্রেম আইনের কাছে ‘অপরাধ’ না হলেও সমাজের তীক্ষ্ন নজর সহ্য করে ৷ নগরকীর্তন এমন এক ছবি যা এই তীক্ষ্ন নজরকে এড়িয়ে শুধু ভালোবাসার গুণগান গেয়ে যায় !

সেরা ভিডিও

আরও দেখুন
লালগোলাতে রাজরাজেশ্বরী রূপে পূজিতা হন মা কালী! দেওয়া হয় ইলিশের ভোগ
আরও দেখুন

বাংলা খবর/ খবর/বিনোদন/
নগরকীর্তন: কৌশিকের ‘ভুল’ ও ‘সঠিক’ প্রেমের গল্প !