আরও পড়ুনঃ গুলজার বলেছিলেন, ‘ আমি এই বয়সেও যদি রাশিদের থেকে একটা স্বর-ও শিখতে পারি, ধন্য হব’: দেবজ্যোতি মিশ্র
তিনি লিখেছিন, ‘তুই চললি কোথায়? ভরা ম্যাহফিলে ঝরা পাতার উশকোখুশকো হাততালির গমকে ঝাড়লন্ঠনটা কাঁপছে। আমরা সবাই বসে আছি রে রাশিদ! একটা আস্ত ঘর কফন হয়ে বসে আছে। একটা সুরের দেশ একটা আস্ত যৌবন একটা রাত একটা অভিসার বসে আছে রাশিদ!’ দেবজ্যোতি মিশ্র রাশিদ খানকে প্রশ্ন করেন, ‘মাইক্রোফোনে শনশন করে সমুদ্রের শব্দ বেজে যাচ্ছে– তোর উত্তরপ্রদেশের শীতকালে যখন রেওয়াজে বসতিস, তখন শীত করত না তোর? সমুদ্রে এত শীত– চারদিকে এত জল আমাদের শিরা উপশিরায় নুন ঢুকে যাচ্ছে!’
advertisement
চলে যাওয়া বন্ধুকে স্মরণ করে তাঁর কথায় ঝরে পরে দুঃখ, ‘দোহাই দোস্ত! মাঝেমাঝে ঢেউগুলো এক একজন রাশিদ খাঁ হয়ে উঠলেও দোষ নেই, কিন্তু রাশিদ তুই সমুদ্ররূপ ধরলে কে আর কাঁধে হাত রাখবে? যেমন আমরা হেঁটে যেতাম– তুই আমার কাঁধে রাখতিস আর সকাল থেকে বয়ে আনা ফুলের গোছারা ঝম করে ঝরে যেত! তোর ওই জোর ছিল। তোর গলার ওই স্পন্দন ছিল! বালি বালি উড়ে যাচ্ছে বালির ভাস্কর্য।’
তাঁর অভিমানকেও লুকোতে পারেন না তিনি, ‘নিজেই বাঁধছিস নিজেই ভাঙছিস নিজেই রাখছিস নিজেই ডুবছিস, কখনও নিজেই ভাস্কর্য হয়ে উঠছিস আর তোর হাতের অনুভবগুলো গলায় গিয়ে ঢুকছে– গলার আদরে কীসব শৃঙ্গে পৌঁছে যাচ্ছে খাজুরাহো– তোর যমুনার জল, তোর সুখ! আদিম একটা– আর পারছি না রে… তোকে আর সহ্য করতে পারছি না– তুই মাইক্রোফোনে, কিংবা মাইক্রোফোন ছাড়াই এই ম্যাহফিলে ফিরে আয়। খুব শীত করছে। বড় বিপন্ন বোধ হচ্ছে।’
নভেম্বর মাস থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী। প্রস্টেট ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন তিনি। তাঁর চিকিৎসা চলছিল। শোনা যাচ্ছে, তার মধ্যে আবার সেরিব্রাল স্ট্রোক হয় তাঁর। তাতেই পরিস্থিতি অত্যন্ত সঙ্কটজনক হয়ে ওঠে। বাইপাসের এক বেসরকারি হাসপাতালে শিল্পীর চিকিৎসা চলছিল। মঙ্গলবার সকাল থেকে অবস্থার অবনতি হয়। সংক্রমণ বেড়ে যায়। সেখানেই মঙ্গলবার বিকেল ৩টে ৪৫ মিনিটে প্রয়াত হন তিনি।