ঋতু আসে. দিন বদলায়. কোকড়ানো চুল. ঢিলে ঢালা টিশার্ট-জিন্স. চোখে বড় কাঁচের চশলমা. চশমার ওপারে জল-জল করছে দু’টো চোখ. চোখ দু’টো এক. তবে চোখের ওপর-নিচে লাগলো মোটা কাজলের রেখা. লাইন করা পুরু দু’টো ঠোঁট মাখলো রং. পাল্টালো ঋতু. হলেন অন্য ঋতুপর্ণ ঘোষ.
বিজ্ঞাপনের ক্যাচ লাইনের মুন্সিয়ানা নিয়ে বেশ চলছিল. এমন সময় আলাপ হয় অপর্ণা সেনের সঙ্গে. ভাই, সহকারী, সখা মিলিয়ে-মিশিয়ে কিছু একটা হয়ে ওঠেন ঋতুদা. নিজের প্রথম ছবি হীরের অংটি. তার পরের ছবিগুলোয় নিজেকে ভাঙেন-গড়েন ঋতুপর্ণ ঘোষ.
advertisement
তাঁর সব ছবিই সম্পর্কের কথা বলে. কোনও একটা মন্ত্রের সাহায্যে তিনি নারী মনে প্রবেশ করতে পারতেন. উনিশে এপ্রিল, দহন, দোসর, উৎসব, তিতলি--ছবি গুলো দেখলে এটাই মনে হয়.
অসম্ভব মাতৃত্বের সঙ্গে ছবি বানাতেন ঋতুপর্ণ. তাঁর আদর যেমন নরম. বকার মধ্যেও একটা আবদার লুকিয়ে থাকতো. সেটে কারও ওপর রাগ করলে তিনি নাকি বলতেন ‘‘যা দোতলা বাস-এর তলায় চাপা পড়ে মর’’.চট করে তুই বলে ফেলে তিনি আপন করে ফেলতেন সকলকে.
চোখের বালি, নৌকাডুবি, লাস্ট লিয়র, আবহমান. প্রায় তাঁর বানানো প্রতিটি ছবি জাতীয় পুরস্কারে সম্মানিত. ঐশ্বর্য রাই, অমিতাভ বচ্চন, অভিষেক বচ্চন, জ্যাকি শ্রফ, বিপাশা বসু, প্রীতি জিন্টা, অর্জুন রামপাল--বলিউডের অনেকের সঙ্গে তিনি কাজ করেছেন. অনেকে আবার কাজ করতেও চেয়েছেন তাঁর সঙ্গে.
আরও একটি প্রেমের গল্প, মেমোরিস ইন মার্চ, চিত্রাঙ্গদা. এই ছবিগুলোর মাধ্যমে নিজেকে মেলে ধরেন ঋতুপর্ণ ঘোষ. তাঁর চিত্রাঙ্গদা কোনও বলিউডি ছক মানা টম বয়-এর কম বয় হয়ে ওঠার গল্প নয়. বরং দুই প্রান্তে বসে থাকা দু’টি মানুষ ঘটনাচক্রে তাঁরা পুরুষ. তাঁদের সমীকরণের গল্প.
সত্যান্বেষী তাঁর শেষ পরিচালিত ছবি. ৪৯ বছর বয়সে তিনি চলে না গেলে হয়তো ঋতু আরও পাল্টাতো, তাঁর ছবিও পাল্টাতো. আলো খ্যাতি যশ থাকলেও ঋতুপর্ণ ঘোষ ছিলেন নিঃসঙ্গ রাজা. নিঃসঙ্গ ছিলেন তাই হয়তো পণ্ডিত হতে পেরেছেন. তবে তাঁর জন্মদিনে এইটুকু বলাই যায় তিনি আর নিঃসঙ্গ নন. সিনেপ্রেমীদের মনে ঋতু আছে, থাকবে. মনের ঋতুর বদল হবে না.