আড়াই ঘণ্টা ধরে হলের ভিতর লভ আজকাল নামক নতুন অত্যাচারের সময় ও হল থেকে বেরিয়ে এসে এই প্রশ্নগুলোই ইমতিয়াজকে করতে ইচ্ছে করছে ৷ কারণ, তিনি এতটাই ভাল চিত্রনাট্যকার, এতটাই ভাল পরিচালক, যে তাঁর হাত থেকে এরকম ‘খারাপ’ ছবি বলা ভালো নিজের গত ছবিরই ‘খারাপ’ রিমেক বের হবে, তা ভাবা যায়নি যতক্ষণ না ছবিটা শুরু হয়েছে এবং শেষ হয়েছে...
advertisement
‘লভ আজকাল’এর ট্রেলার দেখে অবশ্য কিছুটা আন্দাজ পাওয়া গিয়েছিল ৷ তবে মনে হয়েছিল, ট্রেলার যেমনই হোক না কেন, পুরো ছবিটা হয়তো সামলে নেবেন ইমতিয়াজ ৷ সে ভাবনায় আপাতত জল৷ কারণ, এই ছবি যা দাঁড়াল, তা এক উবের ড্রাইভারের সঠিক লোকেশন পাওয়ার মতোই !
ব্যাপারটা একটু খোলসা করা যাক ৷ বলিউডে কনফিউজ প্রেমের গল্প নতুন নয় ৷ এর আগে ইমতিয়াজের হাত দিয়েই পর পর কনফিউজড প্রেমের গল্প বেরিয়েছে ৷ তবে সেগুলোর মধ্য বেশ কয়েকটি মাস্টারপিস ৷ এমনকী, লভ আজকাল পুরনোটিও দেখতে মন্দ লাগে না ৷ বিশেষ করে দীপিকা, সইফের জুটি এবং ঋষি কাপুরের দারুণ পারফরম্যান্সের জন্য তো অবশ্যই ৷
কিন্তু নতুনটাতে এসেই তরী ডুবল ৷ ওই যে বললাম, উবের ড্রাইভারের সঠিক লোকেশন খোঁজার গল্প...এখানে ইমতিয়াজের হিরো বীর ও হিরোইন জো পুরোটাই এরকম৷ ঠিক কী চায়, তা একেবারেই স্পষ্ট নয় ৷ কখনও এগোচ্ছে, তো কখনও পিছিয়ে যাচ্ছে ৷
পুরনো লভ আজকালের মতো নতুনটাতেও ইমতিয়াজ সেই পুরনো সময়ের প্রেম ও নতুন সময়ের প্রেমের মধ্যে তফাৎ, বিভেদ দেখাতে চেয়েছেন ৷ আর সবশেষে বলতে চেয়েছেন লভ ইজ পিওর ৷ একেবারে ১০০ শতাংশ শুদ্ধ ৷ কিন্তু এই বিষয়টা সারা ও কার্তিককে কে বোঝাবে? ছবির প্রোমোশনের জন্য তাঁরা ‘রিয়েল’ লাভার সেজেছিলেন, সিনেমার পর্দায় যদি সেটার ওপর খাটতেন কাজে দিত বরং ৷ আর এর ফলে সিনেমার পর্দায় যা ঘটেছে, তা ‘তং’ করার মতোই !
কেদারনাথ ছবিতে যতটা মুগ্ধ করেছিলেন সারা, এই ছবিতে ততটাই বিরক্তি দিলেন তিনি ! আর কার্তিক? মিষ্টি হাসিতে ফিমেল ফলোয়ার বাড়লেও, বক্স অফিস কিন্তু শুধুই পরিচালক লভ রঞ্জন নয় (যার সব কটা ছবিতে কার্তিক হিট)! ছবিতে কার্তিককে রণবীর কাপুরের সস্তা কপি ছাড়া আর কিছুই লাগেনি ৷ অভিনয় নিয়ে বলতে গেলে নতুন মেয়ে আরুশি, খারাপ নয় ৷ নিজের মতো করে ভালোই করেছেন রণদীপ হুডা ৷ রণদীপ হলেন সারার মনে ‘আসল’ প্রেম জাগানোর সূত্রধর ৷
আসলে, এই ছবির দুর্বল জায়গাটিই হল ছবির চিত্রনাট্য৷ যা ঠিক কোন দিকে এগোচ্ছে তা বোঝা দায় ৷ চরিত্রগুলোকে শেপ দিতে গিয়ে, বার বার একই দৃশ্য ব্যবহার করেছেন ইমতিয়াজ৷ বিশেষ করে গোটা ছবিতে কার্তিক যে পারফেক্ট লাভারের পতাকা উড়িয়েছেন ও অন্যদিকে ঠিক কেন সারা প্রেমের কথা শুনলেই পালাচ্ছেন তা একেবারেই স্পষ্ট নয় ৷ যদিও সারার ক্ষেত্রে কেরিয়ারের দোহাই দিয়েছেন ইমতিয়াজ৷ তবে সত্যিই কি ২০২০-তে এসে কেরিয়ার প্রেমের বাধা হয়ে দাঁড়ায় ! সে উত্তরও নেই ছবিতে ৷
ছবির মিউজিকেও জোর নেই৷ তার ওপর সংলাপের মিসাইল ? ভালবাসি কিংবা ভালবাসি না বোঝাতে গেলে, এত কথা বলতে হয়? অন্তত ইমতিয়াজের ছবিতে!
সবশেষে বলতে হলে, ইমতিয়াজের এই নতুন লভ আজকাল, এমন কোনও ছবি নয়, যা মিস করলে প্রেমের বড়সড় ক্ষতি ! অন্তত ভ্যালেন্টাইনস ডে-তে এই ছবি দেখতে ঢুকলে প্রিয় মানুষ মারমুখী হতে পারে...সেটা একটু দেখে নেবেন...আর যদি সত্যিই এসির ভিতর অন্ধকারে পপকর্ন খেতে চান...তাহলে ঢুঁ মারুন...না হলে আজকাল পরশুর মধ্যে মোবাইলে ছবিটা পেয়েই যাবেন ৷