কেমন আছেন?
শ্রিয়া: (একগাল হেসে) খুব ভাল আছি। কলকাতার মানুষের সঙ্গে কথা বলে এখন আরও একটু ভাল হয়ে গেলাম।
তাই নাকি! তার মানে কলকাতা খুবই পছন্দের শহর…
সে আর বলতে! কলকাতার সঙ্গে অনেক স্মৃতি জড়িয়ে। আমার জেঠিমার বাড়ি ওখানে। এক সময় নানা রিয়্যালিটি শোয়ের অডিশন দিতে কলকাতায় যেতাম। জীবনের প্রচুর ওঠাপড়ার সাক্ষী এই শহর।
advertisement
রিয়্যালিটি শো থেকে সোজা কে-পপ তারকা?
খুব কম বয়সেই কোরিয়ান পপের প্রতি ভালবাসা তৈরি হয়েছিল। তারপর প্রচুর কোরিয়ান শিল্পীদের কাজ দেখা শুরু করলাম। কোভিডের সময় নানা অডিশনের কথা জানতে পারি। প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য ভুবনেশ্বরে আমার জেঠিমার মেয়ের কাছে গিয়ে থাকতাম। এক সপ্তাহ ধরে একটি করে গানের কোরিওগ্রাফি শিখতাম আর শ্যুট করতাম। আমাকে আরও ভাল ভাবে প্রস্তুত করার জন্য আমার দিদি প্রচুর রিসার্চ করত। এভাবে ৩৫টিরও বেশি অডিশন দিতে হয়েছিল। প্রচুর ব্যর্থতাও দেখেছি।
কখনও হতাশ লাগেনি?
(কিছুটা ভেবে) না, আসলে ছোটবেলা থেকেই আমার নাচের প্রতি আগ্রহ ছিল। আমার বাবাও এই বিষয়ে উৎসাহ দিয়েছিলেন। প্রথমে ওড়িশি দিয়ে শুরু করি। তারপর মডার্ন স্টাইল। আমি চেনা গণ্ডিতে নিজেকে আবদ্ধ রাখতে চাইনি। এমন কিছু করতে চেয়েছিলাম, যা কেউ খুব সহজে করে ফেলতে পারবে না। আর সেই সময়ে আমার দিদি এবং পরিবারকে পাশে না পেলে আমি কখনওই এত দূর আসতে পারতাম না। ওরা ছিল বলেই হাল ছাড়িনি।
এখন নামের সঙ্গে ‘ভারতের প্রথম কে-পপ আইডল’ তকমা দেখে কী মনে হয়?
আমি কখনও ভাবতেই পারিনি এতটা এগোতে পারব। দেড় বছর ধরে টানা চেষ্টা করে গিয়েছি। একটা সময় মনে হয়েছিল আর পারব না। হাল ছেড়ে দেব। শেষ অডিশনটায় নিজের মনপ্রাণ ঢেলে দিয়েছিলাম। এখনও মনে আছে, ঘড়ির কাঁটায় ঠিক সকাল সাতটা। ঘোষণা করা হল যে, আমি ব্যান্ডের সদস্য হিসাবে মনোনীত। সেই মুহূর্তে মনে হয়েছিল স্বপ্ন দেখছি। কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না! আজ এই জনপ্রিয়তা আর ভালবাসা পেয়ে আমি কৃতজ্ঞ।
‘ব্ল্যাকসোয়ান’ বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়ার অন্যতম জনপ্রিয় ব্যান্ড। সদস্য হিসাবে অভিজ্ঞতা কেমন?
আমার ব্যান্ড এবং এই দেশ (দক্ষিণ কোরিয়া) আমাকে নতুন জীবন দিয়েছে। মানুষ হিসাবে অনেক পরিণত করে তুলেছে। এখন আমি অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী। তবে এটুকু বলতে পারি যে, এখনও নিখুঁত হয়ে উঠতে পারিনি। মনে হয় না সেটা কেউই পারে। এখনও নিজেকে পুরোপুরি বোঝার চেষ্টায় আছি।
বলা হয়, গার্ল ব্যান্ডের সদস্যের মধ্যে নাকি একটা চাপা প্রতিযোগিতা থেকেই যায়…
একদমই না! আমার ব্যান্ডের সদস্যরা আমার পরিবারের মতো। আমরা একসঙ্গে বেড়ে উঠছি। রোজ কত কিছু শিখছি! প্রতিযোগিতার প্রশ্নই ওঠে না।
কে-পপ তারকাদের জীবনে যেমন জাঁকজমক, তেমন নিশ্চয়ই খাটনিও প্রচুর?
(প্রশ্ন শেষ করার আগেই) পরিশ্রম কখনও থামে না বললেই চলে। আমাদের প্রচুর অনুশীলন করতে হয়। আজ ১০০% খাটলে কাল ২০০% খাটতে হবে। মানুষ আমাদের এত ভালবাসা দিচ্ছেন, তাঁদেরও সেটা ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করি। পাশাপাশি ভাল কাজ করার তাড়না আমাদের থামতে দেয় না। তাই গান হোক বা নাচ, সব দিকেই সমান গুরুত্ব দিতে হয়। মাঝেমধ্যে মনের মতো প্রস্তুতি না নিতে পারলে হতাশাও গ্রাস করে। কিন্তু আবার ঘুরে দাঁড়াতে হয়। রোজ ছ’থেকে সাত ঘণ্টা অনুশীলন করি। কখনও কখনও ১৩-১৪ ঘণ্টাও কোনও ব্যাপার নয়। কিন্তু তারই সঙ্গে পর্যাপ্ত বিশ্রামও নিতে হয়। সেই দিকটাও মাথায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
বাকিদের তুলনায় নিজের ব্যান্ডকে কেন এগিয়ে রাখবেন?
কারণ আমরা একটা স্বপ্ন নিয়ে এগোচ্ছি। নিজেদের ব্যক্তিত্বকে কোনও রকম আড়াল না করেই মনের মতো গান তৈরি করব। সব ব্যান্ডেরই কিছু বিশেষত্ব আছে। কিন্তু আমরা আমাদের গানের মাধ্যমে প্রত্যেক শ্রোতাদের নিজস্বতাকে উদযাপনের চেষ্টা করি।
আপনি নিজস্বতা উদযাপনের কথা বললেন কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়ায় নাকি ভারতীয়দের রেসিজম অর্থাৎ বর্ণবৈষম্যের শিকার হতে হয়?
আমাকে এখনও পর্যন্ত এরকম কোনও অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়নি। এখানে অনেক বয়স্ক মানুষের সঙ্গেও মিশে দেখেছি। তাঁরা খুবই স্নেহশীল। আমার চোখে দক্ষিণ কোরিয়রা খুবই উদার মানসিকতার। নিজেদের ভাষা এবং সংস্কৃতির প্রতিও তাঁরা খুবই শ্রদ্ধাশীল। এখানে আমার প্রচুর বন্ধু আছে যারা ঠিক করে ইংরেজিও বলতে পারে না। কিন্তু ওরা আমায় ভালবাসায় ভরিয়ে দিয়েছে।
কিন্তু কাজ হোক বা বাহ্যিক গড়ন, আপনার নিজের দেশেই তো এখনও কোরিয়ার তারকারা নানা কটূক্তির শিকার!
জানি… আমি মনে করি যাঁদের কোনও কাজ নেই বা যাঁরা নিজেদের নিয়ে একেবারেই সন্তুষ্ট নন, তাঁরাই ট্রোলিং বা কটূক্তি করে আনন্দ পান। মুষ্টিমেয় কয়েকজন মানুষকে দিয়ে গোটা একটা দেশকে বিচার করতে আমি একেবারেই রাজি নই।
এত ট্রোলিং-নিন্দার মাঝেও এ দেশে বিটিএস-এর জনপ্রিয়তা কিন্তু চোখে পড়ার মতো…
আসলে বিটিএস প্রশংসা পাওয়ার মতোই একটা ব্যান্ড। আমার কৈশোর কেটেছে ওঁদের গান শুনেই। আমার কে-পপ আইডল হওয়ার নেপথ্যে ওই ব্যান্ডটির অবদান কখনওই অস্বীকার করতে পারব না। এখনও আমি ওদের অনুরাগী। বিটিএস-এর কারণে বহু মানুষ নতুন করে আত্মবিশ্বাস খুঁজে পেয়েছেন। আমিও তাঁদের মধ্যে একজন। ওই সাতজন শিল্পী আমার অন্যতম অনুপ্রেরণা। (গলায় উচ্ছ্বাস স্পষ্ট)
ওঁদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে?
না, এখনও পর্যন্ত সেই সুযোগ আসেনি। সবে তো ওঁদের মিলিটারি সার্ভিস শেষ হল। আশা করি, খুব তাড়াতাড়ি দেখা হবে।
সম্প্রতি কোরিয়ার একাধিক তরুণ তারকার মৃত্যুর খবর শোনা যাচ্ছে। এজেন্সিগুলির অতিরিক্ত কড়াকড়িতেই নাকি এমন করুণ পরিণতি। সত্যিই কি তাই?
দেখুন, প্রত্যেকটি কোম্পানির নিজস্ব কিছু নিয়মাবলী আছে। সেগুলির উপর ভিত্তি করেই কন্ট্র্যাক্ট তৈরি হয়। সব কোম্পানির পরিকল্পনা বা লক্ষ্য যে এক, তেমনটাও নয়। তাই আমার পক্ষে এই বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করা খুবই কঠিন।
দক্ষিণ কোরিয়ায় থেকেও কি ভারতীয় গান-সিনেমা নিয়ে চর্চার সময় হয়?
অবশ্যই! আমি বলিউডের খুব বড় ভক্ত। ‘দঙ্গল’, ‘শেরশাহ’ আমার খুবই প্রিয়। ভারতীয় সেনাবাহিনী নিয়ে তৈরি ছবি পেলে আমার আর কিছু চাই না! পারলে একদিনে বসেই সব ক’টা দেখে ফেলি। প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, দীপিকা পাড়ুকোন, মাধুরী দীক্ষিতের খুব বড় অনুরাগী আমি। সিদ্ধার্থ মালহোত্রকেও খুব ভাল লাগে।
এ তো গেল বলিউডের কথা! কলকাতা নিয়ে কী বলবেন?
কলকাতা নিয়ে নতুন করে আর কী বলব! আমার জীবনের প্রচুর ওঠাপড়ার স্বাক্ষী ওই শহর। কত ঘুরে বেরিয়েছি ওখানকার অলিগলিতে। এখনও কলকাতায় গেলে আমার মিষ্টি দই চাই-ই চাই।
রসগোল্লা নিয়ে আপনার আর আমার রাজ্যের মধ্যে কিন্তু দীর্ঘ লড়াই ছিল…
(সজোরে হেসে) সেটা ভুললে চলে নাকি! রসগোল্লা আমার ভীষণ প্রিয়। আর পাতে যদি মাছ পড়ে, তা হলে তো কোনও কথাই নেই। পরের বার কলকাতায় গেলে কী খাব, এখনই ভাবতে শুরু করেছি…