TRENDING:

ঈর্ষা, সন্দেহ, অবিশ্বাস, ঘৃণা, ওথেলো... কেমন ছিল প্রাক-'অথৈ' জার্নি? অকপট পরিচালক অর্ণ মুখোপাধ্যায়

Last Updated:

Arna Mukhopadhyay Exclusive Interview: একটা গ্রাম। ভিনসুরা। টলটলে দিঘি, ঝকঝকে সবুজ ঘেরা গ্রাম নয়। এই গ্রামে বপন হয় ঘৃণার বীজ। যেখান মনুষ্যত্ব হারিয়ে যায়। যেখানে ঈর্ষার ঘা দগদগে। যেখানে প্রতিহিংসার আড়ালে চাপা পড়ে যায় আদর্শ।  যে গ্রামে গান হয়, 'মন্দ হয়ে যা রে বাবু, মন্দ হয়ে যা...' ওথেলো, ডেসডিমনা-ইয়াগো কীভাবে ফিরে আসে অথৈ-দিয়া-অনগ্র হয়ে। আর মাথার ভিতর স্বপ্ন নয়, প্রেম নয় কোন এক বোধ কাজ করে। ভিনসুরা হয়ে ওঠে এক শ্মশানভূমি কিংবা আবহমান সমাজ।

impactshort
ইমপ্যাক্ট শর্টসলেটেস্ট খবরের জন্য
advertisement
একটা গ্রাম। ভিনসুরা। টলটলে দিঘি, ঝকঝকে সবুজ ঘেরা গ্রাম নয়। এই গ্রামে বপন হয় ঘৃণার বীজ। যেখান মনুষ্যত্ব হারিয়ে যায়। যেখানে ঈর্ষার ঘা দগদগে। যেখানে প্রতিহিংসার আড়ালে চাপা পড়ে যায় আদর্শ।  যে গ্রামে গান হয়, ‘মন্দ হয়ে যা রে বাবু, মন্দ হয়ে যা…’ ওথেলো, ডেসডিমনা-ইয়াগো কীভাবে ফিরে আসে অথৈ-দিয়া-অনগ্র হয়ে। আর মাথার ভিতর স্বপ্ন নয়, প্রেম নয় কোন এক বোধ কাজ করে। ভিনসুরা হয়ে ওঠে এক শ্মশানভূমি কিংবা আবহমান সমাজ। ঈর্ষা, সন্দেহ, অবিশ্বাস, ঘৃণা, ওথেলো… কেমন ছিল প্রাক-‘অথৈ’ জার্নি? নিউজ ১৮ বাংলার কাছে অকপট পরিচালক অর্ণ মুখোপাধ্যায়
advertisement

অথৈ দেখার পরে মানুষ সমসাময়িক প্রেক্ষাপটের সঙ্গে অথৈকে মিলিয়ে নিয়েছে। সেটা ইউক্রেন হোক বা প্যালেস্টাইন। এই সমাজচেতনা নির্মাণে কতটা বেগ পেতে হয়েছিল?

আসলে আমরা যখন শিল্প নির্মাণ করি, তখন এইসব তো ভাবি না। পরে ভাবি। লেখক বা নির্মাতার সত্ত্বা বাদ দিয়েও একটা সাধারণ সত্ত্বা কাজ করে। ফলে পরবর্তী সময়গুলোতে মনে হয়, এটাতে বিতর্ক হলেও হতে পারে। কিন্তু নির্মাণের সময় তেমনটা মনে হয়নি বা হয় না। নির্মাণের সময়ে রাজনীতি বাদ দেওয়া যায় না। উৎপল দত্ত, শেক্সপিয়ারের সমাজচেতনা পড়ে বড় হয়েছি। তখন দেখেছি শেক্সপিয়রের নাটক, এমনকী সনেটের মধ্যেও রাজনীতি মিশে আছে। ৪৫০ বছর পরেও সেটা সমানভাবেই সমসাময়িক। গাত্রবর্ণের রাজনীতি এই সময়ে আমার দেশে, আমার সময়ে এসে একটা চেহারা নিয়েছে। কিন্তু আছে। আগে থেকে কিছু ভাবিনি যে কিছু বাদ দেব। বরং আমাদের নাটকে কিছু প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক সংলাপ ছিল সেগুলো বাদ দেওয়া হয়েছে। জীবনানন্দের কবিতাও বাদ দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া কিছু বদলাই নি।

advertisement

থিয়েটার থেকে সিনেমা, পুরোটাই একটা জার্নি। কখনও মনে হয়নি, সিনেমা দেখার পরে থিয়েটারের সেই রেশটা যদি কেটে যায়?

সেই রিস্কটা নিয়েই তো চলতে হয়। আমার মনে হয় এটার মধ্যে একটা আমার দখলদারির ব্যাপার আছে। আমি একবারও ভাবিনি নাটকে তো বিপুল জনপ্রিয় হয়েছে। ছবি বানালে সেই জনপ্রিয়তাটা যদি চলে যায়, কী হবে! আমার মনে হয়েছিল কাজ করেছি। চিত্রনাট্য বানিয়েছি। অনির্বাণ (অনির্বাণ ভট্টাচার্য)-এরও মনে হয়েছে এটা ছবি করার মতো, ব্যাস এটুকুই। একটা ভাল ছবি বানাতে চেয়েছি। কোনও অ্যাজেন্ডা ছিল না  বা ভয়ও ছিল না।

advertisement

কখন মনে হল মঞ্চ থেকে এবার বড়পর্দার দিকে এগনো উচিত? এটা কি স্টেজে বিপুল সাফল্যের জন্যই?

না, সেটা কিন্তু ঠিক না। বরং আমার মনে হয়েছিল অথৈ বহুল বিতর্কিত হতে পারে। ছবি নির্মাণের যে ভাষা সেটাও যথেষ্ট পরীক্ষামূলক এবং রিস্কি। ফলে আমি খুবই কৃতজ্ঞ আমার প্রযোজনা সংস্থার কাছে, যে তারা এ বিষয়ে কোনও হস্তক্ষেপ করেনি। আর এটার মধ্য়ে ছবি হওয়ার মতো উপাদান আছে এটা বোঝার পরেই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

advertisement

এই ছবির সংলাপ, যৌনতা, উগ্রতা বক্স অফিসে প্রভাব ফেললেও ফেলতে পারত। অথবা, সাফল্যের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারত। বিনির্মাণের সময় সেদিকটা কীভাবে ব্যালেন্স করেছিলেন?

আসলে ছবিটার পিছনে প্রযোজনা সংস্থার একটা বিপুল অর্থ তো রয়েছে। তাই আমার সেদিকটা মাথায় এসেছে যে এর সংলাপ বা দৃশ্য যদি বাণিজ্য়ের পথে অন্তরায় হয়।  কিন্তু শ্রীকান্তদা (শ্রীকান্ত মোহতা) আমাকে বারবার ভরসা দিয়েছেন।  যৌনতার ইঙ্গিত বা যৌনগন্ধী সংলাপের জন্য অনেকেই বলেছেন ছেলেমেয়ের সঙ্গে আসা যাবে না। তাদের হয়তো মিস করেছি। বক্সঅফিসের পুরো রিপোর্ট তো পাইনি। তবে যতটুকু পেয়েছি ঠিকঠাকই চলছে ছবি।

advertisement

ওথেলো শেষ পর্যন্ত ওথেলোর নাটক নাকি ইয়াগোর নাটক নাকি শেষে তাঁরা একে অন্যের অল্টার ইগো হয়ে উঠবেন, এ প্রশ্ন নাটককার নিজে রেখে গিয়েছেন। অথৈ- এর শেষেও কোথাও গিয়ে অথৈকে ছাপিয়ে গিয়েছে অনগ্র। এক্ষেত্রে পরিচালক অর্ণ, অভিনেতা অর্ণকে কী বলবেন?

আমি এটুকু বলতে পারি যে এরকম একটা নিষ্ঠুর শক্তির কাছে একটা নীতিবাদী মানুষ তো অবদমিত হবেই। ২০২৪-এ দাঁড়িয়ে তাকে তো আরও দমন করা হবে। ২০৩০-এ যদি পুনর্নির্মাণ করি, সেখানে হয়তো খুঁজেই পাওয়া যাবে না অথৈকে। কিন্তু নামটা অথৈই থেকে যাবে। নাটকের থেকে গোগো এখানে আরও নৃশংস। আরও গা ঘিনঘিনে এবং অনির্বাণ সেটা ফুটিয়েও তুলেছে অসাধারণভাবে। এক্ষেত্রে ক্যামেরা যদি সবথেকে পাওয়ারফুল মাধ্যম হয়, তাহলে তারপরের মাধ্যমটাই কিন্তু গোগো। এই দুটোই ছবি নির্মাণে আমার শক্তি।

‘মানুষ মানুষকে ভালবাসে না অথৈ। মানুষ মানুষকে ঘৃণা করে অথবা ট্রোল করে।’ ব্যক্তিগত বা পেশাগত জীবনে কখনও ঘৃণা বা ট্রোলের শিকার হতে হয়েছে?

নিশ্চয়ই হয়েছে। সমাজ মাধ্যমে একটা গ্রুপ তৈরিই হয়েছিল ট্রোলিংয়ের জন্য। আমার শো থাকত পরের দিন ট্রোলিং হত। আমার অভ্য়াসও হয়ে গিয়েছিল। আমরা যারা শিল্পকর্ম করি এটার সঙ্গেই বাঁচতে হয়।  অথৈ যখন গোড়ার দিকে মঞ্চস্থ হয়েছে তখন কিন্তু বহুল সমালোচিত হয়েছে। এমন নয় যে প্রথম দিন থেকেই অথৈকে নিয়ে হৈ হৈ হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীকালে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ অথৈকে উদযাপন করেছে। সমালোচনাগুলোর স্বর খানিকটা স্তিমিত হয়েছে। তৃতীয় শো থেকে হাইজফুলও হয়েছে। যে কোনও শিল্পই প্রশ্ন তোলে, বিতর্ক তৈরি করে।

ওপেনিং ক্রেডিটে কলাকুশলীদের নামের পাশ থেকে পদবী বাদ দেওয়া হয়েছে। আশা করা যায়, তা অত্যন্ত সচেতনভাবে। এটা কি প্রতিবাদ? নাকি আক্রমণ?

এটা আমাদের স্ট্যান্ড। কাকে আক্রমণ করব? কোথায় প্রতিবাদ করব? আমি সত্যি বিশ্বাস করি না যে শিল্প বিরাট কিছু একটা প্রতিবাদের সাক্ষ্য বহন করে। আমি তো আক্রমণে বিশ্বাসই করি না। (হেসে) আপনি হয়তো প্রতিবাদ হিসাবে দেখছেন, কিন্তু আমি বলছি এটা আমাদের অবস্থান। এটাকে একটা স্টেটমেন্ট বলতে পারেন।

অথৈ এবং অনগ্র দুজনেই মায়ের মৃত্যুর দৃশ্য স্বপ্ন দেখে জেগে ওঠে। অথৈয়ের পাশে তাঁর সঙ্গিনী আছেন। অনগ্রর পাশে নেই। এই দৃশ্যকল্প কি খলনায়কের প্রতি নির্মাতার সহানুভূতি?

আমি নির্মাতা হিসাবে যেটা বিশ্বাস করি, দিনের শেষে সবাই কিন্তু রক্ত মাংসের মানুষ। যেমন গোগোকে নির্মাণ করে আমি নিজেই চমকে গেছিলাম, আমার মধ্যে এরকম একটা গোগো আছে! এই গোগোটা শেক্সপিয়ার থেকে অণুপ্রাণিত হলেও সে এত ভয়ঙ্কর হল কী করে! কিন্তু দিনের শেষে সেও তো তার মাকে মিস করে। ফলে কেউ এভাবে দেখতেও পারে যে, নির্মাতার সহানুভূতি।

পরিচালক অর্ণর প্রথম ছবি, যার সৃজনশীল পরিচালক অনির্বাণ। এক্ষেত্রে দুজন দুজনের কাছে কতটা ভরসার জায়গা হয়ে উঠতে পারল?

পুরোটাই। এটার প্রোডাকশনগত দিক, যেগুলো সম্পর্কে আমার ন্যূনতম জ্ঞান নেই, সেদিকে অনির্বাণের অসামান্য ভূমিকা। রেইকি থেকে নিজেকে জুড়ে নিয়েছে। তারপর অভিনয় তো আছেই। এমনকী মিমি (মিমি দত্ত) আমাদের নাটকটায় অভিনয় করেননি। বাকিরা ধরা যাক আট বছর ধরে চরিত্রের আত্মাকে বহন করছেন। ফলে খুব স্বাভাবিকভাবেই তাদের সঙ্গে নিজেকে সঙ্গত করা মিমির পক্ষে কঠিন ছিল। সেই মূল চরিত্রগুলোর সঙ্গে তাঁকে মিলিয়ে দেওয়া, সহজ করে তোলা, সবটা অনির্বাণই করেছে। মোট কথা অভিনেতা হ্যান্ডেলিংয়েও ওর বিরাট অবদান আছে। অনির্বাণকে ছাড়া এ ছবি হত না। ও যেমন ক্যামেরার সামনে পুরোটা জুড়ে আছে, ক্যামেরার পিছনেও পুরোটা জুড়ে আছে। সৌমিক হালদার, সুব্রত বারিক, সঞ্চিতা, অরিত্র, জয়, সার্থক এরা  সবাই আমার ছবির ক্রিয়েটিভ ক্ষেত্রে নিজেকে জড়িয়ে নিয়েছে।

যে কোনও স্রষ্টার নিজের কোনও এক বিশেষ চরিত্রের প্রতি আলাদা পক্ষপাত থাকে। এই ছবিতে চরিত্র নির্মাণের সময় আপনার সেই পক্ষপাতিত্ব কার দিকে ১ শতাংশ হলেও বেশি ছিল?

সেটা যে এড়ানো যায়, এটা বললে হয়তো ভুল হবে। তবে এটা লেখার পরে মনে হয়।

অথৈ আবার মঞ্চে ফিরছে কবে?

সেরা ভিডিও

আরও দেখুন
৪২০ বছরের প্রথা! একাদশীতে ১২ ঘণ্টার যাত্রার পর জঙ্গিপুরে পেটকাটি দুর্গা প্রতিমা নিরঞ্জন
আরও দেখুন

না। আপাতত মঞ্চস্থ হচ্ছে না। পরে হলে নিশ্চয়ই জানা যাবে।

বাংলা খবর/ খবর/বিনোদন/
ঈর্ষা, সন্দেহ, অবিশ্বাস, ঘৃণা, ওথেলো... কেমন ছিল প্রাক-'অথৈ' জার্নি? অকপট পরিচালক অর্ণ মুখোপাধ্যায়
Open in App
হোম
খবর
ফটো
লোকাল