ধ্রুবর আশ্চর্য জীবন মূলত একটি ক্রাইম ড্রামা এবং সায়েন্স ফিকশন ধারার চলচ্চিত্র। গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র ধ্রুব নিজের প্রেমিকা রিমির পরিবারকে রক্ষা করতে গিয়ে এক জটিল মুহূর্তের সম্মুখীন হয়। ধ্রুব বুঝতে পারে যে, রিমিদের জন্য টাকা জোগাড় করতে গেলে তাঁকে একটা অপরাধ করতে হবে। কিন্তু রিমি চায় না যে, ধ্রুব কোনও খারাপ কাজ করুক। ধ্রুবকে যে কোনও একটা রাস্তা বেছে নিতে হবে।
advertisement
পরিচালক অভিজিৎ চৌধুরী
সমাজের চোখে কোনটা অপরাধ আর কোনটা নয়, নৈতিকতার এই টানাপোড়েনে ধ্রুবর জীবন কখনও ডুবে যায়, তো কখনও বা ভেসে ওঠে। আসলে চারটে অধ্যায়ের মাধ্যমে এই ছবিটি ধ্রুবর জীবনের চারটি সম্ভাবনার গল্প বলে। আর প্রতিটি সম্ভাবনা নিয়ে গড়ে ওঠে চারটি ভিন্ন জগৎ, যেখানে ধ্রুবর জীবন ভিন্ন ভিন্ন রূপ নেয়। আর ধ্রুবর জীবনের এই চারটে রূপ কীভাবে একে অন্যের সঙ্গে যুক্ত? জীবনের এই চারটে রূপ কি আদতে সমান্তরাল বিশ্ব? এরই উত্তর মিলবে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি।
এই ছবিটি পরিচালনা করেছেন অভিজিৎ চৌধুরী। আর যৌথ প্রযোজনার দায়িত্বে রয়েছে ফোর্থ ফ্লোর এন্টারটেনমেন্ট ও কনসেপ্ট কিউব।
‘ধ্রুবর আশ্চর্য জীবন’ ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে দেখা যাবে ঋষভ বসু, বাদশা মৈত্র, কোরক সামন্ত, সুদীপ মুখোপাধ্যায়, দেবেশ চট্টোপাধ্যায়, ঋত্বিকা পাল, যুধাজিৎ সরকার, আনন্দরূপা চক্রবর্তী, দীপক হালদার, শান্তনু নাথ, অরুণাভ খাসনবিশ, সেজুতি মুখোপাধ্যায় এবং প্রেরণা দাসের মতো অভিনেতা-অভিনেত্রীদের। এই ছবির সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন প্রলয় সরকার। কণ্ঠশিল্পী হিসেবে রয়েছেন তিমির বিশ্বাস এবং প্রলয় সরকার। সিনেম্যাটোগ্রাফির দায়িত্ব সামলেছেন অর্ণব লাহা। ভিএফএক্স করেছেন শুভায়ন রায়। ধ্রুবর আশ্চর্য জীবন ছবি নিয়ে কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন দর্শক, সমালোচক, জুরিরা। আর এহেন স্বাধীন ছবিতে মাল্টিভার্স এবং তাতে উন্নত ও বুদ্ধিদীপ্ত ভিএফএক্স-এর কাজ বাংলা ছবিতে সম্ভবত প্রথম।
ছবির পরিচালক অভিজিৎ চৌধুরী জানিয়েছেন যে, “ক্ষমতাবান আর ক্ষমতাশূন্যদের মাঝে দাঁড়িয়ে আমাদের মধ্যবিত্ত জীবন প্রায়শই একটা প্রশ্নের সামনে এসে দাঁড়ায় – আদর্শ আঁকড়ে থাকা না কি টিকে থাকা – কোন পথে যাওয়া উচিত? “ধ্রুবর আশ্চর্য জীবন” ছবিতে ধ্রুবর জীবনের চারটি সম্ভবনার কথা চারটি অধ্যায়ে বলা হয়েছে। চারটে অধ্যায়ে চারজন কিংবদন্তি বাঙালি শিল্পীকে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। তাঁরা হলেন- যামিনী রায়, গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিকাশ ভট্টাচার্য , বিনোদ বিহারী মুখোপাধ্যায়।”
অভিনেতা ঋষভ বসু বলেন যে, “অভিজিৎদার সঙ্গে এটা আমার দ্বিতীয় প্রজেক্ট। প্রথমটা ছিল ‘টুরু লাভ’। তাই বলা যায় যে, এটা আমাদের একসঙ্গে দ্বিতীয় কাজ। অভিজিৎদার সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা সব সময়ই খুবই ভাল। কারণ অভিজিৎদার সঙ্গে আমার একটা অদ্ভুত রকমের বোঝাপড়া রয়েছে। অভিজিৎদা সিনেমার মাধ্যমে যেটা বোঝাতে চান, অভিনেতা হিসেবে আমি সেটাই সব সময় অনুসরণ করে চরিত্রের মনস্তত্ত্বটা তুলে ধরতে চেষ্টা করি।”
আবার অভিনেত্রী ঋত্বিকা পালের কথায়, “এটি অভিজিৎদার সঙ্গে আমার প্রথম ছবি ছিল। প্রথম সাক্ষাৎ থেকেই তাঁর যে বিষয়টি আমায় সবথেকে বেশি আকৃষ্ট করেছিল, সেটা হল তাঁর উদারতা। তিনি সবচেয়ে দয়ালু ও বুঝদার ব্যক্তিদের মধ্যে একজন, যাঁর সঙ্গে আমি কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। মানুষ প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে ছবিটি দেখবে এই আশা রাখছি।”
এদিকে অভিনেত্রী আনন্দরূপা চক্রবর্তীর বক্তব্য, “জীবনে প্রথম বড় পর্দায় আত্মপ্রকাশ, সেটাও অভিজিৎ চৌধুরীর মতো একজন দক্ষ পরিচালকের হাত ধরে, অবশ্যই একটা উল্লেখযোগ্য ঘটনা হয়ে থাকবে আমার জীবনে। অভিজিৎদা আমার চরিত্র নিয়ে নিজে এতটাই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন যে, সেটা আমাকে ‘ফিরোজা’ হয়ে উঠতে অনেকটা সাহায্য করেছে।”
অভিনেতা কোরক সামন্তর কথায়, “এভাবে যে একটা ফিল্ম কন্সেপচুয়ালাইজ করা যেতে পারে, সেটা আমার ধারণা ছিল না। তাই প্রথমে যখন অভিজিৎদা একদিন হুট করে ডেকে ছবির গল্প আর আমার চরিত্রটি বুঝিয়ে দেন, তখন যেন মগজ তালগোল পাকিয়ে গিয়েছিল। বাড়ি ফিরে চিত্রনাট্যটা পড়ে বুঝতে পারি যে, একটা সাংঘাতিক গল্প তৈরি করেছেন। আর সেটাকে ফুটিয়ে তুলতে উনি আমাদের মতো নতুন অভিনেতাদের উপরেই ভরসা রেখেছেন।”
অভিনেতা যুধাজিৎ সরকারের বক্তব্য, “এই ছবিটি শ্যুট করা আমার জন্য একটি দারুণ শিক্ষণীয় অভিজ্ঞতা ছিল। আমি সৌভাগ্যবান যে, দেবেশ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে স্ক্রিন স্পেস ভাগ করে নিতে পেরেছি। তিনি এমন একজন ব্যক্তি, বহু বছর ধরে যাঁর অভিনয়শৈলী আমি অনুসরণ করে এসেছি। আগেও অভিজিৎদার সঙ্গে কাজ করেছি। আর তাঁর ছবিতে একটি চরিত্র ফুটিয়ে তোলার সময় যে স্বস্তি পাই, তা সত্যিই একজন অভিনেতার জন্য আনন্দের বিষয়। ঋষভ এবং কোরকের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতাটাও দারুণ মজার। আর তা পরিপূর্ণতার অনুভূতি এনে দিয়েছিল।”