রাজস্থানের প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলে ইরফান খান। ছবি বানানো কিংবা অভিনয় নিয়ে কোনও ধারনাই ছিল না তাঁর। হুট করেই হয় সিনেমার প্রতি আগ্রহ। সেই আগ্রহ থেকেই ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামা। তারপর মুম্বই এসে বহু বছর স্ট্রাগল। কেরিয়ারের গোড়ার দিকে মীরা নায়ারের ছবি সালাম বম্বেতে একটা ছোট্ট চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পান ইরফান। কিন্তু ফাইনাল কাটে বাদ পড়ে তাঁর অংশ। তারপর হিন্দি ছবিতে কাজ করছিলেন ঠিকই। কোথাও যেন ইংরেজি ছবিতে কাজ না করতে পারার আক্ষেপ রয়ে গিয়েছিল তাঁর।
advertisement
এমন সময় আসে ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান ছবি ‘দ্য ওয়ারিয়র’-এ কাজ করার সুযোগ। বিদেশি পরিচালক আসিফ কাপাড়িয়ার ছবি দ্য ওয়ারিয়র। কোনও বড় বলিউডের অভিনেতাকে পারিশ্রমিক দেওয়ার মতো ক্ষমতা ছিল না আসিফের। সে কারণেই শিকে ছেড়ে ইরফানের। সুযোগটাকে কাজে লাগান তিনি। এরপর দ্য ওয়ারিয়র দিয়েই শুরু হয় ইরফানের হলিউড কেরিয়ার।
২০০৭ সালে আবার মিরা নায়ারের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পান ইরফান। ছবির নাম নেমসেক। ছবিতে অনবদ্য ইরফান। নেমসেক দেখে শর্মিলা ঠাকুর ইরফান কে একটি টেক্সট মেসেজ করেন। ইরফানের মত সন্তানকে জন্ম দেওয়ার জন্য তাঁর অভিভাবকদের ধন্যবাদ জানান শর্মিলা।
২০০৯ সালে ‘নিউ ইয়র্ক আই লাভ ইউ’ ছবিতে কাজ করেন ইরফান। কিছু বছর পরে মাইকেল উইন্টারবটমের ‘দ্য মাইটি হার্ট’ ছবিতে অভিনয় করার প্রস্তাব পান তিনি। পাকিস্তানি ক্যাপ্টেনের চরিত্রে ইরফান দারুণ অভিনয় করেন। দার্জিলিং লিমিটেড ছবিতে ইরফান এর জন্য একটি ছোট চরিত্র লেখেন ওয়েস অ্যান্ডারসন।
২০০৮ এ ড্যানি বয়েলের স্লামডগ মিলিয়নিয়ার ছবিতে কাজ করেন ইরফান। এই ছবিতে পুলিশ ইন্সপেক্টরের চরিত্রে অনবদ্য ইরফান। দেব প্যাটেল, ফ্রিডা পিন্টো, অনিল কাপুর, ইরফান খানের মেলবন্ধন এই ছবিতে অন্য ডাইমেনশন যোগ করে।
অ্যাং লি-র ছবি ‘লাইফ অফ পাই’-এ নজর কাড়েন ইরফান। ‘দ্য আমেজিং স্পাইডারম্যান’-এ বিজ্ঞানির চরিত্রে ইরফান বিশ্বাসযোগ্য। জুরাসিক ওয়ার্ল্ড ছবিতে সাইমন মাসরানি হিসেবেও ইরফান টু গুড। এই প্রসঙ্গে খুব মজার একটি গল্প আছে। জুরাসিক ওয়ার্ল্ড যখন মুক্তি পায় সেই সময়ে বলিউডে খুব প্রচলিত ১০০ কোটি, ২০০ কোটির ক্লাব। একদিন বেশ কিছু অভিনেতা একসঙ্গে একটি প্যানেলে বসেছিলেন। সকলে নিজেদের ছবির ব্যবসা নিয়ে কথা বলছিলেন। এমন সময় ইরফান কৌতুক করে বলেন আমার ছবি জুরাসিক ওয়ার্ল্ড ২ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা করেছে। ব্যবসার হিসেব দিয়ে ছবি কিংবা অভিনেতার মান বোঝা যায় না, এমনটাই মনে করতেন ইরফান।
২০১৮ সালে পাজেল ছবিতে কাজ করেছিলেন ইরফান। এটাই তাঁর শেষ হলিউডের ছবি। এরপরে বিদেশে গিয়েছেন তিনি তবে চিকিৎসা করতে। অভিনয় নয়। ওয়ার্ল্ড সিনেমায় খুব কম ভারতীয় নিজের ছাপ ফেলতে পেরেছেন, তাঁদের মধ্যে একজন ইরফান। বলিউডের পাশাপাশি হলিউডেও ঘনিয়ে এসেছে শোকের ছায়া।
Arunima Dey
