প্রশ্ন- ছবিতে নাম ভূমিকায় আপনি নেই। তবুও প্রচুর প্রশংসা পেয়েছে আপনার চরিত্র। আপনি বেশ বেছে কাজ করেন। এই ছবির মধ্যে কী উপাদান ছিল, যে করতে রাজি হলেন?
যে কোনও কাজ করার ক্ষেত্রে আমি তিনটে জিনিস মাথায় রাখি৷ চিত্রনাট্য, আমার চরিত্র ও পরিচালক। ‘বুলবুল’-এর ক্ষেত্রে কয়েকটা সব ক’টাই ছিল। নারী নির্যাতন, পুরুষের পার পেয়ে যাওয়া, এই নিয়ে গল্প প্রচুর হয়েছে। কিন্তু অত্যাচারিত হওয়া সত্ত্বেও রুখে দাঁড়ানো, নারীর জয় তাও একটা রূপকথার মাধ্যমে। এই গোটা বুননটাই অসাধারণ লেগেছিল।
advertisement
প্রশ্ন- চিত্রনাট্য টেনেছিল তাহলে?
দেখুন ‘বুলবুল’-কে পিরিয়ড ড্রামাও বলা চলে। প্রেমের গল্পও রয়েছে। তবে সেই সময়ে নারীর অবস্থান যা ছিল, তার চেয়ে হয়তো পাল্টেছে। তবে অত্যাচারের ধরন বদলেছে। শেষ হয়তো হয়ে যায়নি। গল্পটা আজও প্রসঙ্গিক। অনভিতা (‘বুলবুল’-এর পরিচালক)সুন্দর ভাবে ভেবেছে। বিষয়টা দারুণ।
প্রশ্ন- রূপকথা-ভূত, এসবে বিশ্বাস করেন?
‘ঠাকুরমার ঝুলি’, যে আমার কী পছন্দের, বলে বোঝাতে পারবো না। ছোটবেলা ঠাকুমার পাশে শুয়ে এসব রূপকথার গল্প শুনতাম। রাজা, রানি, ভূত-প্রেত, পেতনির গল্প, গিলতাম রীতিমতো। ভয়ও পেতাম। জানেন এখনও খোলা চোখে ভূতের ছবি দেখতে পারি না। চোখে হাত চাপা দিয়ে, আঙুলের ফাঁক দিয়ে দেখি। তবুও ভয় পেতে ভাল লাগে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্পও পড়ে শোনাতেন ঠাকুমা।
প্রশ্ন- রবীন্দ্রনাথ তো আপনার খুব প্রিয়। ছবিতে আপনার চরিত্রের নাম বিনোদিনী। একটা আলাদা আকর্ষণ তো থাকবেই।
বিনোদিনী নামটা শুনেই চোখের সামনে অনেক কিছু ভেসে ওঠে। অনভিতা আমাকে যখন বলল, আমার চরিত্রের নাম বিনোদিনী, কিছু একটা নাড়া দিয়েছিল মনে। বিনোদিনী আমার অন্যতম রবি ঠাকুরের প্রিয় চরিত্র । কিন্তু ‘বুলবুল’-এর চরিত্রটা নিয়ে প্রথম দিকে আমার মনে সংশয় ছিল।
প্রশ্ন- সেটা কেমন?
‘বুলবুল’-এর বিনোদিনী কেমন যেন হৃদয়হীন। কঠিন, কিছুটা ক্ষতিকারকও। কিন্তু অনভিতার সঙ্গে কথা বলার পর সংশয় কেটে গেল। বিনোদিনীর মনটা আসলে শিশুর মতো। ছোটবেলা থেকে ওর মনে বিষ ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিনোদিনী আসলে পরিস্থিতির স্বীকার, এটা বুঝতে পেরে আমার ওর জন্য করুণাই হল। আর কী জানেন পাওলি মানেই শক্তিশালী নারী। পর্দায় আমার ভাবমূর্তিটাই এমন, ‘কালি ২’-তেও তাই। আমি ব্যক্তিগত জীবনেও অনেকটা এরকম। এই প্রথম আমি অত্যাচারের স্বীকার একজন নারীর চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পেলাম। এটা ভিন্ন স্বাদের।
প্রশ্ন- 'কালি ২’ বলতে মনে হল। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, আপনার সহ অভিনেতা, আমাদের সাক্ষাতকারে একটা কথা বলেছিলেন। আপনার সঙ্গে প্রথম শট দিতে গিয়েই নাকি বুঝেছিলেন, আপনি দারুণ অভিনেত্রী।
ও তাই। আমাকে কিন্তু বলেনি। (হেসে) এই তো সমস্যা, সরাসরি কেউ কপ্লিমেন্ট দেয় না। ওকে ম্যাসেজ করে জিজ্ঞেস করব।
প্রশ্ন- এই যে আপনাকে সকলে ভাল বলে। এটা কোথাও বাড়তি চাপ তৈরি করে? মনে হয়, বিফল হলে অনেককে নিরাশ করবেন?
এই ব্যাপারটা আমি ইতিবাচক ভাবেই নেওয়ার চেষ্টা করি। প্রযোজক-পরিচালকেরা আমাকে ভরসা করেন, এটাও তো কম পাওয়া নয়। আমি ওয়েব প্ল্যাটফর্মকেও ধন্যবাদ জানাব। ওয়েব আসার আগে এতো অন্য ধরনের গল্প নিয়ে কাজ হতো না। এতো রকমের চরিত্র করার সুযোগও পেতাম না। তবে সবচেয়ে বেশি কৃতজ্ঞ দর্শকের কাছ। আমাকে তাঁরা গ্রহণ করেছেন।
প্রশ্ন- পরমব্রতর সঙ্গে সেই ‘কাল বেলা’ থেকে কাজ করছেন, আবার কাজ করে কেমন লাগলো?
এত বছর ধরে পরমকে চিনি। এতো দিন একসঙ্গে কাজ করেছি। কিন্তু হিন্দি ফিল্ম সেট-এ বেশ অন্যরকম লাগলো। সহকর্মীরদের সঙ্গে নিজেরাও তো গ্রো করি, সেটা দেখে ভাল লাগে। ৮-৯ ছবি হয়ে গেল একসঙ্গে। সকলের সঙ্গে কাজ করেই দারুণ লাগলো। তবে রাহুল, (রাহুল বসু) ওঁ, এক কথায় অসাধারণ।
প্রশ্ন- সেটা কেমন?
এই প্রথম রাহুলের সঙ্গে কাজ করলাম। ওঁর ছবি আমার ভীষণ ভাল লাগে। রাহুলের কাজের ধরনটাই আলাদা। ছবিটি বেশ কয়েকদিন মুক্তি পেয়ে গিয়েছে, তাই বলছি। একটা ধর্ষণের দৃশ্যের পর ওঁ ছুটে খানিকটা যায়। তারপর নিজের ঘরে ঢোকে। রাহুল দৌড়ে ফ্রেম ঢুকতেই পারতো। কিন্তু ওঁ সেটা করলো না। রাহুল অনেকটা দৌঁড়ে গেল। কুড়িটা সিঁড়ি নীচে নেমে গেল। কুড়িটা সিঁড়ি দৌঁড়ে উঠলো। আবার দৌঁড়ে ফ্রেমে ঢুকলো। যাতে ওঁ যে হাঁপাচ্ছে, সেটা সাবলিল হয়। এগুলো সত্যি শেখার মতো।
প্রশ্ন- 'কালি’, ‘কালি টু’, ‘বুলবুল’ ধীরে ধীরে আপনি ওয়েবের দিকে ঝুঁকছেন। এটা কী খুব পরিকল্পিত?
দেখুন আমি ভবিষ্যৎ দেখতে পাই না। আমার জানা ছিল না লকডাউন হবে। মানুষ এত বেশি ওয়েব দেখবে। আমি নিজে খুব সিরিজ দেখি। মনে মনে একটা আদল তৈরি করেছিলাম, যে ওয়েবে কাজ করলে কেমন কাজ করতে চাইব। সেরকম চরিত্র যখন পেলাম, রাজি হয়ে গেলাম। ছবিতে যে ধরনের কাজ করিনি, সে সব গল্প পেলে কেন করব না? আর কী জানেন, এক ধরনের কাজে খুব বোর হয়ে যাই। আমার রসদ প্রয়োজন। তবেই তো দর্শককে কিছু দিতে পারব। তাই না?