রবিবার দুপুর ১২.৫৯-এ প্রয়াত ঐন্দ্রিলা। রেখে গেলেন প্রেমিক সব্যসাচী চৌধুরী, মা, বাবা এবং দিদিকে।
একবার 'জোশ টকস'-এ এসে ঐন্দ্রিলা তাঁর লড়াইয়ের শুরুর কথা জানিয়েছিলেন।
১৯৯৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি। উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেন ঐন্দ্রিলা শর্মা। জন্ম নেন এক লড়াকু, এক যোদ্ধা। এমনই এক জন্মদিনে ঐন্দ্রিলা জানতে পারেন, তাঁর বোন ম্যারোতে ক্যানসার দানা বেঁধেছে। তখন একাদশ শ্রেণির ছাত্রী ঐন্দ্রিলা। ছোট্ট মেয়েটা হয়তো বেশি কিছু বুঝতে পারছিল না, কিন্তু চোখ দিয়ে অনর্গল জল পড়তে থাকে। তার পর থেকে তিনি একটা কথা বুঝতে পারেন, বয়স নয়, মানুষের জীবনে যত আঘাত আসে, তাতেই সে বড় হতে থাকে।
advertisement
চিকিৎসা শুরু হয়। প্রথম তিন দিনে তাঁকে যত ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়, সেটা গোনার ক্ষমতা ছিল না ঐন্দ্রিলার। কেবল প্রথম ৬০টি ইঞ্জেকশন গুনতে পেরেছিলেন তিনি। চিকিৎসা শেষ হওয়ার পর বাড়ি ফিরে আসেন তিনি। তার পর সমাজ, আত্মীয়সজনের কাছে দিনের পর দিন আঘাত পেয়েছেন ঐন্দ্রিলা। আর সে সবই তাঁকে আরও শক্ত করে তুলেছে।
আরও পড়ুন: ঐন্দ্রিলা চলে যাওয়ার আগেই নিজের সব লেখা মুছে দিয়েছিলেন সব্যসাচী! কেন?
দিল্লিতে ডাক্তার তাঁর বাবাকে বলেছিলেন, ঐন্দ্রিলাকে ছ'মাসের বেশি বাঁচাতে পারবেন না। কিন্তু তার পরেও দেড় বছর চিকিৎসা চলে। ২০১৬ সালে অনেক কেমোর পর তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন। অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্নের দিকে পা বাড়াচ্ছিলেন। কিন্তু... ৬ বছর পর ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে জীবনের সেই বিভীষিকাময় সময়গুলো ফিরে আসে।
একদিন ডান কাঁধে হঠাৎ প্রচণ্ড ব্যথা হতে থাকে তাঁর। সবাই ভেবেছিলেন, টান লেগেছে পেশিতে। সেদিন শ্যুটিংয়েও গিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ না করে ফিরে আসতে হয় বাড়িতে। ঐন্দ্রিলার দিদিও এক চিকিৎসক। তিনি চেকআপ করেন বাড়িতেই। তারপরেই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। জানা যায়, ডান দিকের ফুসফুসে ১৯ সেন্টিমিটারের টিউমার হয়েছে। আবার সেই নরকের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে ভেবে প্রথমে চিকিৎসা করাতে চাননি ঐন্দ্রিলা।
আরও পড়ুন: ডাক্তার বলেছিল, 'আর মাত্র ৬ মাস', আশঙ্কা উড়িয়ে সেই ঐন্দ্রিলাই হয়ে উঠেছিলেন ফিনিক্স পাখি
মা-বাবা-দিদি ছাড়াও প্রেমিক সব্যসাচী চৌধুরী তাঁর পাশে ছিলেন। সবার জন্যেই চিকিৎসা করাতে রাজি হন। লড়াইটা আবার লড়তে হবে। চারটি কেমোর পর অপারেশন। তার আগে চিকিৎসক অভিনেত্রীকে ডেকে বলেন, ''এটা তোমার জীবন। তুমি সিদ্ধান্ত নেবে অপারেশনটা করাবে কিনা। কারণ এটার একটা সম্ভাবনা রয়েছে যে আমরা ওটিতে গেলাম, তুমি আর ফিরে এলে না।'' বাঁচার তাগিদে এক মিনিটও সময় নষ্ট না করে রাজি হয়ে যান তিনি।
স্ট্রেচারে করে যখন তাঁকে ওটিতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন পরিবার এবং সব্যসাচী। ঐন্দ্রিলার তখন মনে হচ্ছিল, হয়তো আর ফিরে আসবেন না তিনি। বারবার প্রশ্ন জাগছিল মনে, ''এটাই কি আমি ওদের শেষ বারের মতো দেখছি?''
জ্ঞান ফেরার পর চোখ খুলে দেখলেন, চারদিকে সাদা আলো। তিনি বুঝতে পারছিলেন না তিনি কোথায় আছেন। চারপাশ থেকে ধীরে ধীরে আওয়াজ পেতে শুরু করেন। তখন তিনি বোঝেন, তিনি বেঁচে আছেন। তার পর আইসিইউতে রাখা হয়েছিল তাঁকে। সেই কষ্টটা পেরোনোর পর তাঁর মনে হয়, ''এর পর আর যা আসবে, আমি লড়ে নেব।'' তিনি সবটা পেরোতে পেরেছেন বাবা, মা, দিদি এবং সব্যসাচীর জন্য।
ব্রেন স্ট্রোক, কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট, সবের সঙ্গে লড়াই করলেন ঐন্দ্রিলা। গত ২ নভেম্বর থেকে। কিন্তু আর পারলেন না। রবিবার যুদ্ধে ইতি টানলেন ২৪ বছরের অভিনেত্রী।