'আমি ভালবাসি যারে, সে কী কভু আমা হতে দূরে যেতে পারে...' সব্যসাচীর মতো আমরাও ভেবেছিলাম এমনই৷ সব্যসাচী ঐন্দ্রিলার মধ্যে থাকা আরও একটা প্রাণশক্তির নাম৷ প্রেমিক শব্দটা বোধ হয় বড়ই ছোট তাঁর জন্য বলার৷ বরং ঐন্দ্রিলার সহযোদ্ধাই ছিলেন তিনি৷ তাঁর বিশ্বাস ছিল নিজের হাতে ফিরিয়ে নিয়ে যাবেন ঐন্দ্রিলাকে৷ লড়াই চালাতে চালাতে প্রার্থনা করেছিলেন অলৌকিকেরও৷ "আমার ঐন্দ্রিলা আছে, প্রচন্ড ভাবে আছে... ঠিক ফিরে আসবে৷ ওর একা থাকতে বিরক্ত লাগে৷" তাঁর এক একটা লেখায় ভরসা পাচ্ছিল কত লক্ষ কোটি মানুষ৷ কিন্তু সেই বিশ্বাসও ফুরলো৷ ফুরলো কি? হয়তো, ফুরায় শুধু চোখে...
advertisement
"সময় বড় আজব প্রাণী। সময় গাছকে নেড়া করে, আবার সময়ই গাছে পাতা গজায়।
তাই তো গাছেরা সবুজ,
আর হাসিরা চিরসবুজ.."
পাশে ঐন্দ্রিলার কান পর্যন্ত প্রশস্ত একটা হাসি৷ আলতো কাঁধ ছুয়ে দাঁড়িয়ে আছেন সব্যসাচী৷ শুরুর দিন থেকে এইভাবেই ধরা ছিল ঐন্দ্রিলার কাঁধ৷ তিনি তো জানতেন ঐন্দ্রিলা ফিনিক্স, সে ফিরে আসতে জানেই৷ তাই ঐন্দ্র্রিলার অ্যাওয়ার্ড পাওয়ার ছবি ভাগ করে লিখেছিলেন, "এর আগে আমি বহুবার ভেবেছি যে পুরস্কারে ডানা থাকে কেন, আজ বুঝলাম। ফিনিক্সের গল্পটা মনে পড়ে গেলো। এইটুকুই তো দেখতে চেয়েছিলাম। খুব খুশি..."
সব্যসাচী জানতেন, তাঁর 'ন্যাজমোটা বেড়ালটার অফুরন্ত এনার্জি৷' প্রেমিকার জন্য খোলা চিঠিতে লিখেছিলেন আয়ু৷ "উপায় না থাকলে, হিমশীতল রাতে নিজের স্বপ্নগুলোকে ঝলসে তাপ পোয়াতে হয়। ভোরের আলো ফুটলে, ফের নতুন করে স্বপ্ন বুনতে হয়। নিজের স্বপ্নপোড়া গন্ধ যতদিন তোমার নাকে লেগে থাকবে, জানবে তুমি অপ্রতিরোধ্য। এভাবেই ফিরে আসা যায়।"
কিন্তু এবারের ছবিটা আগের দুবারের মতো হল না আর৷ মিথ্যে হল প্রার্থনা, বিজ্ঞান৷ মিথ্যে হল না কেবল মৃত্যু৷ জীবনের সবচেয়ে অপ্রিয়, অথচ সবচেয়ে কঠিন সত্যির সামনে দাঁড়াতে হল আজ৷ আর ফিরলেন না ঐন্দ্রিলা৷ অন্ধকারেই হারিয়ে গেল একটা জীবন্ত আলো৷ চলে তো যেতেই হয়, সবাইকে একদিন৷ কিন্তু মাত্র ২৪টা বসন্ত দেখা একটা প্রাণবন্ত মেয়ের চলে যাওয়াকে অমোঘ সত্যির মতো করে মেনে নেওয়ার ক্ষমতা কারই বা আছে৷ ঐন্দ্রিলা নিজেও চেয়েছিলেন বাঁচতে৷ প্রাণভরে পৃথিবী দেখতে৷ উদযাপন করেছিলেন নিজের ফিরে আসা৷ তবু শেষই হল শেষমেষ৷ তবু যেতে দিতে হল৷ মৃত্যু মিথ্যে হলেই পারত, কিন্তু হল না!