২০২২ সালের শুরুতেই অভিনয় জগতে শোকের ছায়া নেমে এসেছিল। ১২ দিনের মধ্যে পর পর তিন জন তরুণী অভিনেত্রীর মৃত্যু হয় এই শহরে। প্রথমে পল্লবী দে, তার পর বিদিশা দে মজুমদার, শেষে মঞ্জুষা নিয়োগী। পুলিশের অনুমান, এই তিন মডেল এবং অভিনেত্রী আত্মহত্যা করেছেন।
সেই সময়ে নানা তর্ক বিতর্কে বারবার উঠে এসেছিল একটিই বিষয়বস্তু— এই প্রজন্মের অভিনেত্রী এবং অভিনেতাদের মানসিক অবসাদ। অনেকেই কাঠগড়ায় তুলেছিলেন নতুন প্রজন্মের তরুণ-তরুণীদের।
advertisement
কিন্তু এই ঐন্দ্রিলা, যিনি তার আগে দু'বার ক্যানসার জয় করে মৃত্যুমুখ থেকে ফিরে এসেছিলেন, তিনি এই মানসিকতার বিরুদ্ধে গর্জন করেছিলেন। জানিয়েছিলেন, এই প্রজন্মকে কাঠগড়ায় তোলার প্রবণতায় তিনি বীতশ্রদ্ধ। প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছিলেন ঐন্দ্রিলা।
তিনি বলেছিলেন, "আমি তো বলতেই পারতাম, আমি শারীরিক যন্ত্রণাকে জয় করেছি, আর এই মেয়েরা কেবল মনের যন্ত্রণায় নিজেকে শেষ করে ফেলল? কিন্তু আমি সেটা কখনও বলতে পারি না। তার কারণ শরীরের মতো মনও খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। তার দিকে নজর দিতে হবে। যত্ন করতে হবে।"
আরও পড়ুন: বলেছিলাম তুই যেদিন আমার বয়সি হবি, বড় নায়িকা হবি, ঐন্দ্রিলার স্মৃতিচারণে অঙ্কুশ
ঐন্দ্রিলা জানিয়েছিলেন, সেই সময়ে যে প্রবল নেতিবাচকতা তৈরি হয়েছিল, তা থেকে দূরে সরার জন্য কলকাতা ছেড়ে বহরমপুরে মা-বাবার কাছে চলে গিয়েছেন তিনি। সেখান থেকেই নিউজ18 বাংলার সঙ্গে কথা বলেছিলেন ক্যানসারজয়ী নায়িকা।
ঐন্দ্রিলা বলেছিলেন, ‘‘বোঝাই যাচ্ছে, কতটা মানসিক যন্ত্রণায় ভুগে এই পদক্ষেপ করেছেন পল্লবী, বিদিশা এবং মঞ্জুষা। সেখানে তাঁদের মনের খবর না নিয়ে আমি কী ভাবে বলতে পারি যে, ‘মানসিক অবসাদ বড়লোকদের রোগ’ বা ‘এই প্রজন্মের এটাই দোষ’ ইত্যাদি? রোজ নানা জায়গায় মানুষের সাক্ষাৎকার দেখতে দেখতে অবাক হয়ে যাচ্ছি৷ সেই মানুষগুলিকে খুবই সম্মান করতাম। কিন্তু এখন শুধুই বিস্ময়!’’
ঐন্দ্রিলা আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ভারতে মানুষ আজও মানসিক রোগকে নিয়ে অবহেলা করেন। ঐন্দ্রিলা যদিও কখনও পল্লবী, বিদিশা এবং মঞ্জুষার পদক্ষেপকে সমর্থন করতেন না। কিন্তু তার মানে এটা নয় যে সেই মডেল এবং অভিনেত্রীদের চরিত্রের দিকে আঙুল তোলাকে সমর্থন করতেন। মানসিক রোগকে গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি মহিলাদের সম্মান দেওয়ার দাবিও জানিয়েছিলেন ঐন্দ্রিলা।
আরও পড়ুন: হাসপাতালে প্রথম আলাপ, অগাধ সম্মান জেগেছিল, সেই ঐন্দ্রিলা নেই? গলা ধরে এল গৌরবের
তিনি বলেছিলেন, ‘‘সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর সময়ে তাঁকে নিয়ে অনেক জলঘোলা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু কেউ তাঁর চরিত্রহনন করেমনি। সেটা ভাল। কিন্তু সেই জায়গায় এই তিন জন মহিলার সম্পর্কে যা যা শুনতে হচ্ছে, তাতে আমি বিরক্ত। তাঁরা সিগারেট খেতেন, নাকি মদ, তাঁরা লিভ ইন করতেন নাকি বাবা মায়ের সঙ্গে থাকতেন— এই সমস্ত বিষয় উঠে আসছে কেন? আর যাঁরা বলছেন, এই প্রজন্মের মানুষ বেশি আত্মহত্যা করে ইত্যাদি, তাঁদের বলতে চাই, আপনাদের সময়েও সফল অসফল শিল্পীরা আত্মহত্যা করেছেন। তখন অত খবর পাওয়া যেত না বলে জানা যায়নি। মানসিক রোগ প্রত্যেক যুগেই বর্তমান। তাই অবহেলা করবেন না।’’