২০২৪ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করা সোহম বর্তমানে ডাক্তারি পরীক্ষার পড়াশোনায় ব্যস্ত, শান্তিপুরেরই বাসিন্দা। মা গৃহবধূ এবং বাবা একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। ছোটবেলা থেকেই তার হাতের কাজে ছিল আলাদা একটা টান। যখন সে ক্লাস ফাইভে পড়ে, তখন প্রথম দুর্গামূর্তি বানায়—পিচবোর্ড ব্যবহার করে। তারপর ধাপে ধাপে নিজের শিল্পকর্মে নানা পরীক্ষানিরীক্ষা করতে থাকে। পুরনো খবরের কাগজ থেকে শুরু করে রঙিন কাগজ—সবকিছু দিয়েই তৈরি করেছে সে একের পর এক প্রতিমা।
advertisement
আমেরিকায় দারিদ্র্যের দিন শুরু! ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য আরও এক ধাক্কা! নতুন রিপোর্টে ব্যাপক চাঞ্চল্য!
সোহম নিজেই দুর্গাপুজো করে, আর সেই কারণেই প্রতিবছর নিজের পুজোর জন্য নিজেই মূর্তি বানায়। এবছরের মূর্তিটি বানানো শুরু করেছে জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে, আর পুজোর আগে পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে পুরো কাজ শেষ করতে। কারণ, পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে, হাতে পাওয়া সময়েই সে এই কাজটি করে।
এই বছর যে মূর্তিটি বানাচ্ছে, তার উচ্চতা প্রায় ২৪ ইঞ্চি। কাঠামো থেকে শুরু করে প্রতিটি অংশ শুধুই কাগজ দিয়ে তৈরি। এমনকি কাঠ বা বাঁশের পরিবর্তে কাঠামোও বানিয়েছে কাগজ দিয়ে। এটি একদিকে যেমন পরিবেশবান্ধব, অন্যদিকে তেমনি সহজে ব্যবস্থাপনাযোগ্য। ভবিষ্যতে সে চায় ফেলে দেওয়া বা পরিত্যক্ত জিনিস দিয়েও মূর্তি তৈরি করতে, যাতে করে পরিবেশ সচেতনতার বার্তাও পৌঁছে দেওয়া যায় সমাজে।
তবে শুধু নিজের জন্যই নয়, সম্প্রতি এক দিদার আবদার রাখতে একটি প্রতিমা বানিয়ে দেবে বলে কথা দিয়েছে সে। এভাবেই ধীরে ধীরে তার কাজ ছড়িয়ে পড়ছে আশপাশে। ছোটবেলায় দুর্গা ছাড়াও কালীমূর্তি বানাতো সে, যদিও সেগুলোর আকার ছিল ছোট। কিন্তু বর্তমানে সে মনোনিবেশ করেছে দুর্গামূর্তি তৈরিতেই।
শিল্পচর্চার পাশাপাশি পড়াশোনায়ও মনোযোগী এই যুবক। বাবার অনুরোধে এবছর সে নিট পরীক্ষাও দিয়েছে, যদিও কাউন্সিলিংয়ের জটিলতার কারণে এবছর ফল মেলেনি। আগামী বছর ফের পরীক্ষায় বসবে সে। এছাড়াও খেলাধুলাতেও আগ্রহ আছে তার, তবে মাঠে সময় দেওয়া হয়ে ওঠে না প্রতিদিন, কারণ মূর্তি বানানোর কাজ এবং পড়াশোনা দুটোই চালিয়ে যেতে হয় তাকে।
সোহম দে-র এই কাগজের দুর্গা শুধুই এক শিল্পসৃষ্টি নয়, বরং পরিবেশবান্ধব ভাবনার এক মূর্ত প্রতীক। তার মত তরুণদের হাত ধরেই আগামী প্রজন্ম পাবে নতুন পথের দিশা, যেখানে শিল্প, সংস্কৃতি এবং পরিবেশ—তিনটি বিষয়ই হাত ধরাধরি করে এগিয়ে যাবে। শুধু প্রতিমা নির্মাণই নয় সমস্ত ধরনের সাজসজ্জা সে করে থাকে রঙিন এবং চকচকে নানাবিধ কাগজ দিয়েই। তবে সোহমের এই সৃজনশীলতা সামাজিক মাধ্যমে এখন চর্চার বিষয়। বিশেষ করে ঘর সাজানোর সামগ্রী হিসেবে এত হালকা এবং সহজে প্রতিস্থাপনযোগ্য মূর্তি সবার কাছেই আগ্রহের বিষয়।