উচ্চ শিক্ষা দফতরের এক আধিকারিক জানান, ” রিক্যুইজিশনের ক্ষেত্রে ভুল থাকছে। সময়মতো জমাও পড়ছে না রিক্যুইজিশন। কাজেই বেতন পেতে সময় লাগছে। আমরা টাকা আটকানোর কেউ নই। আটকাতেও চাই না। কিন্তু সরকারি প্রক্রিয়া ঠিকমতো করতে হবে।’’
এই নিয়ে পরপর দু’মাস যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে দেরিতে বেতন ঢুকল। গত বছর ডিসেম্বরের বেতন শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীরা পেয়েছিলেন চলতি বছর জানুয়ারিতে। এ’বছর জানুয়ারির বেতন এখনও ব্যাঙ্ক-অ্যাকাউন্টে ঢোকেনি। সূত্রের খবর, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গতবছর ডিসেম্বরের মাইনে ও পেনশন দিয়েছিল প্রায় তলানিতে পৌঁছে যাওয়া ফিক্সড ডিপোজিট ভেঙে। অভিযোগ, জানুয়ারি মাসের বেতন ও পেনশনের টাকা এখনও পাঠায়নি রাজ্য সরকার।
advertisement
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায় বলেন, ” রাজ্য সরকার আগেই জানিয়ে দিয়েছিল তারা কোনও চার্জ অ্যালাউন্স/ অফিসিয়েটিং অ্যালাউন্স দেবে না। পার্ট টাইম অ্যালাউন্স আগেই বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। যেখানে শিক্ষক, আধিকারিক এবং কর্মচারীদের বহু গুরুত্বপূর্ণ পদ শূন্য (যেগুলিতে রাজ্য সরকার নিয়োগ আটকে রেখেছে ) এবং তাঁদের অনেক কাজ-ই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ করেছেন অফিসার বা কর্মচারীদের অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে, সেখানে চার্জ / অফিসিয়েটিং অ্যালাউন্স রাজ্য সরকারের না দেওয়ার কী যুক্তি, সেটা জানা নেই।”
শিক্ষক সমিতির আরও অভিযোগ, বিভিন্ন কাজে যুক্ত এজেন্সি (যেমন সিকিউরিটি, ক্লিনিং, মেইনটেনেন্স, হোস্টেল স্টাফ)-দের টাকাও রাজ্য সরকার দিচ্ছে না। ফলে এই খাতেই প্রত্যেক বছর প্রায় ১০ কোটি টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ হচ্ছে। আগেই ২০২৩- ২০২৪ অর্থবর্ষে ‘নন স্যালারি’ খাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘাটতি হয়েছে ৩8.৯৭ কোটি টাকা। এই ঘাটতি হয়েছে বিভাগগুলির ল্যাব টিচিং ও অন্যান্য খাতে ৪০ শতাংশ টাকা কেটে নেওয়ার পর। এই ঘাটতি গত কয়েক বছর ধরেই চলছে। পার্থপ্রতিম জানিয়েছেন, এই তথ্য ফিনান্স কমিটি এবং কর্মসমিতিতে পেশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে অভিযোগ, ন্যাক বা এনবিএ-র জন্যও কোনও টাকা পায়নি বিশ্ববিদ্যালয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চরম আর্থিক সংকটের কারণে, বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প থেকে কেনা বহু কোটি টাকার যন্ত্রপাতি উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হতে বসেছে। পার্থপ্রতিম বলেন, ” আমরা জানি শিক্ষকরা যে প্রজেক্ট আনান বা কন্সালটেন্সি করেন, তার একটা অংশ বিশ্ববিদ্যালয় পায়। কিন্তু সেই টাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা বা অন্য কোনও একাডেমিক কাজে না লাগিয়ে তা মাইনে দেওয়া এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের দৈনন্দিন খরচ চালাতেই ব্যয় হয়ে যাচ্ছে । অন্য দিকে গবেষণার জন্য বিভিন্ন প্রজেক্ট থেকে কেনা বেশ কিছু দামি যন্ত্রপাতি খারাপ হয়ে রয়েছে টাকার অভাবে। একই অবস্থা টিচিং ল্যাবরেটরিগুলিরও ।’’ আদৌ কী ভাবে এই সমস্যার সমাধান হবে, তা নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছে শিক্ষা মহলের একাংশের মধ্যে। তবে উচ্চশিক্ষা দফতরের দাবি, সমস্যার সমাধান শীঘ্রই হবে।
সোমরাজ বন্দ্যোপাধ্যায়