রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের অভিমত, কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও জোট না বাঁধার কমিটি সিদ্ধান্তকে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ করে উল্টোপথে হাঁটতে চলেছে রাজ্য সিপিআইএম ৷
মঙ্গলবার দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ইস্যুতে আলাদা আলাদাভাবে মহামিছিলের ডাক দেয় বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস ৷ আগামী ১১ জুলাই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে ফ্রন্ট ও সহযোগীদের মিছিলে যেখানে ব্রাত্য কংগ্রেস, সেখানে ২৫ জুলাই কংগ্রেসের মিছিলে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল বামেদের ৷ সেই আমন্ত্রণের পরিপ্রেক্ষিতে কংগ্রেসের মিছিলে সিপিআইএম প্রতিনিধির উপস্থিতির ইস্যু নিয়ে এদিন উত্তপ্ত হয়ে ওঠে CPiM কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক ৷ কংগ্রেস মিছিলে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে সূর্যকান্ত মিশ্রকে কিন্তু ওড়িশায় দলের কাজ নিয়ে মিছিলে অংশ নেওয়ার দায়িত্ব এড়ান সূর্যকান্ত ৷
advertisement
বহু তর্কবিতর্কের পর স্থির হয় যে, ২৫ জুন কংগ্রেসের কর্মসূচিতে থাকতে পারে সিপিআইএম ৷ বুধবারের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে অবশেষে মিলল ছাড়পত্র ৷ তবে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বাম পরিষদীয় দলগুলি ৷ তবে দলীয় সূত্রে খবর, মিছিলে সিপিআইএমের তরফ থেকে কারা থাকবে সেই নিয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে ৷
অতএব কেন্দ্রীয় কমিটি না চাইলেও জোট বহাল রাখার পক্ষপাতি রাজ্য সিপিআইএম ৷ এদিকে বিধানসভায় কংগ্রেসের কাছাকাছি সিপিএম। মঙ্গলবার বাম-কং দুই শিবির একসঙ্গে আনল মুলতুবি প্রস্তাব । শীর্ষ নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত অগ্রাহ্য করেই তাতে কার্যত সায় দেন সুজন চক্রবর্তী।
মঙ্গলবার আরও একবার জোটের পক্ষে জোরালো সওয়াল করলেন আব্দুল মান্নান। কারণ কংগ্রেস হাইকম্যান্ড রাজ্য বামেদের সঙ্গে জোট বেঁধে চলার পক্ষপাতী ৷ মঙ্গলবার বিধানসভার ঘটনাক্রমে তারই প্রমাণ। এদিন বাম ও কংগ্রেস পরিষদীয় দল যৌথভাবে মুলতুবি প্রস্তাব আনে। পেট্রোল-ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে তারা আলোচনার প্রস্তাব দিলেও তা খারিজ করে দেন অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়।
সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটি কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের পথ নাকচ করেছে। এ কে গোপালন ভবনের ক্রুসেডে বঙ্গ ব্রিগেড হার মেনেছে কেরল লবির কাছে। তা সত্ত্বেও এ রাজ্যের সিপিএম নেতৃত্ব জোটের রাস্তা ছাড়তে রাজি নয় বলেই মনে হচ্ছে। আবার অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত মেনে কংগ্রেসকে বাদ রেখে আলাদাভাবে কর্মসূচি ডাকে বামফ্রন্ট ও তাঁর সহযোগী দলগুলি ৷
শীর্ষ নেতৃত্ব যাই সিদ্ধান্ত নিক, বামেরা কংগ্রেসের হাত ছাড়তে নিমরাজি। আবদুল মান্নানের বক্তব্যকেই কার্যত সমর্থন জানায় বাম পরিষদীয় দলনেতা ।
কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নিষেধ করলেও কেন বিধানসভায় এখনও কেন সমঝোতার ছবি বাম ও কংগ্রেসের ? এই প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান।
জোট বেঁধেই ভরাডুবি। এবার দুর্বল সংগঠন নিয়ে একলা চললে সিপিএম তৃণমূলের মোকাবিলা করতে পারবে না। এই সার কথা বুঝে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত সত্ত্বেও কংগ্রেসের হাত ছাড়তে চাইছে না এ রাজ্যের সিপিএম নেতৃত্ব। এমনটাই অভিমত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের।
কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে সিপিএমের বঙ্গ ব্রিগেড বেলাইন হওয়ায় শরিকরা ঝাঁপিয়ে পড়েছে বড় শরিকের উপর। মঙ্গলবার আরএসপি-র রাজ্য সম্পাদক ক্ষিতি গোস্বামী কেন্দ্রীয় কমিটির মতকে স্বাগত জানান।
ফরওয়ার্ড ব্লক মুখপত্রে সিপিআইএমের পথকে নব্য দক্ষিণপন্থা বলে কটাক্ষ করা হয়। এবার আরও চাঁছাছোলা ভাষায় সিপিএম রাজ্য নেতৃত্বকে আক্রমণ করলেন ফরওয়ার্ড ব্লক সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত বিশ্বাস। তাঁর মতে, সিপিআইএমের ভুল রণকৌশলেই বিধানসভা ভোটে ভরাডুবি।
মুখপত্রের পর এবার মুখের ভাষাতেও কড়া শরিকরা। সিপিআইএমকে তীব্র আক্রমণ করলেন ফরওয়ার্ড ব্লকের সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত বিশ্বাসের। তাঁর সাফ কথা, ‘হয় কংগ্রেস, নয় বাম।’ বামেদের দ্বৈত নীতিতে রীতিমতো বিরক্ত ফরওয়ার্ড ব্লকের মতো শরিকেরা ৷
ফরওয়ার্ড ব্লকের অভিযোগ, সিপিএমের ভুল কৌশলেই বিধানসভা নির্বাচনে হেরেছে বামেরা। তারপরও কংগ্রেসের সঙ্গে গাঁটছড়া অব্যাহত রাখতে ইচ্ছুক রাজ্য সিপিআইএম ৷ যদিও বঙ্গের জোট নীতি নিয়ে উত্তাল কেন্দ্রীয় কমিটি ৷ জোট থাকবে কি থাকবে না, এই নিয়ে আলোচনা পলিটব্যুরো থেকে গড়ায় কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে ৷
বাম-কংগ্রেস জোটের সিদ্ধান্তে রীতিমতো বুলডোজার চালাল সিপিআইএম কেন্দ্রীয় কমিটি। জোটপন্থীদের আশাকে গুঁড়িয়ে দিয়েই কেন্দ্রীয় কমিটি সোমবার সাফভাবে জানিয়ে দেয় পার্টি কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়াই পশ্চিমবঙ্গে জোট হয়েছে। অবিলম্বে এই ভুল শোধরাতে হবে। তারপরও গত দু’দিনে এই ভুল শোধরানোর কোনও প্রচেষ্টাই লক্ষ্য করা যায়নি বঙ্গ ব্রিগেডের মধ্যে ৷ বরং তাঁরা কংগ্রেসের সঙ্গে একই রাস্তায় চলতে আগ্রহী ৷ বুধবার আমন্ত্রণ স্বীকার করে কংগ্রেসের কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত তারই ইঙ্গিত ৷
এতেই নারাজ ফরওয়ার্ড ব্লকের মতো ছোট শরিক ৷ ফরওয়ার্ড ব্লকের সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত বিশ্বাস এদিন সাফ জানিয়ে দেন, ‘হয় কংগ্রেসের সঙ্গে থাকো, নয় আমাদের সঙ্গে। ৩৪ বছর ক্ষমতায় থাকায় বাম দলগুলির মধ্যে কায়েমি স্বার্থের জন্ম হয়েছে।’ আত্মসমালোচনার সুর শোনা যায় দেবব্রত বিশ্বাসের গলায়।