বিনিয়োগ আসলে কী? ধরা যাক, এমন একটা সম্পদ কেনা হল, যার মূল্য সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধি পাবে। আর সেই সম্পদ থেকে আয় কিংবা মূলধন লাভের আকারে আসা রিটার্ন নিয়ে লেনদেন করার বিষয়টাই হল বিনিয়োগ। বিষয়টা আরও সহজ ভাবে ভেঙে বলা যাক। নিজের কিংবা প্রিয়জনের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার জন্য টাকা-পয়সা বিনিয়োগের অর্থই হল নিজের সময় এবং সম্পদ নিয়োজিত করা। ভারতে আর্থিক ক্ষেত্রে বিনিয়োগের অর্থ হল স্টক কেনা, রিয়েল এস্টেট এবং অন্যান্য বিষয়, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে টাকা অথবা মূলধন লাভের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে পারে।
advertisement
আরও পড়ুন: পেরিয়ে গিয়েছে ITR দাখিলের শেষ দিন; সময়ের মধ্যে জমা না-করে থাকলে জুটবে ‘শাস্তি’
কীভাবে বিনিয়োগ করতে হয়?
এই বিষয়টা সহজ ভাবে উদাহরণ দিয়ে বলা যাক। ধরা যাক, এক জন বিনিয়োগকারী কম দামে কোনও সম্পত্তি কিনলেন। তবে ভবিষ্যতে সেই সম্পত্তি চড়া দামে বিক্রি করে দিলেন তিনি। আর সেখান থেকে পাওয়া বিনিয়োগের রিটার্ন-কে মূলধন লাভ বা ক্যাপিটাল গেন (capital gain) হিসেবে ধরা হয়। অর্থ বিনিয়োগ করার একটি কৌশল হল মূলধন লাভ অর্জন করে কিংবা মুনাফার জন্য সম্পত্তি বিক্রি করার মাধ্যমে রিটার্ন তৈরি করা। কেনা এবং বেচার সময়ের মধ্যে বিনিয়োগের মূল্য বাড়ানোর জন্য অ্যাপ্রিসিয়েশন (Appreciation) শব্দটি ব্যবহার করা হয়।
ধরা যাক, এক বিনিয়োগকারীর কাছে একটি কর্পোরেট বন্ড রয়েছে, যা ৫ শতাংশ বার্ষিক সুদ দিচ্ছে। আবার বন্ড প্রদানকারী সংস্থা নতুন বন্ড ইস্যু করল, যা ৪ শতাংশ সুদ দিচ্ছে। তাতে ওই বিনিয়োগকারীর হাতে থাকা কর্পোরেট বন্ডটির মূল্য বাড়বে এবং সেটি আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে।
আরও পড়ুন: একের বেশি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট রয়েছে ? সুবিধার চেয়ে অসুবিধে হচ্ছে না তো, জেনে নিন
আবার কোনও স্টকের শেয়ারের মূল্য কখন বেড়ে যায়। ধরা যাক, একটি কোম্পানি দুর্দান্ত একটি প্রোডাক্টের উপর কাজ করছে আর সেই পণ্যের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ফলও পাওয়া যাচ্ছে। যার ফলে ওই সংস্থার রাজস্ব তো বেড়ে যায়ই, সেই সঙ্গে মার্কেটে ওই সংস্থার স্টকের মূল্যও বেড়ে যায়।
একটি বাড়ির মূল্য কখন বাড়তে পারে। বাড়ির মূল্য তখনই বাড়বে, যখন ওই বাড়ির মালিক সেই সম্পত্তি বা বাড়ি নতুন করে নির্মাণ করা হয়। শুধু তা-ই নয়, ওই বাড়ির আশপাশের এলাকা যদি আরও উন্নত হয়ে ওঠে, কিংবা আরও নতুন নতুন বাড়ি সেখানে গজিয়ে ওঠে, তা-হলেও বাড়ির দাম অনেকটাই বেড়ে যাবে।
সোনার মতো পণ্যের দামও বেড়ে যায়। কারণ মার্কিন ডলারের মূল্যে পতন দেখা গেলে সোনার চাহিদা অনেকটাই বেড়ে যায়। আর তার জেরে বাড়ে সোনার দামও।
বিনিয়োগ কীভাবে কাজ করে?
বিনিয়োগের তো একটা সোজাসাপটা এবং স্পষ্ট সংজ্ঞা রয়েছে। টাকা-পয়সার পরিমাণ বাড়াতে এবং নিজের ভবিষ্যতের আর্থিক লক্ষ্য পূরণ করতে বিনিয়োগের পরিকল্পনা ছকে রাখতে হয়। আর ঋণ শোধ করা, অবসর পরবর্তী জীবনের জন্য সঞ্চয়, সন্তানের উচ্চশিক্ষার জন্য সঞ্চয় প্রভৃতি বিনিয়োগকারীর আর্থিক লক্ষ্য হতে পারে। শুধু তা-ই নয়, বিনিয়োগের মাধ্যমে এমার্জেন্সি ফান্ড বা জরুরিকালীন পরিস্থিতির জন্য ফান্ড তৈরি করে রাখা যেতে পারে। অর্থাৎ তাই ভবিষ্যতের জন্য এমন কোনও সম্পদ কেনা হল। যার মূল্য একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর বৃদ্ধি পাবে। এটাকেই সহজ ভাষায় বিনিয়োগ বলা হচ্ছে। আবার ধরা যাক, বিনিয়োগকারী এমন একটা জায়গায় টাকা রাখলেন। যেটা নির্দিষ্ট সময়ের পর বৃদ্ধি পাবে। আর এই ধরনের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে পরে বড়সড় রিটার্ন পেতে পারেন বিনিয়োগকারী। সাধারণত কোনও ব্যবসা কিংবা সম্পত্তিতে টাকা বিনিয়োগ করা হলে তা সুদ বা রিটার্ন প্রদান করে।
কেন বিনিয়োগ করা উচিত?
ভবিষ্যতের আর্থিক লক্ষ্য পূরণের জন্য বিনিয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ নিজের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত এবং নিরাপদ করার জন্যই বিনিয়োগ করা আবশ্যক। ভারতে বিনিয়োগের মাধ্যমে মূলধন তৈরি করার পাশাপাশি টাকা সঞ্চয়ও করা হয়। শুধু তা-ই নয়, এর পাশাপাশি টাকা-পয়সা ধারাবাহিক ভাবে সঞ্চয় করা হলে নিয়মিত সঞ্চয়ের অভ্যেসও তৈরি হয়। আর তাতে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিনিয়োগকারীর মধ্যে আর্থিক শৃঙ্খলা তৈরি করতে পারে।
মূল্যের প্রভাব এবং বিনিয়োগের মূল্য:
আসলে মুদ্রাস্ফীতির কারণে পণ্যের দামও বৃদ্ধি পায়। আর সেই সঙ্গে বিনিয়োগরকারীর কেনার ক্ষমতা এবং টাকার মূল্য নষ্ট হয়। তাই মুদ্রাস্ফীতির হার যখন বৃদ্ধি পায়, তখন বিনিয়োগকারী একই পরিমাণ অর্থ দিয়ে স্বল্প পণ্যসামগ্রী কিনতে পারেন। কারণ মুদ্রাস্ফীতির শতকরা হার বিনিয়োগকারীর নিয়ন্ত্রণের বাইরেই থাকে। তাই বিনিয়োগকারী যদি মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব কাটাতে চান, তা-হলে তাঁর হাতে পর্যাপ্ত টাকা থাকতে হবে। যাতে তিনি নিরাপদ ভবিষ্যতের জন্য বিভিন্ন ধরনের জিনিস কিনে রাখতে পারেন।
Keywords: Savings, Investment, Personal Finance
Original Story Link: https://www.inventiva.co.in/trends/investments-in-india/
Written By: Upasana Sarkar