প্রতিযোগিতার বাজারে ভালো চাকরির জন্য উচ্চশিক্ষার কদর বাড়ছে। কিন্তু তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পড়ার খরচও। বিশেষত যদি ছাত্র-ছাত্রী বিদেশে অথবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে পড়াশোনা করতে চায়। ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং, ম্যানেজমেন্টের মতো চাকরিমুখী পাঠক্রমের খরচ কয়েক লক্ষ টাকা হয়। মেধাবী অথচ নিম্নবিত্ত বা মধ্যবিত্ত পরিবারের কাছে তখন একটাই উপায় থাকে, সেটা হল শিক্ষা ঋণ (Education Loan) নেওয়া। এর অর্থ হল, ভবিষ্যৎ কর্মজীবনের আয় থেকে পরিশোধ করার শর্তে শিক্ষার ব্যয়ভারের একটা অংশ সরকার বা কোনও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ঋণ হিসেবে গ্রহণ করা।
advertisement
শিক্ষার খরচ বহন করার জন্য সরকারি বা বেসরকারি উভয় ব্যাঙ্ক (Bank) থেকে ঋণ পাওয়া যায়। ঋণগ্রহীতা মোট যত টাকা ঋণ নিচ্ছেন, তা সুদ-সহ ব্যাঙ্ককে শোধ করে দিতে হয় নির্দিষ্ট মাসিক কিস্তিতে। ইএমআই (EMI)-এর মোট অঙ্কের মধ্যে ঋণের আসল ও সুদ উভয়ই ধরা থাকে। কত টাকা ঋণ মিলবে অথবা কত সময়ের মধ্যে তা ব্যাঙ্ককে পরিশোধ করতে হবে, তার উপরেই ইএমআই-এর অঙ্ক নির্ভর করে। দেশের নামী ব্যাঙ্কগুলো থেকে সহজেই শিক্ষা ঋণের জন্য আবেদন করা যায়। মোটামুটি ১৫ বছর ঋণ শোধের মেয়াদে ৬.৭৫ শতাংশ সুদের হারে এই ঋণ মেলে। তবে সুদের হার কত হবে, সেটা ব্যাঙ্ক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভর করে।
এখন দেখে নেওয়া যাক, কোন ব্যাঙ্ক কত সুদে কত বছরের জন্য কত টাকা ঋণ দিচ্ছে?
পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক:
১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ মিলবে। মেয়াদকাল ১৫ বছর। বার্ষিক সুদের হার ৬.৯০ শতাংশ থেকে ৯.৫৫ শতাংশ। প্রসেসিং ফি ঋণের মোট অঙ্কের ১ শতাংশ।
স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া:
দেড় কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণের বন্দোবস্ত আছে। মেয়াদকাল ১৫ বছর। বার্ষিক সুদের হার ৬.৮৫ থেকে ৮.৬৫ শতাংশ। প্রসেসিং ফি ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। সঙ্গে ট্যাক্স প্রযোজ্য।
অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক:
৭৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাওয়া যায়। মেয়াদকাল ১৫ বছর। বার্ষিক সুদের হার ১৩.৭০ শতাংশ থেকে ১৫.২০ শতাংশ পর্যন্ত। ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত প্রসেসিং ফি। সঙ্গে ট্যাক্স প্রযোজ্য।
ব্যাঙ্ক অফ বরোদা:
৪ লক্ষ টাকা এবং তারও বেশি ঋণের ব্যবস্থা আছে। মেয়াদকাল ১০ থেকে ১৫ বছর। বার্ষিক সুদের হার ৬.৭৫ শতাংশ থেকে ৯.৮৫ শতাংশ পর্যন্ত। প্রসেসিং ফি ঋণের মোট অঙ্কের ১ শতাংশ।
এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক:
ঋণের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ঊর্ধবসীমা নেই। মেয়াদকাল ১৫ বছর। বার্ষিক সুদের হার ৯.৪৫ শতাংশ থেকে ১৩.৩৪ শতাংশ পর্যন্ত। মোট ঋণের ১.৫ শতাংশ পর্যন্ত প্রসেসিং ফি দিতে হবে। সঙ্গে ট্যাক্স প্রযোজ্য।
টাটা ক্যাপিটাল:
৩০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণের ব্যবস্থা আছে। মেয়াদকাল ৬ বছর। বার্ষিক সুদের হার ১০.৯৯ শতাংশ এবং তার বেশি। মোট ঋণের ২.৭৫ শতাংশ পর্যন্ত প্রসেসিং ফি দিতে হবে। সঙ্গে ট্যাক্স প্রযোজ্য।
ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া:
প্রয়োজনের ভিত্তিতে ঋণের ব্যবস্থা করা হয়। বার্ষিক সুদের হার ৮.৮০ শতাংশ থেকে ১০.০৫ শতাংশ পর্যন্ত। ভারতীয় ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য প্রসেসিং ফি নেই। তবে এনআরআই পড়ুয়াদের জন্য মোট ঋণের ০.৫০ শতাংশের সঙ্গে জিএসটি, প্রসেসিং ফি হিসেবে দিতে হবে।
কোটাক মাহিন্দ্রা ব্যাঙ্ক:
ভারতে পড়াশোনার জন্য ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত এবং বিদেশে পড়াশোনার জন্য ২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ মিলবে। ১৬ শতাংশ পর্যন্ত বার্ষিক সুদের হার। প্রসেসিং ফি-র জন্য ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক:
ভারতে পড়াশোনার জন্য ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত এবং বিদেশে পড়াশোনার জন্য ১ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণের ব্যবস্থা আছে। বার্ষিক সুদের হার ১০.৫০ শতাংশ এবং তার বেশি। প্রসেসিং ফি-র জন্য ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
ফেডেরাল ব্যাঙ্ক:
ভারতে পড়াশোনার জন্য ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত এবং বিদেশে পড়াশোনার জন্য ২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ মিলবে। বার্ষিক সুদের হার ১০.০৫ শতাংশ এবং তার বেশি। প্রসেসিং ফি-র জন্য ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
আরও পড়ুন: Personal Loan VS Car Loan: সাধ্যের মাঝেই সাধপূরণ! কেনাকাটা করার যাচাই করুন নিজের প্রয়োজন
খুচরো ব্যতিক্রম বাদ দিলে, ৪ লক্ষ টাকা পর্যন্ত শিক্ষা ঋণের পুরোটাই দেয় ব্যাঙ্কগুলি। কিছু ক্ষেত্রে তার অঙ্ক হতে পারে ৭.৫ লক্ষ। তবে দেশে পড়াশোনার জন্য তার বেশি টাকা চাইলে, খরচের অন্তত ৫ শতাংশ দিতে হবে পকেট থেকে। যাকে ‘মার্জিন মানি’ বলা হয়ে থাকে। বিদেশে পড়াশোনার ক্ষেত্রে নিজেকে দিতে হবে ১৫ শতাংশ, কিছু ক্ষেত্রে ২০ শতাংশও দিতে হতে পারে। মার্জিন মানি দেওয়ার বিষয়টি অবশ্য ব্যাঙ্ক বিশেষে হেরফের হয়। তবে মার্জিন মানি একসঙ্গে দিতে হয় না। সাধারণত কিস্তিতে ঋণের টাকা দেয় ব্যাঙ্কগুলি। তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে মার্জিন মানি গুনতে হয়।