নন্দকিশোর তাঁর গ্রামে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন এবং তারপর আইপিএস কলেজ থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি অর্জন করেন। পড়াশোনা শেষ করার পর তিনি একটি বেসরকারি কোম্পানিতে ৫০,০০০ টাকা বেতনে চাকরি পান। তিনি কয়েক বছর কাজ করেছিলেন, কিন্তু তিনি সর্বদা ভিন্ন কিছু করার জন্য আকুল ছিলেন। তিনি নিজের মতো করে এমন কিছু তৈরি করতে চেয়েছিলেন, যা কেবল তাঁকে সফল করবে না বরং অন্যদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করবে।
advertisement
চাকরি ছেড়ে মাছ চাষ শুরু-২০১৬ সালে নন্দকিশোর একটি বড় সিদ্ধান্ত নেন। তিনি তাঁর স্থায়ী চাকরিকে বিদায় জানিয়ে মাছ চাষ শুরু করেন। গ্রামবাসীরা অবাক হয়েছিলেন যে, একজন ইঞ্জিনিয়ার এখন পুকুরে মাছ চাষ করবেন! কিন্তু নন্দকিশোরের নিজের উপর আস্থা ছিল। প্রথম দিকে তিনি কেবল একটি পুকুর দিয়ে শুরু করেছিলেন। সরকারি প্রকল্প এবং কৃষি বিভাগের সহায়তায় তিনি মাছ চাষের কৌশল শিখেছিলেন। ধীরে ধীরে নিজের অভিজ্ঞতা এবং জ্ঞান ব্যবহার করে তিনি ABC মডেলের (বায়ুচলাচল, প্রজনন এবং যত্ন) অধীনে মাছ চাষের পরিকল্পনা করেছিলেন। এর ফলে মাছের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়েছিল এবং উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল।
চার থেকে পাঁচটি পুকুর এবং কোটি টাকার টার্নওভার-এখন নন্দকিশোর প্যাটেলের চার থেকে পাঁচটি বড় পুকুর রয়েছে যেখানে তিনি রুই, কাতলা, মৃগেল এবং তেলাপিয়ার মতো মাছের প্রজাতি পালন করেন। তাঁর বার্ষিক টার্নওভার প্রায় ১২ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। নন্দকিশোর বলেন যে, ইতিবাচক চিন্তাভাবনা এবং আন্তরিক কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে যে কোনও প্রচেষ্টায় সাফল্য অর্জন করা সম্ভব। “আমার ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি থাকতে পারে, কিন্তু আমি ক্ষেত এবং পুকুরেই প্রকৃত ইঞ্জিনিয়ারিং অনুশীলন করেছি”, সহাস্য বক্তব্য তাঁর!
প্রযুক্তি এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি সাফল্যের চাবিকাঠি-নন্দকিশোর মাছ চাষে বৈজ্ঞানিক কৌশল ব্যবহার করেন। তিনি পুকুরে অক্সিজেনের মাত্রা, জলের গুণমান এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে এয়ারেটর মেশিন ব্যবহার করেন। তিনি মাছের জন্য সুষম খাদ্যও সরবরাহ করেন, যা ওজন এবং উৎপাদন উভয়ই বৃদ্ধি করে। তিনি প্রতিটি ব্যাচের পরে তথ্য বিশ্লেষণ করে নির্ধারণ করেন যে, কোন ঋতুতে কোন প্রজাতি বেশি লাভজনক। এই পরিকল্পনা তাঁকে সারা বছর ধরে পুকুর থেকে আয় করতে সাহায্য করে।
যুবকদের জন্য অনুপ্রেরণা-নন্দকিশোর প্যাটেল এখন ব্যক্তিগতভাবে অনেক তরুণকে মাছ চাষের প্রশিক্ষণ দেন। তিনি গ্রামের বেকার যুবকদের বলেন যে, সরকারি প্রকল্পগুলিকে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে তাঁরাও লাখ লাখ টাকা আয় করতে পারেন। বর্তমানে তাঁর নির্দেশনায় কয়েক ডজন যুবক মাছ চাষের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হয়েছেন।
তিনি বলেন, “আমরা সবসময় শুনেছি যে, শিক্ষিত লোকেরা চাকরির জন্য কাজ করে, কিন্তু এখন সময় এসেছে শিক্ষিতদের কৃষিকাজ এবং পশুপালনকে আসার। এটিই সত্যিকার অর্থে আত্মনির্ভর ভারতের দিকনির্দেশনা।”
সরকারি সহায়তা বৃদ্ধি-নন্দকিশোর মৎস্য বিভাগের প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্পদ যোজনারও সুযোগ নিয়েছিলেন। এই প্রকল্পের অধীনে তিনি পুকুর নির্মাণ এবং মাছের খাবারের জন্য ভর্তুকি পেয়েছিলেন। এর ফলে তাঁর খরচ কমেছে এবং লাভ বেড়েছে। এখন তাঁর ব্র্যান্ড নেমে তিনি নিকটবর্তী জেলাগুলিতে তাজা এবং পরিষ্কার মাছ সরবরাহ করেন।
