গোলাপ ফুল কেবল সৌন্দর্য এবং সুগন্ধের প্রতীক নয়, বরং কৃষকদের জন্য লাভজনক যন্ত্রেও পরিণত হয়েছে। গুলকন্দ, গোলাপ জল, সুগন্ধি, ধূপকাঠি, ঔষধি পণ্য এবং প্রসাধনী জাতীয় গোলাপ-ভিত্তিক পণ্যের চাহিদা কেবল দেশেই নয়, বিদেশেও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই কারণেই মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান এবং মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যের কৃষকরাও দ্রুত গোলাপ চাষের দিকে ঝুঁকছেন।
খান্ডোয়া জেলার কৃষক মাঙ্গিলাল প্যাটেল আগে গম এবং সয়াবিনের মতো ঐতিহ্যবাহী ফসল চাষ করতেন। কিন্তু এখন গোলাপ চাষের দিকে ঝুঁকছেন। তিনি ব্যাখ্যা করেন যে, গোলাপ চাষের খরচ প্রতি একরে মাত্র ৭,০০০ থেকে ১০,০০০ টাকা, যা এক মাসের মধ্যে আদায় হয় এবং বছরের বাকি সময়েও লাভ থাকে।
advertisement
আরও পড়ুন নভেম্বর মাসে বিটরুট চাষ শুরু করুন, বাড়বে তরতরিয়ে, জেনে নিন সহজ পদ্ধতি
কৃষক ভগীরথ প্যাটেল বলেন, গোলাপ চাষের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল এটি প্রতিদিনের ফসল। এর অর্থ হল কৃষকরা তাঁদের ফুল প্রতিদিন বা সাপ্তাহিকভাবে স্থানীয় বাজার, ফুল বাজারে, অথবা সুগন্ধি বা প্রসাধনী কোম্পানির কাছে বিক্রি করতে পারেন। বাজারে গোলাপের চাহিদা কখনও কমে না, তা সে বিবাহের মরশুম, উৎসব, অথবা ধর্মীয় অনুষ্ঠান হোক। গোলাপের প্রয়োজন সর্বত্র।
চাষের প্রস্তুতি- হালকা দোআঁশ বা বেলে দোআঁশ মাটি গোলাপ চাষের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত বলে মনে করা হয়। মাটির pH ৬.৫ থেকে ৭.৫ এর মধ্যে হওয়া উচিত। জমি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে চাষ করতে হবে এবং গোবর সার বা জৈব সার দিতে হবে। ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ বা জুলাই থেকে অগাস্টের মধ্যে রোপণ করা যেতে পারে। আবহাওয়া হালকা আর্দ্র এবং তাপমাত্রা ২০ থেকে ৩০ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে ফুলের বৃদ্ধি সবচেয়ে ভাল হয়।
সেচ এবং যত্ন- গোলাপ গাছগুলিতে খুব বেশি জলের প্রয়োজন হয় না, তবে মাটির আর্দ্রতা বজায় রাখার জন্য নিয়মিত সেচ অপরিহার্য। প্রাথমিক দিনগুলিতে প্রতি ৭ থেকে ১০ দিন অন্তর জল দেওয়া উচিত। নতুন ফুল ফোটাতে এবং উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য গাছের বৃদ্ধির জন্য ছাঁটাইও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গোলাপের পাতা এবং কুঁড়ি ক্ষতিগ্রস্ত করে এমন পোকামাকড়, বিশেষ করে জাবপোকা এবং থ্রিপস থেকে রক্ষা করার জন্য জৈব কীটনাশক ব্যবহার করা উচিত।
আয়ের হিসেব- যদি একজন কৃষক ১ একর জমিতে গোলাপ চাষ করেন, তাহলে তিনি বছরে প্রায় ১০ থেকে ১২ টন ফুল উৎপাদন করতে পারবেন। স্থানীয় বাজারে গোলাপের দাম প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত। এর অর্থ হল একজন কৃষক প্রতি একর থেকে বছরে ৪ থেকে ৮ লাখ টাকা আয় করতে পারবে। কৃষকরা যদি সরাসরি সুগন্ধি বা গুলকন্দ উৎপাদনকারী কোম্পানিতে ফুল সরবরাহ করেন, তাহলে আরও ভাল দাম পেতে পারেন।
গোলাপ চাষ থেকে লাভ কেবল ফুল বিক্রি করেই নয়, বরং তা থেকে তৈরি পণ্য উৎপাদন করেও আসে। যেমন,
গুলকন্দ উৎপাদন: গ্রীষ্মকালে প্রচুর চাহিদা থাকে।
গোলাপ জল: প্রসাধনীতে ব্যবহারের কারণে এটি সর্বদা বিক্রি হয়।
সুগন্ধি এবং ধূপের কাঠি: সারা বছর এর চাহিদা ক্রমাগত থাকে।
অনেক কৃষক এখন ছোট ছোট ইউনিট স্থাপন করে গোলাপ তেল এবং গোলাপ জল উৎপাদন শুরু করেছেন, যা তাঁদের আয় আরও বৃদ্ধি করেছে।
ফুল চাষকে উৎসাহিত করার জন্য সরকার বেশ কয়েকটি প্রকল্পও পরিচালনা করে। জাতীয় উদ্যানতত্ত্ব মিশনের (NHM) অধীনে কৃষকদের ভর্তুকি এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করা হয়। কৃষকরা তাদের জেলার কৃষি বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করে সহজেই এই প্রকল্পগুলি গ্রহণ করতে পারেন।
