আরবিআই-এর মানটরি পলিসি মিটিংয়ে একটি বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আরবিআই গভর্নর সঞ্জয় মালহোত্রা এই বিষয়ে ঘোষণা করেছেন। রেপো রেট ০.২৫% (২৫ বেসিস পয়েন্ট) হ্রাসের ঘোষণা করা হয়েছে।
স্বাভাবিক ভাবেই এবার হোম লোন, কার লোন সস্তা হবে। যখন ব্যাঙ্কগুলো আরবিআই থেকে কম সুদে টাকা নেবে, তখন তারা গ্রাহকদের কম সুদে ঋণও দেবে। অর্থাৎ, কেউ যদি হোম লোন, কার লোন বা পার্সোনাল লোন নিয়ে থাকেন অথবা নেওয়ার কথা ভাবেন, তাহলে এক ধাক্কায় ইএমআই কমে যেতে পারে। যদি কারও বর্তমান হোম লোনের ইএমআই প্রতি মাসে ২০ হাজার হয়, তাহলে এখন তা ৫০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত কমে যেতে পারে।
advertisement
একই ভাবে, নতুন ঋণ নেওয়াও এখন সস্তা হবে। কেউ যদি একটি নতুন বাড়ি কিনতে চান, একটি গাড়ি কিনতে চান বা পড়াশোনার জন্য এডুকেশন লোন নিতে চান, তাহলে এখন তিনি কম সুদের হারে ঋণ পাবেন। এতে স্বাভাবিক ভাবেই পকেট হালকা হবে, ঋণ পরিশোধের বোঝা কমবে।
আরও পড়ুন: অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কার মধ্যে সোনা নিয়ে চিন থেকে বড় খবর, দামে সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে !
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার বুধবার এই রেপো রেট ০.২৫ বেসিস পয়েন্ট কমানোর ঘোষণা যাঁরা মাসে মাসে লোনের ইএমআই দিয়ে চলেছেন, তাঁদের জন্য খুশির খবর তো বটেই। বিদ্যমান গ্রাহকদের লোনের ইএমআই এতে যেমন কমবে, তেমনই নতুন ঋণগ্রহীতারা শীঘ্রই হোম লোন, কার লোন এবং পার্সোনাল লোনে সাশ্রয়ের সুবিধা পাবেন।
সাম্প্রতিক এই রেপো রেট হ্রাসের ফলে যে সুদের হারে আরবিআই ব্যাঙ্কগুলোকে ঋণ দেয়, তা এখন ৬ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে, যা পূর্বে ৬.২৫ শতাংশ ছিল। কোভিড-১৯ মহামারী শুরু হওয়ার পর থেকে এই নিয়ে আরবিআই দ্বিতীয়বার রেপো রেটের হার হ্রাস করল।
মে ২০২০ থেকে এপ্রিল ২০২২ পর্যন্ত আরবিআই রেপো রেট ৪ শতাংশে স্থির রেখেছিল। এপ্রিল ২০২২ থেকে ফেব্রুয়ারি ২০২৩ পর্যন্ত, আরবিআই ধীরে ধীরে রেপো রেট ৬.৫ শতাংশে বৃদ্ধি করে, সাম্প্রতিক হ্রাসের আগে পর্যন্ত দুই বছর ধরে এই হার বজায় থাকে।
আরবিআই যখন রেপো রেটের হার কমাচ্ছে, তখন ব্যাঙ্কগুলোও তা অনুসরণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। দেখে নেওয়া যাক ২০২৫ সালে আরবিআই-এর রেপো রেট কমানোর প্রভাব, গ্রাহক কতটা সাশ্রয় করবেন!
এখানে এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক থেকে ৮.৭০ শতাংশ সুদের হারে ৩০ বছরের জন্য ৫০ লক্ষ টাকার হোম লোনের উদাহরণ দেওয়া হল-
আরও পড়ুন: PPF-এ পাবেন দ্বিগুণ সুদ, এই ছোট কৌশলই হবে কামাল, জানুন বিশদে
বর্তমান ইএমআই: ৩৯,১৫৭ টাকা
যদি সুদের হার ০.২৫ বেসিস পয়েন্ট কমে ৮.৪৫ শতাংশে পৌঁছয়, তাহলে ইএমআই ৩৮,২৬৯ টাকা হয়, যার ফলে প্রতি মাসে ৮৮৮ টাকা সাশ্রয় হবে।
যদি সুদের হার ০.৫০ বেসিস পয়েন্ট কমে ৮.২০ শতাংশে পৌঁছয়, তাহলে ইএমআই ৩৭,৩৮৮ টাকা হয়, যার ফলে প্রতি মাসে ১,৭৬৯ টাকা সাশ্রয় হবে।
এর ফলে মাত্র ০.৫ শতাংশ সুদের হার কমালেও প্রতি বছর ২১,০০০ টাকারও বেশি সাশ্রয় হবে। যদিও এটি কারও কারও কাছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ মনে নাও হতে পারে, তবে এটি অনেক ঋণগ্রহীতার জন্য, বিশেষ করে ২০ বা ৩০ বছরের ঋণের মেয়াদে, যথেষ্ট পার্থক্য আনতে পারে।
তবে, এগুলো সবই প্রাথমিক হিসেব, ইএমআই-তে চূড়ান্ত সাশ্রয় নির্ভর করবে ঋণের সুদের হার কমানোর বিষয়ে পৃথক পৃথক ব্যাঙ্কের সিদ্ধান্তের উপরে। ঋণের সুদের হার দুটি উপাদান নিয়ে গঠিত – তহবিলের প্রান্তিক ব্যয় ভিত্তিক ঋণের হার (MCLR) এবং স্প্রেড। আরবিআই-এর রেপো রেট কমানোর পরে MCLR কমার সম্ভাবনা থাকলেও, স্প্রেড বিভিন্ন ব্যাঙ্কে পরিবর্তিত হয়, সুদের হার কতটা কমবে এটা তার উপরে নির্ভর করে।
এবার দেখে নেওয়া যাক পার্সোনাল লোনের উপর রেপো রেট ২০২৫-এর প্রভাব কী ভাবে পড়বে!
যদি কারও পাঁচ বছরের জন্য ১২ শতাংশ সুদের হারে ৫ লক্ষ টাকার পার্সোনাল লোন থাকে, তাহলে ০.২৫ শতাংশ সুদের হার কমলে ইএমআই ১১,২৮২ টাকা থেকে কমে ১১,১৪৯ টাকা হবে, যার ফলে মাসে ১৩৩ টাকা বা বছরে ১,৫৯৬ টাকা সাশ্রয় হবে।
এটাও মাথায় রাখতে হবে যে যে সব বিদ্যমান গ্রাহক ফ্লোটিং রেটে লোন নিয়েছেন, তাঁরাই মূলত রেপো রেট হ্রাসের ফলে উপকৃত হবেন। যাঁদের লোনের সুদের হার স্থির, তাঁরা ইএমআইতে কোনও পরিবর্তন দেখতে পাবেন না।