সম্পদ গঠনের প্রেক্ষাপটে বিশেষজ্ঞরা যখন ‘দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ’ সম্পর্কে কথা বলেন, তখন তার অর্থ হল বিনিয়োগটি ৫ থেকে ১০ বছর বা তারও বেশি সময় ধরে ধরে রাখা। যদি কোনও বিনিয়োগকারী সেই সময় দেন, তাহলে বিনিয়োগ করা অর্থ বাজারের ওঠানামা কাটিয়ে ওঠার জন্য এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চক্রবৃদ্ধি থেকে উপকৃত হওয়ার জন্য সময় পায়। এই লেখায়, আমরা ১, ৩, ৫, ১০, ১৫ এবং ২০ বছরের সময়কালে তাদের রিটার্নের উপর ভিত্তি করে তিনটি সম্পদ শ্রেণী, ইক্যুইটি, সোনা এবং রিয়েল এস্টেটের কর্মক্ষমতা পর্যালোচনা করব। ‘ফান্ডসইন্ডিয়া’স ওয়েলথ কনভার্সেশনস’ রিপোর্টটি ৩১ মে, ২০২৫ পর্যন্ত ভারতীয় ইক্যুইটি, সোনা এবং রিয়েল এস্টেটের কর্মক্ষমতা সম্পর্কে স্পষ্ট এক হিসেব দিচ্ছে।
advertisement
আরও পড়ুন: সামনে এল চমকে দেওয়া তথ্য, ২০২৬ সালে সোনার দাম কত হতে পারে ? জানলে চমকে যাবেন
এই তিনটি সম্পদ শ্রেণীর তুলনা এখানে দেওয়া হল –
– ১ বছর সময়কালে ভারতীয় ইক্যুইটি (নিফটি ৫০ টিআরআই) ১১.১% (১.১ গুন), সোনা (আইএনআর) ৪৩.১% (১.৪ গুন), রিয়েল এস্টেট (এনএইচবি রেসিডেক্স) ৭.৪% (১.১ গুন) বৃদ্ধি পেয়েছে।
– ৩ বছর সময়কালে ভারতীয় ইক্যুইটি (নিফটি ৫০ টিআরআই) ১৫.৬% (১.৫ গুন), সোনা (আইএনআর) ২৫.৩% (২.০ গুন), রিয়েল এস্টেট (এনএইচবি রেসিডেক্স) ৬.৯% (১.২ গুন) বৃদ্ধি পেয়েছে।
– ৫ বছর সময়কালে ভারতীয় ইক্যুইটি (নিফটি ৫০ টিআরআই) ২২.৩% (২.৭ গুন), সোনা (আইএনআর) ১৬.৪% (২.১ গুন), রিয়েল এস্টেট (এনএইচবি রেসিডেক্স) ৫.৭% (১.৩ গুন) বৃদ্ধি পেয়েছে।
– ১০ বছর সময়কালে ভারতীয় ইক্যুইটি (নিফটি ৫০ টিআরআই) ১২.৭% (৩.৩ গুন), সোনা (আইএনআর) ১৪.০% (৩.৭ গুন), রিয়েল এস্টেট (এনএইচবি রেসিডেক্স) ৫.২% (১.৭ গুন) বৃদ্ধি পেয়েছে।
– ১৫ বছর সময়কালে ভারতীয় ইক্যুইটি (নিফটি ৫০ টিআরআই) ১২.৫% (৫.৮ গুন), সোনা (আইএনআর) ১১.৩% (৫.০ গুন), রিয়েল এস্টেট (এনএইচবি রেসিডেক্স) ৬.৪% (২.৫ গুন) বৃদ্ধি পেয়েছে।
– ২০ বছর সময়কালে ভারতীয় ইক্যুইটি (নিফটি ৫০ টিআরআই) ১২.৫% (৫.৮ গুন), সোনা (আইএনআর) ১১.৩% (৫.০ গুন), রিয়েল এস্টেট (এনএইচবি রেসিডেক্স) ৬.৪% (২.৫ গুন) বৃদ্ধি পেয়েছে।
সূত্র: ফান্ডসইন্ডিয়া ওয়েলথ কনভার্সেশনস – জুন ২০২৫ (৩১ মে ২০২৫ পর্যন্ত তথ্য)
আরও পড়ুন: ১০ হাজার টাকার মাসিক SIP থেকে মিলবে ৭০ লাখ টাকা ! জানুন কোন প্ল্যানে বিনিয়োগ করতে হবে
ফান্ডসইন্ডিয়া’স ওয়েলথ কনভার্সেশনস জুন ২০২৫ রিপোর্ট অনুসারে, ভারতীয় ইক্যুইটিগুলি ২০ বছরের দিগন্তে সোনা, রিয়েল এস্টেট এবং ঋণের মতো অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী সম্পদ শ্রেণীকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। যদিও ইক্যুইটিগুলির ১ লাখ টাকা ১৫.২ লাখ টাকায় রূপান্তরিত হয়েছে, সোনা একই পরিমাণে বেড়ে ১৫.৫ লাখ টাকায় পৌঁছেছে এবং রিয়েল এস্টেট মাত্র ৪.৪ লাখ টাকা দিয়েছে। যখন বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিজেদের অবসর বা সন্তানদের ভবিষ্যতের সঙ্গে সম্পর্কিত হয়, তখন পরিসংখ্যান যথেষ্ট নয়- আস্থা প্রয়োজন। ২০ বছরের তথ্য দেখায় যে, শেয়ার বাজার এই আস্থাকে সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী করেছে।
শেয়ার বাজার: ওঠানামা সত্ত্বেও সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য –
– বেশিরভাগ বিনিয়োগকারীরা প্রায়শই শেয়ার বাজার সম্পর্কে শঙ্কিত থাকেন। ওঠানামার খবর, বাজারের পতনের শিরোনাম এবং আরও অনেক কারণ থাকে, কিন্তু প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, ধৈর্য ধরলে শেয়ার বাজার ভাল লাভ দিতে পারে।
– নিফটি ৫০ টিআরআই ১৪.৬% বার্ষিক রিটার্ন দিয়েছে এবং বিনিয়োগ ১৫.২ গুন বৃদ্ধি করেছে। শুধু তাই নয়, মিডক্যাপ এবং স্মলক্যাপ সূচক আরও ভাল পারফর্ম করেছে। মিডক্যাপের এই বৃদ্ধি ২৫.৩ গুণ পর্যন্ত বেড়েছে।
-অর্থাৎ কেউ যদি একবার বিজ্ঞতার সঙ্গে এটি বেছে নিতে পারে এবং আতঙ্কিত না হয়ে ধরে রাখতে পারে, তাহলে বাজার এর বিনিময়ে ভাল রিটার্ন দিয়েছে।
সোনা: স্থিতিশীল, নিরাপদ কিন্তু সীমিত বৃদ্ধি –
– ভারতীয় পরিবারে সোনাকে কেবল গয়না হিসেবে বিবেচনা করা হয় না, এটি একটি নিরাপদ বিনিয়োগও হিসেবে বিবেচিত হয়। গত ২০ বছরের পরিসংখ্যানও এটি প্রমাণ করে।
– গড় ১৪.৭% বার্ষিক বৃদ্ধির সঙ্গে, সোনা অর্থকে ১৫.৫ গুণ বৃদ্ধি করেছে। হঠাৎ বিশ্বব্যাপী ঘটনার কারণে কখনও কখনও সোনার এই গতি ত্বরান্বিত হয়েছে- যেমন কোভিড মহামারী বা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ।
– অর্থাৎ, সোনা একটি অস্থায়ী বৃদ্ধি দেয়, কিন্তু খুব কমই স্থায়ী সম্পদের উৎস হয়ে ওঠে।
রিয়েল এস্টেট: স্বপ্নের বাড়ি, কিন্তু বিনিয়োগ ধীর গতিতে –
– প্রত্যেক ভারতীয়ের নিজস্ব বাড়ি থাকার আকাঙ্ক্ষা থাকে। কিন্তু বিনিয়োগের দৃষ্টিকোণ থেকে রিয়েল এস্টেট এখন আগের মতো রিটার্ন দিচ্ছে না।
– ২০ বছরে এর গড় বার্ষিক রিটার্ন ছিল মাত্র ৭.৭% – অর্থাৎ ১ লাখ টাকা মাত্র ৪.৪ লাখ টাকা। এত দীর্ঘ সময়ে এই প্রবৃদ্ধি মুদ্রাস্ফীতি, এমনকি নিজের বড় আর্থিক লক্ষ্যকেও ছাড়িয়ে যায়নি।
কোথায় অর্থ সবচেয়ে দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে –
– শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ ৬-৭ বছরে দ্বিগুণ এবং ১০-১১ বছরে তিনগুণ বেড়েছে।
– সোনাও ২০ বছরে ১৫.৫ গুণ রিটার্ন দিয়েছে, কিন্তু এর যাত্রা ততটা স্থিতিশীল ছিল না।
– রিয়েল এস্টেট সবচেয়ে ধীর গতিতে পারফর্ম করেছে – ২০ বছরে মাত্র ৪.৪ গুণ।
-অর্থাৎ, ধৈর্য এবং সঠিক সম্পদ নির্বাচন দীর্ঘমেয়াদে বিশাল সম্পদ তৈরি করেছে।
যদি কেউ নিজের অর্থ বৃদ্ধি করতে চায়, তাহলে দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখতে হবে –
অনেক সময় আমরা ১ বা ২ বছরের রিটার্ন দেখে ঘাবড়ে যাই, বাজার পড়লে আমরা আতঙ্কিত হই, যদি তা বৃদ্ধি পায় তবে তাৎক্ষণিকভাবে সোনা কিনে ফেলি। কিন্তু এই প্রতিবেদনটি শেখায় যে আসল লাভ দীর্ঘমেয়াদে। শেয়ার বাজার বার বার দেখিয়েছে যে, কেউ যদি ধৈর্য ধরে এবং বিজ্ঞতার সঙ্গে বিনিয়োগ করে, তাহলে পতনের পরেও ভাল অর্থ উপার্জন করা যেতে পারে। তাই যদি কেউ অবসর গ্রহণের পরিকল্পনা করে বা নিজেদের সন্তানদের শিক্ষার পরিকল্পনা করে, তাহলে বিনিয়োগের সিদ্ধান্তগুলি তথ্যের উপর নয়, চিন্তাভাবনার উপর ভিত্তি করে করা উচিত এবং সেই চিন্তাভাবনা দীর্ঘমেয়াদী হওয়া উচিত।