এদিকে ভারত এমন একটি দেশ যার বারো মাসে তেরো পার্বণ। সেখানে মিষ্টি অপরিহার্য। বাঙালির চিরাচরিত মিষ্টির পাশাপাশি চকোলেটও ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছে। এদেশের অনেক রাজ্যেই বিভিন্ন ধরনের চকোলেট ও চকোলেটজাত দ্রব্য উৎপাদন বাড়ছে। বেশি বলার দরকার কী, আজ ভ্যালেন্টাইন্স উইকের তৃতীয় দিন চকোলেট ডে-র দিকে চোখ রাখলেই তো বোঝা যাবে কীভাবে এই ব্যবসা রাতারাতি মালামাল করে তুলতে পারে। কী ভাবে শুরু করা যায় এই ব্যবসা, দেখে নেওয়া যাক এক নজরে—
advertisement
আরও পড়ুন: ফের বদল জ্বালানি তেলের দামে! কলকাতায় আজ কত হল দেখুন
চকোলেট ব্যবসার জন্য কয়েকটি লাইসেন্স প্রয়োজন:
১. জিএসটি রেজিস্ট্রেশন
২. সংস্থা রেজিস্ট্রেশন
৩. ট্রেড লাইসেন্স
৪. ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ড অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (FSSAI)-র অনুমোদন
৫. আইইসি কোড
৬. ট্রেড মার্ক
বিনিয়োগ:
যে কোনও ব্যবসাতেই একটা ন্যূনতম বিনিয়োগ প্রয়োজন। এক্ষেত্রে-
ছোট স্কেল (আউটলেট ভিত্তিক)— ৩ থেকে ৬ লক্ষ টাকা
বড় স্কেল (পাইকারি ভিত্তিক)— ২০ থেকে ৪০ লক্ষ টাকা
আরও পড়ুন: চাকরি গেলেও চিন্তা কী? পুঁজি ছাড়াই শুরু করা যায় এই ৬ ব্যবসা!
প্রত্যাশিত লাভ:
পুরো দস্তুর চকোলেটের ব্যবসা করেন এমন ব্যক্তিদের গড় লাভের পরিমাণ প্রতি মাসে প্রায় ৩০ হাজার থেকে ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হতে পারে৷
কোথায় বিক্রি করা যায়:
সুপারমার্কেট— চকোলেট বিক্রির আদর্শ জায়গা যে কোনও সুপারমার্কেট। এখানে নিজের পণ্য সরবরাহ করা যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞ খুচরো বিক্রেতা— কিছু খুচরো বিক্রেতা শুধুমাত্র চকোলেটের উপরই নজর দেন। তাঁদের সঙ্গে জোট বেঁধে কাজ করা যেতে পারে।
হাইপারমার্কেট— সুপারমার্কেটের পরবর্তী ধাপ হল হাইপারমার্কেট। এদের পণ্যের বিস্তৃত পরিসর রয়েছে, তার অন্যতম হল চকোলেট।
অনলাইন বিক্রি— অনলাইন স্টোর এখন খুবই সহজ বিক্রয় মাধ্যম। নিজেই চালু করা যায়। বা চালু স্টোরের সঙ্গে জোট বাঁধা যায়।
পাড়ার দোকান— একেবারে নিজের পাড়ার চালু দোকানেও কথা বলা যেতে পারে।
প্রয়োজনীয় কাঁচামাল:
অন্য যে কোনও ব্যবসার মতো চকোলেট ব্যবসাতেও উন্নত গুণমানের কাঁচামাল প্রয়োজন। যেমন-
১. দুগ্ধজাত পণ্য
২. অনুমোদিত কৃত্রিম ফ্লেভার
৩. কোকো
৪. বিভিন্ন খাদ্য উপাদান
৫. সুইটনারস ইত্যাদি
প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম:
লার্জ স্কেলে চকোলেট উৎপাদনে প্রয়োজন হবে
১. কাটার
২. চকোলেট মেল্টার
৩. প্যানিং সরঞ্জাম
৪. টেম্পারিং সরঞ্জাম
৫. বিন বার সরঞ্জাম
৬. চিজ ওয়াক্সিং মেশিন
৬. চকোলেট রেফ্রিজারেশন মেশিন
৭. জমা করার জায়গা
৮. মোল্ডিং সরঞ্জাম
৯. স্পিনিং সরঞ্জাম
প্রয়োজনীয় জনবল:
খুচরো বা আউটলেট-ভিত্তিক চকোলেট তৈরির ব্যবসার সমস্ত প্রক্রিয়া একা পরিচালনা করা সম্ভব নয়। দক্ষতা, অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে দু’জন দক্ষ ও একজন অদক্ষ কর্মী প্রয়োজন।
লাভের অঙ্ক:
চকোলেট ব্যবসায়, দক্ষ পণ্যের গুণমান এবং বাজার মূল্য-সহ, ৭ থেকে ১৪ শতাংশ লাভের আশা করা যেতে পারে।
ব্যবসা বৃদ্ধির গতি:
ব্যবসার নাড়ি বুঝে ফেলার পর যদি তা কয়েক বছর চালু থাকে তা হলে কেমন বৃদ্ধি দিতে পারে সে বিষয়ে খানিকটা ধারণা পাওয়া যেতে পারে বাজার থেকে।
ভারতের একাধিক সংস্থার উপর করা সমীক্ষা বলছে এই ব্যবসার ভবিষ্যৎ আশাব্যঞ্জক এবং উর্ধ্বমুখী।
এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের করা সমীক্ষা রিপোর্ট অনুযায়ী ২০২৩ সালে ভারতীয় চকোলেট বাজারে কম্পাউন্ড অ্যানুয়াল গ্রোথ রেট ১৬ শতাংশের উপরে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা প্রায় ৩.৩ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি হতে পারে।
অন্য একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ভারতীয় চকোলেট বাজার ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ ১৮৩৩.২৮ মিলিয়ন ডলার বা তার বেশি ব্যবসা করতে পারে।
ভারতীয় চকোলেট বাজার ২০১৭ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত CAGR-এ ১৯ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রয়োজনীয় টিপস—
কোন ধরনের পণ্য নিয়ে কাজ করা দরকার তা স্থির করতে হবে। বাজারে ডার্ক চকোলেট, মিল্ক চকোলেট, মিষ্টি ছাড়া চকোলেট এবং সাদা চকোলেট— নানা ধরনের চকোলেট পাওয়া যায়। প্রাথমিক ভাবে সব কিছু একসঙ্গে করতে যাওয়া ঠিক নয়।
প্রাথমিক পর্যায়ে, নিজের চকোলেট ব্র্যান্ডের পরিচিতির জন্য সম্ভাব্য ক্রেতা বা পরিচিত মানুষকে বিনামূল্যে নমুনা দেওয়া দরকার। এতে যে শুধু ভাল প্রতিক্রিয়াই পাওয়া যাবে তাই নয়, খারাপ যে প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেল তা থেকে নিজেকে বদলে নেওয়ার সুযোগ থাকবে।
বিপণনের ক্ষেত্রে লক্ষ্য স্থির করে বিনামূল্য নমুনা বিতরণ কার্যকরী হতে পারে, যেমন স্কুলে। সোশ্যাল মিডিয়াও ব্যবহার করা যেতে পারে। উৎসব মরশুমে চকোলেটের উপরে লাভ রেখেও ভাল ছাড় দেওয়া যেতে পারে। অথবা, অন্য কোনও পণ্যের সঙ্গে দেওয়া যেতে পারে বিনামূল্যে। এই সব কিছুই ব্যবসা এবং জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।