পশ্চিম চম্পারণ, বিহার: অধ্যবসায়ই যে শেষ পর্যন্ত সাফল্যের পথ প্রশস্ত করে দেয়, তার উদাহরণ যত্রতত্র পাওয়া যায়। এবার সেই খবরই এল পশ্চিম চম্পারণ থেকে। গ্রামের মহিলাদের সাফল্যের এই কাহিনি দৃষ্টান্ত হয়ে উঠতে পারে সকলের জন্যই!
তার আগে বলে রাখা ভাল যে এই মহিলাদের সে ভাবে দেখতে গেলে সম্বল বলে কিছুই ছিল না। দারিদ্র্যের সঙ্গে প্রতিনিয়ত লড়াই করতে হত তাঁদের। কারও স্বামী নেই ভরণপোষণের জন্য, পরিবারের পুরুষ সদস্যদের উপার্জনও তেমন উল্লেখযোগ্য নয় যে তা দিয়ে সংসার চলবে। তবে, এটাও ভুলে গেলে চলবে না যে নারী সাক্ষাৎ অন্নপূর্ণা! প্রতি ঘরে দু-বেলা যাঁরা খাবার বেড়ে দেন পরিবারের সদস্যদের, তাঁদের কাছে সেই খাদ্যের সংস্থানই বা কী আর কঠিন কাজ! সত্যি বলতে কী, নারী আর পুরুষে যে কোনও প্রভেদ নেই, পশ্চিম চম্পারণের এই কাহিনি সে কথারই প্রমাণ দেয়।
advertisement
জানা গিয়েছে যে পশ্চিম চম্পারণে বনের কাছে বসবাসকারী মহিলারা এমন এক কাজ করে দেখিয়ে দিয়েছেন যা পুরো জেলায় এখন প্রশংসিত হচ্ছে। বাল্মীকি টাইগার রিজার্ভের বাল্মীকিনগর রেঞ্জ সংলগ্ন কদমহিয়া গ্রামের প্রায় ৩০ জন মহিলা একসঙ্গে এখন মাশরুম উৎপাদনের কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। সেই উৎপাদনের পরিধিও নিতান্ত ফেলনা নয়, তা এতটাই বড় যে তাঁরা এর থেকে বেশ ভাল আয় করছেন। তবে, শুধু মাশরুম উৎপাদন করেই তাঁরা থেমে থাকছেন না, কাজ এখানেই শেষ নয়, মাশরুম উৎপাদনের পর, মহিলারা সেগুলোকে বিভিন্ন আকারে রূপান্তরিত করেও বিক্রি করছেন, যা তাঁদের মাত্র এক প্রচেষ্টা থেকেই দ্বিগুণ লাভের সুযোগ করে দিচ্ছে। চম্পারণের এই মহিলাদের কাহিনি এবার জেনে নেওয়া যাক!
খড়ের তৈরি কুঁড়েঘরে চলছে মাশরুম উৎপাদন
জেলার বাঘা ০২ ব্লকের কদমহিয়া গ্রামের কিছু মহিলা দল গঠন করে মাশরুম উৎপাদনে নিযুক্ত রয়েছেন। এই মহিলারা বনের কাছে থাকেন, তাঁদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভাল নয়। স্বামীকে সাহায্য করার জন্য এবং পরিবারকে সহায়তা করার জন্য, তাঁরা উপার্জনের একটি উপায় তৈরি করেছিলেন যা এখন আর্থিকভাবে সচ্ছল ব্যক্তিরাও গ্রহণ করছেন। প্রথমে, মহিলারা স্থানীয় বাসিন্দা সুমন দেবীকে তাঁদের নেত্রী হিসেবে নির্বাচিত করেন এবং তারপর তাঁরা চাষের অংশ হিসেবে অব্যবহৃত জমিতে বাঁশ ও খড় দিয়ে তৈরি একটি কুঁড়েঘর তৈরি করেন। সরকারের উদ্যানপালন প্রকল্পের সুযোগ নিয়ে, মহিলারা খুব সস্তা দামে শত শত ব্যাগ মাশরুম কিনেছেন এবং তাঁদের তৈরি শেডেই সেগুলোর উৎপাদন শুরু করেছেন।
প্রতি কেজি ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়
সুমন বলেন যে তিনি মাশরুম উৎপাদনে যথাযথ প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এখন তাঁর কাছ থেকে শিখে গ্রামের মহিলারাও জানেন যে মাশরুম উৎপাদনের জন্য খড় ভর্তি ব্যাগগুলো কত তাপমাত্রায় রাখতে হয় এবং কত দিনের মধ্যে তাদের উৎপাদন শুরু হয়। নিয়মিত দেখভালেরর মাধ্যমে ব্যাগে মাশরুম উৎপাদন যখন সফলভাবে শুরু হয়, তখন তাঁরা স্থানীয় বাজারে প্রতি কেজি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা দরে বিক্রি শুরু করে। ভাল লাভের পর, মহিলারা সরকারি প্রকল্প ছেড়ে ব্যক্তিগতভাবে উৎপাদন কাজ শুরু করেন।
৪ মাসে ২ লক্ষ টাকার বেশি আয়
এই দলের একজন মহিলা শোভা দেবী বলেন যে তাঁর স্বামী আর এই পৃথিবীতে নেই। সন্তানরাও এমন কোনও কাজ করে না, যার কারণে পরিবারটি ভালভাবে চলতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে, যদি তিনি মাশরুম উৎপাদনের কাজে জড়িত না থাকতেন, তাহলে ঘর চালানো কঠিন হয়ে পড়ত। পরিসংখ্যান থেকে এটা স্পষ্ট বোঝা যায় যে, এক ব্যাগ থেকে প্রায় ৭ কেজি মাশরুম উৎপাদিত হয়। বাড়ি থেকে বিক্রি করলেও, ব্যবসায়ীরা প্রতি কেজি ১৫০ টাকার বেশি দাম দিয়ে তা কেনেন। এই হিসেব অনুযায়ী, শেডে রাখা ১৫০টি ব্যাগ থেকে প্রায় ১২০০ কেজি মাশরুম উৎপাদিত হয়, যা বিক্রি করে তাঁরা মাত্র তিন থেকে চার মাসে দুই লক্ষ টাকারও বেশি আয় করেন।
এমনকি পাউডারের দামও প্রতি কেজি ৪০০ টাকা
মহিলাদের মতে, এই কাজে বছরে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়, তবে তা বছরে ৭ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ের পথ খুলে দেয়। শুধু গোটা মাশরুমই নয়, মহিলারা এর গুঁড়োও ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। সহজে এই জিনিস পাওয়া কঠিন, তাই স্থানীয় হোটেল এবং রেস্তোরাঁ মালিকরা এটি প্রচুর পরিমাণে কিনছেন। কল্পনা করে নিতে অসুবিধা হয় না যে বনের কাছাকাছি বসবাসকারী এই গ্রামীণ মহিলারা কতটা সফল উদ্যোক্তা হয়ে উঠেছেন! সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে এই মহিলারা এখন ব্যবসা সম্প্রসারণ এবং আধুনিকীকরণের সিদ্ধান্তও নিয়েছেন।