আরও পড়ুন: কারা এডুকেশন লোনের জন্য আবেদন করতে পারবেন ?
দীর্ঘ দিন ধরে রিয়েল এস্টেটে লেনদেন একচেটিয়া ভাবে প্রোমোটারদের পক্ষে ছিল বলে অভিযোগ। তাই বাড়ি বা ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে ক্রেতাদের স্বার্থরক্ষার জন্য কেন্দ্রীয় আবাসন আইন বা রেরা চালু করে কেন্দ্রীয় সরকার। প্রকল্পের অর্থ খরচে নিশ্চয়তা এবং 'কার্পেট এরিয়া' ধরে ফ্ল্যাটের দাম জানার সুবিধা – রেরা-র অধীনে নিশ্চিত করা হয়েছে। এ বার দেখে নেওয়া যাক, রেরা আইনের সুবিধাগুলি কী কী।
advertisement
রেরা আইনের সুবিধা:
নিখুঁত কার্পেট এরিয়ার মাপ নির্ধারণ:
ফ্ল্যাট অথবা বাড়ি কেনার ক্ষেত্রে অন্যতম সমস্যা হল-- মাপ বোঝা। বিল্ট-আপ, সুপার বিল্ট-আপের মতো নানান মাপের কথা বলে থাকেন প্রোমোটাররা। তাঁর থেকে কতটা কার্পেট এরিয়া বাদ যাবে, তার কোনও স্পষ্ট হিসেব মেলে না। কিন্তু রেরা আইনে এই সব ক্ষেত্রে স্পষ্ট তথ্য নিশ্চিত করে।
প্রোমোটার বা আবাসন নির্মাতার দেউলিয়া হওয়ার ঝুঁকি কম:
বেশির ভাগ প্রোমোটার একই সময় একাধিক প্রকল্প হাতে নেয়। ফলে এক প্রকল্পের টাকা অন্য প্রকল্পে খরচ করতেন নির্দ্বিধায়। অবশ্য এর অনুমতিও ছিল। কিন্তু রেরা-র ক্ষেত্রে এমনটা চলবে না। প্রকল্পের ৭০ শতাংশ টাকা পৃথক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা দিতে হবে। ইঞ্জিনিয়র, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট বা আর্কিটেক্ট অনুমতি দিলে, সেই টাকা তুলতে পারবেন প্রোমোটার।
আরও পড়ুন: পোস্ট অফিসে রেকারিং ডিপোজিট করার আগে এই বিষয়গুলি অবশ্যই জেনে নিন...
অগ্রিম অর্থপ্রদান:
রেরা-র নিয়ম অনুযায়ী, প্রোমোটার বা আবাসন নির্মাতা অগ্রিম বা আবেদন ফি হিসেবে প্রকল্পের খরচের ১০ শতাংশের বেশি নিতে পারবেন না। ফলে ক্রেতার পকেটে চাপ পড়ে না।
ত্রুটি থাকলে মেরামত করতে হবে নির্মাতাকেই:
ফ্ল্যাট বা আবাসন নেওয়ার ৫ বছরের মধ্যে যদি গুণমানে সমস্যা দেখা যায় অথবা কাঠামোগত ত্রুটি থাকে, তবে ৩০ দিনের মধ্যে নির্মাতাকে তা মেরামত করে দিতে হবে। ক্রেতার থেকে একটা পয়সাও নেওয়া যাবে না।
সম পরিমাণ সুদ:
ক্রেতা যদি প্রোমোটারকে টাকা দিতে দেরি করেন, তা হলে যে অঙ্কের সুদ গুনতে হতো, সময়ে ফ্ল্যাটের অধিকার না-দিতে পারলে ক্রেতাদের সেই সুদ ক্ষতিপূরণ হিসেবে দিতে হয় প্রোমোটারদের। আগে প্রোমোটারদের ক্ষেত্রে এই সুদের পরিমাণ কম ছিল। নতুন রেরা আইনে ক্রেতা এবং প্রমোটারের সুদের হার সমান। চুক্তিতেই এই সুদের হার উল্লেখ থাকে। উল্লিখিত সময়ে ফ্ল্যাটের চাবি হাতে না-পেলে কী করণীয় তা-ও জানিয়ে দেওয়া হয় রেরা আইনে।
চুক্তি ভাঙার ক্ষেত্রে:
চুক্তিতে উল্লিখিত সময়ে ফ্ল্যাটের অধিকার না-পেলে, প্রোমোটারের কাছে রিফান্ড দাবি করতে পারেন ক্রেতা। রেরা আইনে তা দিতে বাধ্য থাকবেন প্রমোটার। এবং আইন না-মানলে, তাঁর লাইসেন্স বাতিলের সম্ভাবনা থাকে।
প্রোমোটার ও প্রকল্প সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য:
রেরা-তে রেজিস্টার করাতে হলে প্রকল্প সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য সরকারকে জানাতে বাধ্য থাকেন প্রোমোটাররা। বিল্ডিংয়ের ধরন, ব্লু প্রিন্ট, ম্যাপ, আর্থিক লেনদেন সম্পর্কে সমস্ত তথ্যের পাশাপাশি অতিরিক্ত তথ্যও জমা দিতে হয় তাঁদের। তাই সে সমস্ত যাচাই-বাছাই করে নেওয়ার সুযোগ থাকে ক্রেতার কাছে। তাই ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে প্রথমেই দেখে নিতে হবে যে, প্রকল্পটি রেরা অন্তর্ভুক্ত কি না। যে সব রাজ্যে রেরা বা আবাসন আইন রয়েছে, সেখানে প্রকল্প রেজিস্টার করাতে বাধ্য প্রোমোটারেরা। তার পরেও যদি কোনও প্রোমোটার রেরা-তে রেজিস্টার না-করান, তা হলে সেই প্রকল্পের ১০ শতাংশ জরিমানা হিসেবে দিতে হয়। না-হলে আইনি পথ খোলা থাকে। প্রতারণা অথবা গুরুতর অভিযোগ হলে প্রোমোটারের হাজতবাস পর্যন্ত হতে পারে।
অভিযোগের নিষ্পত্তি:
যদি কোনও ভাবে এটা প্রমাণ হয় যে, প্রোমোটার আইন মানেননি, তা হলে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের উপর অধিকার খর্ব হতে পারে তাঁর। পাশাপাশি তিন বছরের জেলও হতে পারে। শুধু তা-ই নয়, মোট প্রকল্পের খরচের ১০ শতাংশ জরিমানা দিতে হবে ওই প্রোমোটারকে।
আরও পড়ুন: গাড়ির লোন নিচ্ছেন ? দেখে নিন কী কী করবেন আর কী কী এড়িয়ে চলবেন ....
কোনও আবাসন প্রকল্পের আয়তন ৫০০ স্কোয়ার মিটারের বেশি হলেই তা রেরা-র আওতায় আসবে। সেই প্রকল্প শুরু অথবা বিজ্ঞাপন দেওয়ার আগে প্রোমোটার বা নির্মাতাকে রেরা আইনে রেজিস্ট্রার করাতে হবে। তাই কোনও প্রকল্পে ফ্ল্যাট কেনার আগে সেই প্রকল্প সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া খুবই দরকার। তা হলেই সেই প্রকল্প রেরা-র আওতায় আসছে কি না, তা স্পষ্ট হয়ে যাবে। ক্রেতার স্বার্থও সুরক্ষিত থাকবে।