কীভাবে এবং কখন বিনিয়োগ করতে হয় সেটাও বোঝা যায় ব্রহ্মচারিণীর অর্চনায়। পাওয়া যায় অনুপ্রেরণা। যাতে মায়ের কৃপা বর্ষিত হয়। সমৃদ্ধ হয় জীবন। নবরাত্রিতে মা দুর্গার সেবার মাধ্যমে তাঁর কৃপা লাভ করাই প্রত্যেক ভক্তের প্রধান লক্ষ্য।
আরও পড়ুন: পুজোয় পাতে-হাতে ছ্যাঁকা! হু-হু করে বাড়ছে সবজির দাম, আপাতত দাম কমার কোনও আশা নেই!
advertisement
কঠোর তপস্যাতেই মিলেছে শিব: কথিত আছে, মা ব্রহ্মচারিণী ভগবান শিবকে পাওয়ার জন্য হাজার বছর ধরে কঠোর তপস্যা করেছিলেন। খেতেন শুধু ফলমূল। প্রচণ্ড শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষাতেও অটল ছিলেন সাধনায়।
এটাকে শুধু গল্পকথা ভাবলে ভুল হবে। মা ব্রহ্মচারিণীর প্রতিটি পদক্ষেপের গভীর অর্থ রয়েছে। যা বিনিয়োগকারীদের অনুধাবন করা উচতৎ। প্রথম অংশে কীভাবে শুরু করতে হয় সেটাই মূল প্রতিপাদ্য। তারপর ব্রহ্মচারিণী রূপের মাধ্যমে আরও কিছু জিনিস বুঝতে হবে।
আরও পড়ুন: জালিয়াতি রুখতে কেন্দ্রের বড় সিদ্ধান্ত! এবার জন্ম-মৃত্যুর সম্পূর্ণ তথ্য আধারে
কিংবদন্তীতে বলা হয়েছে, লক্ষ্য অর্জনের জন্য (এখানে ভগবান শিব) দেবী ১০০০ বছর ধরে তপস্যা করেছিলেন। প্রতিকূল আবহাওয়া উপেক্ষা করে মগ্ন ছিলেন সাধনায়। এর অর্থ হল একজন বিনিয়োগকারীকে বিনিয়োগ শুরু করার পর ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করা উচিত। প্রতিকূল আবহাওয়া উপেক্ষা করার মানে বাজারের উত্থান-পতনে অবিচল থাকা। অভিজ্ঞ বিনিয়োগ উপদেষ্টার পরামর্শে বিনিয়োগ করে দীর্ঘ সময় ধরে রাখলে একটা সময়ের পর যে মিষ্টি ফল মিলবে সেটা বোঝা যায় এখান থেকেই।
মা ব্রহ্মচারিণীর প্রিয় রঙ ‘লাল’: স্টক মার্কেট বা মিউচুয়াল ফান্ড বা স্টক মার্কেটের সঙ্গে যুক্ত কোনও সংস্থায় বিনিয়োগ করলে ‘লাল’ রঙ দেখে ঘাবড়ে গেলে চলবে না। বরং এটাকেই প্রিয় রঙ বানিয়ে নিতে হবে। মিউচুয়াল ফান্ড বা স্টক মার্কেটের উদাহরণ দিয়ে বিষয়টা বুঝে নেওয়া যাক –
ধরা যাক কেউ মিউচুয়াল ফান্ডে এসআইপি বিনিয়োগ শুরু করেছেন। প্রতি মাসের নির্দিষ্ট তারিখে এক প্ল্যানে একটা নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। যখনই বাজারে পতন হবে তখন কম দামে ইউনিট মিলবে। মানে বিনিয়োগ পরিমাণ কম হবে। এভাবে যখন ১০-২০ বা ৩০ বছরে আসবে তখন এর রিটার্ন দুর্দান্ত হবে। যে সব বাজার বিশেষজ্ঞরা মিউচিয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করেন তাঁরা বাজারের পতনের জন্য ওঁত পেতে বসে থাকেন। বাজার উপরে গেলে ফের বিনিয়োগ করেন, যাতে যখন বাজার বাড়বে (এটাই বাজারের প্রকৃতি) তখন লাভ ওঠানো যায়।
এই বিষয়ে বিশ্বের সেরা বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ ওয়ারেন বাফেটেরও একই মত। তাঁর কথায়, ‘মানুষ যখন লোভী হয় তখন আপনি ভয় পান, আর মানুষ যখন ভয় পেতে শুরু করে তখন আপনি লোভী হন’। এর মানে হল, যখন বাজারের দর কমছে, লোক বিনিয়োগ তুলে নিচ্ছে, অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারী সেই সময়েই স্টকে বিনিয়োগ করবে। তাই লাল রঙকে ভয় নয়, সুযোগ হিসেবে দেখতে হবে। করোনার সময় বাজারের যা অবস্থা হয়েছিল সবাই দেখেছে। বাজারে ভয়ানক পতন শুরু হয়, কিন্তু একটা সময়ের পর ফের উঠতেও শুরু করে। পতনের সেই সময়টাকে যারা কাজে লাগিয়েছে আজ তারা মালামাল।
ধৈর্য এবং প্রজ্ঞা: বলা হয়, আজকের যুগে সেই সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যক্তি যার জ্ঞান আছে। আর জ্ঞানের সঙ্গে ধৈর্য যোগ হলে তা হবে রাজযোটক। বিশেষজ্ঞরা বলেন, কেউ যদি ১ কোটি টাকা সঞ্চয়ের লক্ষ্য নিয়ে বিনিয়োগ শুরু করেন তাহলে প্রতি মাসে তাঁকে ৩,০০০ টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। এভাবে টানা ৩০ বছর বিনিয়োগ চালিয়ে গেলে তিনি ১ কোটির বেশি টাকা রিটার্ন পাবেন। কিন্তু আশ্চর্যজনক হল, সেই ব্যক্তির বিনিয়োগের মোট পরিমাণ হবে ১০ লাখ টাকা। মিউচুয়াল ফান্ড হোক কিংবা স্টক, ৩০ বছর ধরে একটানা বিনিয়োগ ধরে রাখা যা তা কথা নয়। এর জন্য চাই ধৈর্য।
এরকম অনেক স্টক আছে, যেগুলো ১৫ থেকে ২০ বছরের ব্যবধানে ১ লাখ টাকাকে কোটি টাকায় রূপান্তর করেছে। তবে যে কোনও স্টকে নয়। তাই বিনিয়োগ করার আগে বিশেষজ্ঞ উপদেষ্টার পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এটাই হল জ্ঞান। মনে রাখতে হবে, মৌলিকভাবে ভাল এবং শক্তিশালী স্টকগুলিতে দীর্ঘ সময়ের জন্য বিনিয়োগ করাই সবচেয়ে লাভজনক। মিউচুয়াল ফান্ডে রিটার্ন তুলনামূলকভাবে কম, তবে এতে ঝুঁকিও খুব কম। ১ বছর, ৩ বছর, ৫ বছরের তহবিলে বিভিন্ন রিটার্ন কেমন হতে পারে সেটা আন্দাজ করতে হবে। এ জন্য দরকার বিপুল তথ্য।
মা ব্রহ্মচারিণীর প্রকৃতি থেকে শিক্ষা: এতক্ষণ যা বলা হল, সেটাকে যদি ২ লাইনে সারসংক্ষেপ করা হয় তাহলে কী হবে? সেটা হল, একটা লক্ষ্য নিয়ে বিনিয়োগ শুরু করা উচিত। বেশি রিটার্নের জন্য সময় দিতে হবে। শেয়ারবাজারে পতন হলে আতঙ্কিত হয়ে টাকা তোলার পরিবর্তে লোভী হয়ে আরও বেশি বিনিয়োগ করা উচিত। সঙ্গে শেয়ার বাজার-সহ বিনিয়োগ সংক্রান্ত সমস্ত খুঁটিনাটি বিষয়ে জ্ঞানার্জন জরুরি।