টাকা ডবল করার একটি সাধারণ সূত্র রয়েছে। একে বলে ‘থাম্ব রুল অফ ৭২’। কত দিনে টাকা দ্বিগুণ হতে পারে তার ধারণা পাওয়া যায়। এই ক্ষেত্রে সুদের হারকে ৭২ দিয়ে ভাগ করতে হয়। যেমন ধরা যাক কোনও স্কিমে ৬.৮ শতাংশ হারে সুদ পাওয়া যাচ্ছে। একে ৭২ দিয়ে ভাগ করলে অর্থাৎ ৭২/৬.৮ করলে আসলে ১০.৫৮। অর্থাৎ এই স্কিমে বিনিয়োগ করলে সাড়ে দশ বছরে টাকা দ্বিগুণ হয়ে যাবে। এখানে সেই রকমই কিছু স্কিমের সুলুক সন্ধান দেওয়া হল।
advertisement
আরও পড়ুন: Covid 19: অতিমারিতে বিনিয়োগে এই কয়েক ভুল করেছেন অনেকেই, এখনই সাবধান হন!
ট্যাক্স ফ্রি বন্ড: সাধারণত ট্যাক্স ফ্রি বন্ড নির্দিষ্ট সময়ে জারি করা হয়। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার ৪০ হাজার কোটি টাকার এই বন্ড ইস্যু করার জন্য কয়েকটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে অনুমতি দিয়েছে। ইতিমধ্যেই ট্যাক্স ফ্রি বন্ড হিসেবে পিএফসি এবং এনটিপিসি-র চাহিদা তুঙ্গে। মেয়াদের উপর নির্ভর করে এই বন্ডে সুদের হার বা ট্যাক্স অ্যাডজাস্টেড রিটার্ন থাকে ৮.২০ শতাংশ থেকে ৮.৫০ শতাংশ। এই বন্ডে বিনিয়োগ করলে ৮ থেকে ৯ বছরে টাকা দ্বিগুণ হতে পারে।
কিষাণ বিকাশ পত্র: ২০১২ সালে কিষাণ বিকাশ পত্র বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে ২০১৫-১৬ সালে ফের বাজারে আসে। যে কেউ কিষাণ বিকাশ পত্র কিনতে পারেন। নতুন নিয়ম অনুযায়ী ১ লাখ টাকার কেভিপি কিনতে হলে প্যান কার্ড থাকা বাধ্যতামূলক। বর্তমানে কিষাণ বিকাশ পত্রে ৮.৭০ শতাংশ হারে সুদ মিলছে। অর্থাৎ আনুমানিক ৮ বছরে টাকা দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আরও পড়ুন: ক্রেডিট কার্ডের ন্যূনতম বকেয়া পরিশোধ করে চলেছেন! মারাত্মক বিপদ অপেক্ষা করছে আপনার জন্য
কর্পোরেট ডিপোজিট বা নন কনভার্টেবল ডিবেঞ্চার: যে সব বিনিয়োগ মাধ্যমে টাকা দ্বিগুণ করা যায় তার মধ্যে কর্পোরেট ডিপোজিট অন্যতম। নন-ব্যাঙ্কিং আর্থিক সংস্থাগুলি এবং কর্পোরেটগুলি ব্যাঙ্কগুলির স্থায়ী আমানতের তুলনায় নন কনভার্টেবল ডিবেঞ্চারে সুদের হার অনেক বেশি। আইসিআরএ রেটিং এবং আমানতের মেয়াদের উপর নির্ভর করে ৯ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ হারে সুদ পাওয়া যায়। অর্থাৎ এই স্কিমে বিনিয়োগ করলে টাকা দ্বিগুণ হতে সময় লাগবে মাত্র ৮ বছর। বিভিন্ন কোম্পানি কর্পোরেট আমানত জারি করে। অন্যদিকে এনসিডি এনবিএফসি কোম্পানিগুলো জারি করে।
ন্যাশনাল সেভিংস সার্টিফিকেট: ন্যাশনাল সেভিংস সার্টিফিকেটকে বিনিয়োগের সবচেয়ে নিরাপদ মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। পোস্ট অফিস থেকে জারি করা হয়। এনএসসি-র ৫ এবং ১০ বছরের মেয়াদ রয়েছে। সুদের হারও নির্দিষ্ট, মেয়াদের উপর ভিত্তি করে গণনা করা হয়। ৫ বছর মেয়াদি ন্যাশনাল সেভিংস সার্টিফিকেটে বার্ষিক সুদের হার ৮.৫০ শতাংশ। ১০ বছর মেয়াদে ৮.৮০ শতাংশ হারে সুদ পাওয়া যায়। প্রসঙ্গত, এনএসসি-তে চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ মেলে। শুধু তাই নয়, আয়কর আইন ১৯৬১-র ৮০ সি ধারার অধীনে দেড় লাখ পর্যন্ত আয়কর ছাড় পাওয়া যায়। মেয়াদপূর্তিতে প্রাপ্ত পরিমাণের উপর কোনও টিডিএস কাটা হয় না। এনএসসি-তে বিনিয়োগের আরেকটি সুবিধা হল, কোনও ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিতে চাইলে এই সার্টিফিকেটকে জামানত হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
ব্যাঙ্কে ফিক্সড ডিপোজিট: ফিক্সড ডিপোজিট অন্যতম জনপ্রিয় বিনিয়োগ মাধ্যম। ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত স্থায়ী আমানতে বিমা সুবিধা দেয় ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। যে কোনও ব্যাঙ্কের ফিক্সড ডিপোজিটে টাকা দ্বিগুণ করতে ৮ থেকে ৯ বছর সময় লাগতে পারে।
পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড: পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড বা পিপিএফ হল সরকার প্রদত্ত আরেকটি জনপ্রিয় এবং নির্ভরযোগ্য বিনিয়োগ প্রকল্প। বার্ষিক ন্যূনতম ৫০০ টাকা দিয়ে পিপিএফ অ্যাকাউন্ট খোলা যায়। এই স্কিমে লক ইন পিরিয়ড ১৫ বছর। যে কোনও চাকরিজীবী, পেশাদার কিংবা সরকারি কর্মচারি এই প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে পারেন। প্রতি বছর ৮.৭৫ শতাংশ হারে সুদ মেলে। লক ইন পিরিয়ডের শেষে সুদ সহ রিটার্ন মেলে। এই প্রকল্পে সাধারণত ৮ বছরেই টাকা দ্বিগুণ হয়ে যায়।
মিউচুয়াল ফান্ড: ইএলএসএস (ইক্যুইটি লিঙ্কড সেভিংস স্কিম), ডেট ওরিয়েন্টেড, ইক্যুইটি ওরিয়েন্টেড, ব্যালেন্সড বা হাইব্রিড মিউচুয়াল ফান্ডের মতো বেশ কয়েকটি মিউচুয়াল ফান্ড রয়েছে। বাজারে সঙ্গে যুক্ত থাকায় ঝুঁকি রয়েছে। তবে অন্যান্য বিনিয়োগ তহবিলের তুলনায় রিটার্নও বেশি। দীর্ঘমেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডে ১২ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ হারে সুদ পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অর্থাৎ টাকা দ্বিগুণ করতে ৫ থেকে ৬ বছর সময় লাগে।