তাহলে এই পরিস্থিতি থেকে বেরোনোর উপায় কী? এর উত্তর- গোল্ড লোন বা সম্পত্তির বিপরীতে ঋণ। এখন অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন, হঠাৎ টাকার দরকার পড়লে এই দুটোর মধ্যে কোনটা বেশি লাভজনক হতে পারে? তারই উত্তর দেওয়া হল এই নিবন্ধে।
গোল্ড লোন: সোনা বন্ধক রেখে যে ঋণ পাওয়া যায় তাই গোল্ড লোন। যে সোনা বন্ধক রাখা হয়েছে তা জামানত হিসেবে কাজ করে।ৃ এবং তার বিপরীতে ঋণ দেওয়া হয়। বন্ধক রাখা সোনার প্রতি গ্রাম হারের উপর ভিত্তি করে ঋণের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়। ২০টিরও বেশি শীর্ষস্থানীয় ব্যাঙ্ক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান আকর্ষণীয় সুদে গোল্ড লোন দেয়।
advertisement
আরও পড়ুন: টাকা লেনদেনে ইউপিআই ব্যবহার করেন? এই ভুলগুলি করছেন না তো? জেনে নিন, নয়তো লোকসান!
লোন এগেইনস্ট প্রপার্টি: নাম থেকেই বোঝা যাচ্ছে এটা সম্পত্তির বিপরীতে ঋণ। সম্পত্তির মূল্যের পরিবর্তে এই ঋণ দেওয়া হয়। যার অর্থ ঋণ পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত সম্পত্তির কাগজপত্র এবং আইনি মালিকানা ব্যাঙ্কের কাছে থাকে। যদি অনেক টাকার প্রয়োজন হয় এবং ঋণগ্রহীতার বন্ধক রাখার মতো সম্পত্তি থাকে তাহলে পার্সোনাল লোন বা গোল্ড লোনের চেয়ে লোন এগেইনস্ট প্রপার্টি ভাল বিকল্প। এই ঋণ পাওয়া খুব একটা শক্তও নয়। জরুরি অর্থের প্রয়োজন মেটাতে কোনটা সবচেয়ে ভাল কাজ করতে পারে তা বোঝানোর জন্য গোল্ড লোন এবং লোন এগেইনস্ট প্রপার্টি, এই দুটি সুরক্ষিত ঋণের তুল্যমূল্য বিচার করা হল।
জামানত: গোল্ড লোন বা লোন এগেইনস্ট প্রপার্টিকে সুরক্ষিত ঋণ বলা হয় কারণ কোনও সম্পদের বিপরীতে এই ঋণ দেওয়া হয়। সেই সম্পদ জামানত হিসেবে কাজ করে। যা ঋণদাতারা ঋণের পরিমাণ (সুদ এবং অন্যান্য প্রযোজ্য চার্জ সহ) সম্পূর্ণ পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত নিজেদের কাছে রেখে দেয়। যদি কোনও কারণে ঋণগ্রহীতা ঋণ পরিশোধ করতে না পারেন তখন ঋণের পরিমাণ পুনরুদ্ধার করতে সেই সম্পত্তি কাজে লাগানো হয়। সোজা কথায়, ঋণদাতা সেই সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেন। গোল্ড লোন এবং এবং লোন এগেইনস্ট প্রপার্টি সুরক্ষিত ঋণ হওয়ায় সেগুলো পেতে ঋণগ্রহীতাকে ঋণদাতার কাছে জামানত হিসেবে কোনও সম্পদ বন্ধক রাখতে হয়। গোল্ড লোনের ক্ষেত্রে সোনার গয়না, সোনার কয়েন বা সোনার অন্যান্য জিনিসপত্র জমানাত এবং লোন এগেইনস্ট প্রপার্টির ক্ষেত্রে বাড়ি বা দোকানের দলিল বন্ধক রাখতে হয়।
আরও পড়ুন - ব্রাইটনেস ভলিউম ফুল রেখে স্মার্টফোন দেখেন? অজান্তেই বিস্ফোরণের সম্ভাবনা ডেকে আনছেন
সুদের হার: ঋণ নেওয়ার কথা উঠলে প্রথমেই যেটা মাথায় আসে সেটা সুদের হার। মোট ঋণের সঙ্গে সুদের টাকাও শুধতে হয়। গোল্ড লোনে সুদের হার স্থির। লোন এগেইনস্ট প্রপার্টিতে ফ্লোটিং বা স্থির, দুই রকম সুদ হতে পারে। গোল্ড লোনে সুদের হার ৯.২৪ শতাংশ থেকে ২৬ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। অন্য দিকে, লোন এগেইনস্ট প্রপার্টিতে স্থির সুদের হার সাধারণত ৯.৬ শতাংশ থেকে ১১.৫ শতাংশ পর্যন্ত পরিবর্তিত হতে পারে।
ঋণ পাওয়ার জন্য যোগ্যতার মানদণ্ড: ঋণ পেতে চাইলে ঋণ পাওয়ার যোগ্য কিনা সেটাও দেখা হয়। গোল্ড লোনের ক্ষেত্রে ঋণগ্রহীতার পেশা, ক্রেডিট স্কোর ইত্যাদি নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামায় না। তাই যে কেউ খুব সহজেই গোল্ড লোন পেতে পারেন। বিশেষ করে হঠাৎ টাকার দরকার পড়লে তো কথাই নেই। ১৮ থেকে ৭৫ বছরের বয়সের মধ্যে যে কেউ গোল্ড লোন পাওয়ার যোগ্য। শুধু ঋণ পেতে ঋণদাতার প্রয়োজন অনুযায়ী সোনার গয়না, কয়েন বা অন্যান্য সামগ্রী বন্ধক রাখতে হবে। অন্য দিকে, লোন এগেইনস্ট প্রপার্টিতে যোগ্যতার মানদণ্ড গোল্ড লোনের মতো সহজ নয়। ঋণের আবেদন মঞ্জুর করার আগে ঋণগ্রহীতার বয়স, আয়, সম্পত্তির মূল্য, বিদ্যমান বাধ্যবাধকতা (যদি থাকে), ব্যবসার স্থিতিশীলতা বা ধারাবাহিকতা এবং ক্রেডিট ইতিহাস চেক করে দেখে নেন ঋণদাতা।
ঋণ পেতে কতদিন লাগে: গোল্ড লোন পেতে বেশি কাঠখড় পোড়াতে হয় না। দ্রুত এবং সহজে পাওয়া যায়। যেহেতু খুব বেশি ঝঞ্ঝাট নেই, নথিপত্র লাগে না বললেই চলে তাই সোনা বন্ধক রেখে ঋণ পেতে বড়জোড় দু-একদিন সময় লাগে। কিছু ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক ঋণের মতো আবেদনের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই গোল্ড লোন পাওয়া যায়। জরুরি অবস্থায় নগদ প্রয়োজন মেটানোর জন্য তাই গোল্ড লোন আদর্শ। কিন্তু লোন এগেইনস্ট প্রপার্টিতে হাতে টাকা আসতে কিছুটা সময় লাগে। গোল্ড লোনের মতো এটা অত দ্রুত এবং সহজে পাওয়া যায় না। সম্পত্তি সম্পর্কিত সমস্ত নথি যাচাই করতে ঋণদাতার সময় লাগে। শুধু তাই নয়, জামানত রাখা সম্পত্তির যদি একাধিক মালিক হয় তাহলে ঋণ পেতে প্রত্যেকের কাছ থেকে এনওসি বা নো অবজেকশন সার্টিফিকেটও জমা দিতে হয়। এর ফলে ঋণ পেতে আরও সময় লাগে।
প্রসেসিং ফি: কোনও ঋণ পেতে চাইলে ঋণদাতারা একটা চার্জ করে, সেটাই প্রসেসিং ফি। গোল্ড লোনের জন্য ঋণদাতারা মোট ঋণের পরিমাণের উপর ২ শতাংশ পর্যন্ত প্রসেসিং ফি আরোপ করতে পারে। তবে মণপ্পুরম ফিনান্স লিমিটেডের মতো কিছু সংস্থা আছে যারা কোনও রকম প্রসেসিং ফি নেয় না। যাই হোক, লোন এগেইনস্ট প্রপার্টির প্রসেসিং ফি-ও গোল্ড লোনের মতোই অর্থাৎ ২ শতাংশ। তবে ঋণদাতার নীতি এবং শর্তাবলীর উপর নির্ভর করে প্রসেসিং ফি বাড়তে বা কমতে পারে।
পরিশোধের মেয়াদ: ঋণদাতার কাছ থেকে ধার করা টাকা যে সময়ের মধ্যে শোধ করতে হবে সেটাই ঋণ পরিশোধের মেয়াদ। ঋন পরিশোধের সময়কাল যত দীর্ঘ বা বেশি হবে ইএমআই তত কম হবে। ফলে ধার করা টাকা ফেরত দেওয়াও ততটাই সহজ হবে। কিন্তু এর একটা অসুবিধাও আছে। দীর্ঘ পরিশোধের মেয়াদ বেছে নিলে সুদও বেশি শোধ করতে হবে। গোল্ড লোন এক বছরেই শোধ করা যায়। অন্য দিকে, লোন এগেইনস্ট প্রপার্টি শোধের সময়কাল সাধারণত ২০ বছর পর্যন্ত হয়। যেহেতু কম সময়ে গোল্ড লোন পরিশোধ করতে হয় তাই এর ইএমআই অনেক বেশি থাকে। তাই যাঁদের অল্প অর্থের প্রয়োজন তাঁদেরই গোল্ড লোন নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। অনেক টাকার প্রয়োজন হলে এলএপি বা লোন এগেইনস্ট প্রপার্টি নেওয়াই ভাল। এতে পরিশোধের মেয়াদ ছোট হওয়ায় অল্প ইএমআই দিতে হবে। এবং ধার করা অর্থ ফেরত দেওয়াও সহজ হবে।
নথিপত্র: গোল্ড লোনে নামমাত্র নথিপত্র লাগে। তাই আবেদনের সময় বেশি কাগজপত্র লাগে না। ঋণগ্রহীতাদের যা জমা দিতে হয়, তার মধ্যে রয়েছে স্বাক্ষরিত ঋণের আবেদনপত্র, দুটি পাসপোর্ট সাইজের ছবি এবং পরিচয় ও বসবাসের প্রমাণের একটি কপি। লোন এগেইনস্ট প্রপার্টিতে আবেদনের সময় অনেক কাগজপত্র লাগে। এর মধ্যে আবেদনকারীদের স্বাক্ষরিত ঋণের আবেদনপত্র, পরিচয়ের প্রমাণ, আয়ের প্রমাণ এবং বসবাসের প্রমাণ অন্যতম। তবে তালিকা এখানেই শেষ নয়।
পরিশেষে: গোল্ড লোন বা লোন এগেইনস্ট প্রপার্টি কারও জন্য উপকারী হবে কি না তা তাঁর প্রয়োজনের উপর নির্ভর করে। সোনা এমনই একটা সম্পদ যা প্রত্যেক পরিবারেই অল্পবিস্তর থাকে। সোনা যেহেতু সহজেই ভাঙানো যায় তাই এঁকে অনেকে ‘লিকুইড ক্যাশ’-ও বলেন। বাজারে এর মূল্যও বেশি। যেহেতু গোল্ড লোন পরিশোধের জন্য কম সময় পাওয়া যায় তাই, অল্প টাকার প্রয়োজন হলে এই ঋণ নেওয়া ভাল। লোন এগেইনস্ট প্রপার্টিতে সুদের হার খুব বেশি হয় না। পরিশোধের জন্য অনেকটা সময়ও পাওয়া যায়। তাই বেশি টাকার দরকার হলে এলএপি উপযুক্ত। তবে বিশেষজ্ঞরা বলেন, হঠাৎ টাকার প্রয়োজন হলে গোল্ড লোনই প্রথম পছন্দ হওয়া উচিত। কারণ এতে ন্যূনতম কাগজপত্র লাগে, ঋণ পেতেও বিশেষ ঝঞ্ঝাট পোহাতে হয় না এবং দ্রুত টাকা পাওয়া যায়।