সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের আয় বাড়তে বা কমতে পারে, কিন্তু সঞ্চয়ের অভ্যাস কখনই ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়। আসলে, প্রতিটি বয়সে আর্থিক চাহিদা এবং দায়িত্ব পরিবর্তিত হয়, তাই সঞ্চয়ের পদ্ধতিও সেই অনুযায়ী প্রাধান্য পাওয়া উচিত। দশকভিত্তিক একটি বিশেষ হিসেবে মাধ্যমে জেনে নেওয়া যাক যে ২০ বছর বয়স থেকে ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত কীভাবে সঞ্চয় এবং বিনিয়োগ করা উচিত। কেউ যদি এই নিয়ম সঠিক উপায়ে গ্রহণ করেন এবং কাজে লাগান, তবেই ভবিষ্যতে আর্থিকভাবে শক্তিশালী হওয়া সম্ভব হবে।
advertisement
আরও পড়ুন: সোনার দামে কি সত্যিই বড়সড় পতন আসবে? পরিসংখ্যান কী বলছে জেনে নিন
২০ বছর বয়স: ছোট হলেও শুরু করা দরকার, সঞ্চয় এখনই শুরু করতে হবে
যত তাড়াতাড়ি সঞ্চয় শুরু করা সম্ভব হবে, ততই ভাল। বিনিয়োগের পরিমাণ ছোট হতে পারে, কিন্তু অভ্যাসটিই এক্ষেত্রে আসল কথা। কেউ যদি প্রতি মাসে মাত্র ৫০০ টাকার SIP দিয়েও শুরু করেন, তাহলেও চক্রবৃদ্ধির জাদু ভবিষ্যতে কোটি কোটি টাকার তহবিল গড়ে দিতে পারে। অতএব, এখন থেকেই সঞ্চয় এবং বিনিয়োগের অভ্যাস গড়ে তোলা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ- এটিই আর্থিক ভিত্তির প্রথম ইট।
৩০ বছর বয়স: বার্ষিক বেতনের সমপরিমাণ সঞ্চয় করার লক্ষ্য রাখতে হবে
৩০ বছর বয়সের মধ্যে আর্থিক পরিকল্পনা আরও একটু শক্তিশালী হওয়া উচিত। তাই এমন পরিস্থিতিতে মোট সঞ্চয় কমপক্ষে বার্ষিক বেতনের সমান হওয়া উচিত। এর জন্য, EPF (কর্মচারী ভবিষ্যদ্বাণী তহবিল), PPF (পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড) এবং মিউচুয়াল ফান্ড SIP-এর মতো নির্ভরযোগ্য বিনিয়োগ বিকল্পগুলির সাহায্য নিতে হবে। এই লক্ষ্য আর্থিক নিরাপত্তার একটি শক্তিশালী ভিত্তি প্রদান করবে এবং ভবিষ্যতের বড় প্রয়োজনের জন্য প্রস্তুত রাখবে। আচমকা খরচের কারণ উপস্থিত হলে তা গায়ে লাগবে না!
আরও পড়ুন: পোস্ট অফিসের দুর্দান্ত স্কিম ! মাত্র ৪০০ টাকা সেভিংস করে পেয়ে যাবেন ৭০ লাখ টাকা…
৪০ বছর বয়স: আয়ের ২৫-৩০% সঞ্চয় করার অভ্যাস করতে হবে
যদিও ৪০ বছর বয়স সাধারণত সবচেয়ে বেশি উপার্জন করার বয়স, এই সময়ে সকলের জন্য সঞ্চয়ের উপর মনোযোগ দেওয়াও সমান গুরুত্বপূর্ণ। তাই আয়ের কমপক্ষে ২৫-৩০% সঞ্চয় করার চেষ্টা করতে হবে। এই সময়ে এসে সন্তানের উচ্চশিক্ষা, অবসর পরিকল্পনা এবং স্বাস্থ্যগত জরুরি অবস্থার মতো ব্যয়ের জন্য একটি পরিকল্পিত বিনিয়োগ করা উচিত। এর পাশাপাশি, যদি কোনও ঋণ থাকে, তবে তা সময়মতো পরিশোধ করা গুরুত্বপূর্ণ, যাতে ভবিষ্যতে আর্থিক চাপ এড়ানো যায়।
৫০ বছর বয়স: বেতনের ৪ থেকে ৬ গুণ শক্তিশালী এক তহবিল তৈরি করতে হবে
৫০ বছর বয়সের মধ্যে আমাদের সকলেরই অবসর তহবিলের অবস্থা গুরুত্ব সহকারে গণনা করা উচিত। এই সময়ে লক্ষ্যটি স্পষ্ট হওয়া উচিত যে বার্ষিক বেতনের কমপক্ষে ৪ থেকে ৬ গুণ সঞ্চয় করা হয়েছে। যেহেতু অবসর খুব বেশি দূরে নয়, আর্থিক পরিকল্পনায় স্পষ্টতা থাকা গুরুত্বপূর্ণ। এর পাশাপাশি, যদি কোনও ঋণ বা অন্য কোনও দায় থাকে, তবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তা নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করতে হবে যাতে অবসরের পরে কোনও আর্থিক বোঝা না থাকে।
৬০ বছর বয়স: একটি নিরাপদ এবং নিয়মিত আয়ের পরিকল্পনা করতে হবে
৬০ বছর বয়সে অগ্রাধিকার হওয়া উচিত মূলধন সুরক্ষা এবং একটি স্থিতিশীল মাসিক আয়। তাই, ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ থেকে দূরে সরে গিয়ে সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিম (SCSS), অ্যানুইটি প্ল্যান বা সিস্টেম্যাটিক উইথড্রয়াল প্ল্যানের (SWP) মতো নিরাপদ বিকল্পগুলি গ্রহণ করা ভাল। এগুলো প্রতি মাসে নিয়মিত আয় পেতে সাহায্য করবে। এর পাশাপাশি, এই বয়সে ক্রমবর্ধমান চিকিৎসা ব্যয়ের কথা মাথায় রেখে একটি শক্তিশালী স্বাস্থ্য বিমা থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যাতে চিন্তা ছাড়াই অবসর উপভোগ করতে পারা যায়।
এই বিষয়গুলোতে মনোযোগ দিতেই হবে
তাই কেউ যদি জীবনের প্রতি দশকে একটু বিবেচনা এবং শৃঙ্খলার সঙ্গে সঞ্চয় করে যান, তাহলে জীবনের বড় লক্ষ্যগুলো সহজে অর্জন করা তো সম্ভব হবেই, একই সঙ্গে অবসর গ্রহণের পরেও কোনও আর্থিক বোঝা ছাড়াই একটি স্বাধীন এবং স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন যাপন করা যাবে। সঠিক সময়ে ছোট আর্থিক প্রস্তুতিই ভবিষ্যতে বড় পরিবর্তন আনতে পারে, একথা ভুললে চলবে না।