গত বছর থেকেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে অস্থির বিশ্ব। মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া রেপো রেট ক্রমশ বাড়িয়েই চলেছে। কিন্তু তারপরেও নাগালে আসছে না মুদ্রাস্ফীতি। বরং জিনিসপত্রের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এই সব কারণে ২০২২ সালে ডেট অ্যাসেটে বিনিয়োগ করেও তেমনভাবে লাভের মুখ দেখেনি বিনিয়োগকারীরা। অন্যদিকে ২০২০ এবং ২০২১ সালে করোনা মহামারীর সঙ্গে লড়াই করেছে গোটা বিশ্ব। টাকা লকডাউনের জেরে অর্থনীতি থমকে যায়, স্থবির হয়ে পড়ে রিটার্নও।
advertisement
‘মানুষ বুঝতে পারছে আমরা হার (হাইকিং) চক্রের শীর্ষে পৌঁছে গিয়েছি’, বলেছেন ওয়েলথ ম্যানেজমেন্ট সংস্থা নুভামা প্রাইভেটের প্রধান অলোক সায়গল। তাঁর ব্যবস্থাপনায় ১৪.৫৮ বিলিয়ন ডলারের(১.২ লাখ কোটি টাকা) সম্পদ রয়েছে। অলোকের কথায়, ‘প্রচুর ক্লায়েন্ট আমাদের কাছে জানতে চাইছেন, বর্তমানে কোথায় বিনিয়োগ করা উচিৎ। মোটা রিটার্নের জন্য বিনিয়োগের কোন ক্ষেত্র উপযুক্ত, এটাই মূল প্রশ্ন’।
পরিসংখ্যান বলছে, ১০ বছরে সরকারি বন্ডের ফলন ২০২২ সালে ২৭ বেসিস পয়েন্ট বেড়েছে। সেখানে এএএ রেট বেঞ্চমার্কের শর্ট-মাঝারি কর্পোরেট বন্ডের ফলন বেড়েছে ১৫০ থেকে ২০০ বেসিস পয়েন্ট। গত দুই বছরে কোম্পানির ভ্যালুয়েশন বেড়ে যাওয়ায় ইক্যুইটিতে বিনিয়োগের সুযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে ডেট মার্কেটে তহবিল প্রবাহ বেড়েছে। গত তিন বছরে ভারতে ইক্যুইটি মার্কেটে বিনিয়োগ করে লাভের মুখ দেখছেন বিনিয়োগকারীরা। কম হার এবং উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির মধ্যেও আশার আলো দেখা যাচ্ছে।
ইক্যুইটি থেকে স্থির আয়: জুলিয়াস বেয়ার ইন্ডিয়ার পরিচালক এবং সিনিয়র উপদেষ্টা উন্মেষ কুলকার্নি বলছেন, ‘২০২১ সালে ডেট মিউচুয়াল ফান্ডের গ্রস ইল্ড-টু-ম্যাচুরিটি ৬.৭৫ থেকে ৭.৭৫ শতাংশ বনাম ৪.৫ শতাংশ থেকে ৫.৫ শতাংশ পর্যন্ত চলে গেছে, যা মধ্যমেয়াদি বিনিয়োগকারীদের জন্য ‘খুব ভাল’ এন্ট্রি পয়েন্ট’। বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতির হার ক্রমশ বাড়ছে। আর তাকে ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের একাধিক ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ অর্থনীতিকে মন্দার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে ২০২৩ সাল ইক্যুইটি বাজারের জন্য চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। জিওজিট ফিনান্সিয়াল সার্ভিসের চিফ ইনভেস্টমেন্ট স্ট্র্যাটেজিস্ট ভি কে বিজয়কুমারের কথায়, ‘বৈশ্বিক অর্থনীতির দুর্বল প্রবৃদ্ধি ইক্যুইটি বাজারের জন্য মোটেই ভাল খবর নয়’। তবে বিজয়কুমার আশা করছেন, সরকারি এবং কর্পোরেট ঋণ সহ স্থায়ী আয়ের সম্পদগুলি এই বছর ৮ শতাংশের বেশি রিটার্ন দেবে। যা ২০২২ সালে ৬ শতাংশের কম ছিল। নুভামার সায়গল বলছেন, বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকি নিতে হবে। তাঁরা যদি পোর্টফোলিও দীর্ঘ সময় ধরে রাখতে পারেন, তাহলে রিটার্ন ১০ শতাংশের উপরে যেতে পারে।
সম্ভাব্য হেডওয়াইন্ড: ২০২৩ সাল স্থির আয় বা ফিক্সড ইনকামের জন্য অপেক্ষাকৃত ভাল বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে হ্যাঁ, অনিশ্চয়তা যে একদম নেই তা নয়। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক রেট কমাতে পারে। তবে জুলিয়াস বেয়ারের উন্মেষ কুলকার্নির মতে, গোটা বিশ্বের টালমাটাল পরিস্থিতিই এই সময়ের সবচেয়ে বড় ঝুঁকি। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার মাথাব্যথাও এটাই। এই সুদের হারের ছোট পার্থক্যও ভারতীয় ঋণের বাজারে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবি সোমবার জানিয়েছে, ব্যাঙ্ক এবং পেমেন্ট অ্যাগ্রিগেটরদের অর্থপ্রদানের পদ্ধতি স্টক এক্সচেঞ্জের প্ল্যাটফর্মের ঋণ সিকিউরিটিজ লেনদেন নিষ্পত্তির জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। বর্তমানে স্টক এক্সচেঞ্জগুলি আর এফকিউ প্ল্যাটফর্মে তালিকাভুক্ত কর্পোরেট বন্ড, বাণিজ্যিক কাগজ, এবং জামানতকৃত ঋণের উপকরণগুলির ক্ষেত্রে সম্পাদিত বাণিজ্যের নিষ্পত্তির একটি মোড হিসাবে আরটিজিএস চ্যানেল ব্যবহার করছে। আরএফকিউ প্ল্যাটফর্মে হওয়া বাণিজ্যে ব্যাঙ্ক এবং পেমেন্ট এগ্রিগেটরদের দেওয়া আরটিজিএস ছাড়া অর্থপ্রদানের অন্য প্রক্রিয়া ব্যবহার করা যেতে পারে কি না জানতে চাওয়ায় এই উত্তর দিয়েছে সেবি।
নভেম্বর মাসে অনলাইন বন্ড সংস্থাগুলির জন্য নতুন কাঠামো তৈরি করে দেয় সেবি। সেখানে জানানো হয়, অনলাইন বন্ড প্ল্যাটফর্মে তালিকাভুক্ত ঋণ সিকিউরিটিজ সংক্রান্ত সমস্ত বাধ্যতামূলকভাবে স্টক এক্সচেঞ্জের আরএফকিউ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে রুট করা হবে এবং সংশ্লিষ্ট ক্লিয়ারিং কর্পোরেশনের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হবে। এছাড়াও, নিয়ন্ত্রক তালিকাভুক্ত ঋণ নিরাপত্তা এবং স্টক এক্সচেঞ্জ বা ওটিসি ভিত্তিতে ট্রেড করা প্রাইভেট প্লেসমেন্ট ভিত্তিতে ইস্যু করা নন-কনভার্টেবল রিডিমেবল প্রেফারেন্স শেয়ারের অভিহিত মূল্য ১০ লাখ থেকে ১ লাখ টাকায় পরিবর্তন করেছে।