আসলে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে আজকাল মুড়ি-মুড়কির মতো বিভিন্ন লোন অ্যাপ (Loan apps) দেখা যায়। যারা দাবি করে, মাত্র কয়েকটা ক্লিকে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ঋণ পেয়ে যাবেন গ্রাহকরা। শুনে বিষয়টা যতটা সহজ মনে হয়, আদতে কিন্তু তা হয় না। ওই লোন অ্যাপের ফাঁদে পা দিলেই শুরু হয় আসল সমস্যাটা।
আরও পড়ুন: গাড়ির পিছনের সিটে বসলেও সিটবেল্ট লাগাতে হবে? নিয়ম ভাঙলে কত টাকা জরিমানা
advertisement
প্রসঙ্গত করোনা অতিমারীতে দেশ জুড়ে কর্মসংস্থান খুইয়েছে বহু মানুষ। পরিসংখ্যান বলছে, মহামারীর কালে দেশ জুড়ে প্রায় ৭ লক্ষেরও বেশি মানুষ আত্মহত্যা করেছে। আর এর মধ্যে প্রায় ২৫২০০ মানুষ চাকরি হারিয়ে অবসাদগ্রস্ত হয়ে ঋণের ফাঁদে পা-দিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছে। ফলে আত্মহননের পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছে তারা। আর গ্রাহকরা যাতে ঋণের ফাঁদে জড়িয়ে না-পড়েন, সেই বিষয়েই সতর্ক করছেন এবং পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
কী-ভাবে লোন অ্যাপের ফাঁদে ফেঁসে যায় মানুষ?
আসলে লোন অ্যাপের মাধ্যমে সহজেই ঋণ পাওয়া যায়। তার ফলে মানুষ বারবার ছোট ছোট অঙ্কের ঋণ নিতে থাকে। এ-বার হয়তো সময়ে ইএমআই দিয়ে উঠতে পারছেন না। ফলে বাড়তে থাকে ঋণের বোঝা। আর এর পরেই শুরু হয় রিকভারির গল্পটা। এ-ক্ষেত্রে ঋণগ্রহীতাকে তো বটেই, সেই সঙ্গে তাঁর পরিবারের লোক, পরিচিত এবং বন্ধুবান্ধবদের ফোন করে ঋণদাতারা। এ-ভাবে তারা জানায় যে, ঋণগ্রহীতা তাদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করতে পারছেন না। ফলে বোঝাই যাচ্ছে যে, এ-ভাবে ঋণ নিলে সামাজিক দায়টাও কাঁধে চাপে।
আরও পড়ুন: বাড়ল সোনার দাম! গয়না কিনতে যাওয়ার আগে অবশ্যই চেক করে নিন লেটেস্ট রেট
প্রথমেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, কেন ঋণ নেওয়া হচ্ছে:
ব্যাঙ্কিং সংক্রান্ত বিষয়ের বিশেষজ্ঞ এবং বিনিয়োগ উপদেষ্টা মনোজ জৈন-এর পরামর্শ, যিনি লোন নিতে চাইছেন, তাঁকে প্রথমে নিজের চাহিদাটা বুঝতে হবে। অর্থাৎ গ্রাহকের আদৌ ঋণের প্রয়োজন রয়েছে কি না, তা আগে বিবেচনা করতে হবে। উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক, বাড়ি তৈরি বা বাড়ি কেনা অথবা শিক্ষার জন্য ঋণ নেওয়ার সিদ্ধান্ত একেবারেই ঠিক। কারণ বাড়ি তৈরি বা কেনার মাধ্যমে সম্পত্তি বাড়বে। আর শিক্ষা লোনের মাধ্যমে পরবর্তী কালে অর্থ উপার্জনের পথ প্রশস্ত হবে।
তবে অনেকেই সঙ্গীকে উপহার দেওয়ার জন্য কিংবা মোবাইল ফোন কেনার জন্য ঋণ নিয়ে থাকেন। আবার অনেকেই বেড়াতে যাওয়ার জন্যও ঋণ নেন। আর বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, এই ধরনের ক্ষেত্রে ঋণ নেওয়া রীতিমতো অবিবেচকের মতো কাজ করা হবে। অর্থাৎ এ-সব ক্ষেত্রে ঋণ নেওয়া নিষ্প্রয়োজন।
ঋণের বোঝা থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়:
ঋণগ্রহীতা যদি গৃহ ঋণ বা হোম লোন নিতে চান, তা-হলে সে-ক্ষেত্রে মাথায় রাখতে হবে যে, ঋণের পরিমাণ যেন বাড়ির মূল্যের ৫০ শতাংশের বেশি না-হয়ে যায়।
আবার ঋণ গ্রহীতার হোম লোনের ইএমআই-এর পরিমাণ যেন তাঁর মাসিক বেতনের ৪০ শতাংশের বেশি না-হয়ে যায়, সে-দিকটাও লক্ষ্য রাখতে হবে।
আবার গাড়ি ঋণ বা কার লোনের ক্ষেত্রে ইএমআই যেন ঋণগ্রহীতার মাসিক আয়ের ৫ শতাংশের বেশি না-হয়।
ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে গ্রাহকের মাসিক খরচ মোট সীমার ১০ থেকে ১২ শতাংশের বেশি কখনওই হওয়া উচিত নয়। আর ক্রেডিট কার্ডের বিলও নির্ধারিত সময়ের আগেই সম্পূর্ণ জমা দিতে হবে।
শিক্ষা ঋণ বা এডুকেশন লোন নেওয়ার সিদ্ধান্ত সবশেষে নেওয়া উচিত। কারণ যখন আর গ্রাহকের সামনে কোনও বিকল্প রাস্তা খোলা থাকে না, তখনই একমাত্র শিক্ষা ঋণের পথে হাঁটতে হবে।