রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ২০২২-এর ১ নভেম্বর থেকে পাইকারি লেনদেনের জন্য ভারতের নিজস্ব ডিজিটাল মুদ্রা – ডিজিটাল রুপির – পাইলট প্রকল্প শুরু করেছে। ২০২২ সালের ৩১ অক্টোবর জারি করা এক বিবৃতিতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া জানিয়েছে, ‘সরকারি সিকিউরিটিজে সেকেন্ডারি মার্কেটে লেনদেন করাই এর মূল উদ্দেশ্য’। ডিজিটাল রুপির পাইলট প্রজেক্টে অংশ নেওয়ার জন্য আরবিআই স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া, ব্যাঙ্ক অফ বরোদা, ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া, এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক, আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক, কোটাক মাহিন্দ্রা ব্যাঙ্ক, ইয়েস ব্যাঙ্ক, আইডিএফসি ফার্স্ট ব্যাঙ্ক এবং এইচএসবিসি সহ নয়টি ব্যাঙ্ককে চিহ্নিত করা হয়েছে।
advertisement
ডিজিটাল রুপির উদ্দেশ্য এবং বৈশিষ্ট ব্যাখ্যা করে ২০২২-এর ৭ অক্টোবর একটি নোট জারি করে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। সেখানে জানানো হয়েছে, খুব শীঘ্রই নির্দিষ্ট কয়েকটি ক্ষেত্রে ডিজিটাল রুপির পাইলট প্রজেক্ট শুরু হবে।
আরও পড়ুন: নতুন বছরে গাড়ি কেনার ইচ্ছে? ইভি-ই সবচেয়ে লাভজনক হতে চলেছে, কেন দেখে নিন!
ডিজিটাল রুপি কী: সিবিডিসি বা সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক ডিজিটাল কারেন্সিকে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া দ্বারা জারি করা আইনি দরপত্র বলা যেতে পারে। এটাকেই ডিজিটাল রুপি বা ই রুপি বলা হচ্ছে। এর মান কাগুজে নোটের মতোই। তবে পকেটে থাকবে না। অনলাইনে লেনদেন করা যাবে।
ডিজিটাল রুপির বৈশিষ্ট: ১। সিবিডিসি সোভেরিন কারেন্সি। ভৌত নোটের মতোই রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া ডিজিটাল মুদ্রা জারি করে। ২। এটি কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের ব্যালেন্স শিটে লায়াবেলিটি হিসেবে প্রদর্শিত হয়। ৩। এটি অবশ্যই অর্থপ্রদানের একটি মাধ্যম। সোজা কথায় লেনদেন যোগ্য। আইনি দরপত্র থেকে নাগরিক এবং সরকারি সংস্থা ডিজিটাল মুদ্রার মাধ্যমে কেনাকাটা বা লেনদেন করতে পারেন। ৪। বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কে টাকা বা নগদে সিবিডিসি-তে বদলে নেওয়া যায়। ৫। সিবিডিসি ফাঞ্জিবল লিগাল টেন্ডার, এর জন্য হোল্ডারদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের প্রয়োজন নেই। ৬। সিবিডিসি টাকা তৈরি এবং লেনদেনের খরচ কমিয়ে দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: লকারে কি সোনা পড়ে রয়েছে? তা-হলে সেটা দিয়েই কিন্তু করা যেতে পারে উপার্জন! দেখে নিন সেই উপায়!
ক’রকমের সিবিডিসি চালু করা হতে পারে: রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া দু’রকমের ডিজিটাল রুপি চালু করতে পারে। একটি হল সিবিডিসি-আর। এর মাধ্যমে খুচরো লেনদেন হবে। অন্যটি হল সিবিডিসি-ডব্লিউ। এর মাধ্যমে পাইকারি লেনদেন করার চিন্তা ভাবনা রয়েছে। তবে সিবিডিসি-র মাধ্যমে খুচরো, পাইকারি, সরকারি, বেসরকারি সর্বত্রই লেনদেন করা যাবে। পাইকারি সিবিডিসি নির্বাচিত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিতে সীমাবদ্ধ অ্যাক্সেসের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। অন্যদিকে খুচরো সিবিডিসি একটি ইলেকট্রনিক সংস্করণ যা প্রাথমিকভাবে খুচরো লেনদেনের জন্যই আনা হচ্ছে।
ডিজিটাল রুপি ডিজিটাল আকারে টাকার থেকে আলাদা কোথায়: সিবিডিসি এবং ডিজিটাল আকারে অর্থের মধ্যে পার্থক্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া বলেছে, ‘একটি সিবিডিসি জনসাধারণের কাছে উপলব্ধ বিদ্যমান ডিজিটাল অর্থ থেকে আলাদা কারণ একটি সেটা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের লায়াবেলিটি বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কের নয়’।
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া কেন সিবিডিসি চালু করছে: সিবিডিসি-র লক্ষ্য বর্তমান কাগজের নোটকে সরিয়ে দেওয়া নয়, বরং তার পরিপূরক হয়ে ওঠা। জারি করা নোটে এমনটাই জানিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। ব্যবহারকারীদের কাছে টাকা মেটানোর অতিরিক্ত বিকল্প হাজির করাই এর উদ্দেশ্য। আরবিআই বিশ্বাস করে যে ডিজিটাল রুপি সিস্টেম ‘ভারতের ডিজিটাল অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়াবে এবং আর্থিক ও অর্থপ্রদান ব্যবস্থাকে আরও দক্ষ করে তুলবে’।
কেন সিবিডিসি আনা হচ্ছে তার কারণ জানাতে গিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া জানিয়েছে: ১। শারীরিক নগদ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত খরচ কমানো। ২। নগদ অর্থনীতির উপর নির্ভরশীলতা কমানো এবং ডিজিটাইলেজশনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। ৩। সিবিডিসি কীভাবে আন্তঃসীমান্ত লেনদেনের উন্নতি ঘটাতে পারে তা খুঁজে বের করা। ৪। আর্থিক অন্তর্ভুক্তি সমর্থন। ৫। ক্রিপ্টোর বিস্তারের সঙ্গে ডিজিটাল মুদ্রায় মানুষের আস্থা রক্ষা করা।
ডিজিটাল রুপি বনাম ক্রিপ্টোকারেন্সি: গত কয়েক বছর ধরেই ক্রিপ্টোকারেন্সির ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। তাদের মতে, ক্রিপ্টোর টাকা মানি লন্ডারিং এবং সন্ত্রাসবাদে ব্যবহার হতে পারে। তাছাড়া আর্থিক নীতির যে উদ্দেশ্য সেটাও ধাক্কা খায়। কারণ ক্রিপ্টো সমান্তরাল অর্থনীতি তৈরি করে। যা দেশের অর্থনীতির জন্য বিপজ্জনক।