ক্রমবর্ধমান এই ঘটনাগুলির প্রেক্ষিতে নড়ে বসেছেন কর্তৃপক্ষ। একের পর এক পাকিস্তানি অ্যাকাউন্ট নিষিদ্ধ করতে শুরু করেছে Amazon। অভিযোগ, এই অ্যাকাউন্টগুলি সবই জালিয়াতির সঙ্গে যুক্ত।
গত কয়েক বছর ধরেই Amazon-এ দৌলতে পাকিস্তানি যুবকদের ব্যবসা ফুলে ফেঁপে উঠছে। সাকিব আজহার (Saqib Azher), সানি আলি (Sunny Ali), এবং রেহান আল্লাহওয়ালা (Rehan Allahwalla) মতো কিছু মানুষের হাত ধরে সে দেশে এই সাফল্য এসেছিল। হাজার হাজার পাকিস্তানি পণ্য উৎপাদক ও বিক্রেতা Amazon-র সাহায্যে উপার্জন করছিলেন।
advertisement
প্রাথমিক ভাবে Amazon-এর নিজস্ব প্রক্রিয়ায় নিয়ম মেনে যোগদান করতে হচ্ছিল প্রত্যেক বিক্রেতাকে। সংস্থার নীতি নিয়ম মেনে অ্যামাজনে অ্যাকাউন্ট তৈরি করার ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা ছিল না। সবই হচ্ছিল খুব সফল ভাবে। সে ক্ষেত্রে সামান্য কিছু টাকাও দিতে হচ্ছিল Amazon-কে। দেওয়া হচ্ছিল প্রশিক্ষণও। এতে শুধুমাত্র তাঁরাই অ্যাকাউন্ট খুলছিলেন যাঁরা সত্যিই সৎ ভাবে কাজটা করতে চাইছিলেন।
কিন্তু গোলমাল বাধল পরে। যখন Amazon ঘোষণা করে ফেলল কিছু নির্দিষ্ট যাচাইকরণের পর পদ্ধতি মেনে (Standard Verification and Formalities) যে কোনও পাকিস্তানি নাগরিক বিক্রেতা অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। আসলে বহু পাকিস্তানি বিক্রেতাই Amazon-এ বিদেশি অ্যাকাউন্টের অধীনে কাজ করতেন আগে। ফলে সংস্থা ভেবেছিল পাকিস্তানে প্রক্রিয়া সহজ হয়ে গেলে আরও অনেক বেশি বিক্রেতা যোগ দিতে পারবেন। তাতে আখেরে লাভ হবে Amazon-এর।
প্রাথমিক ভাবে পাকিস্তানের ছোট ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক বাজারে কিছু পণ্য রফতানি করতে শুরু করেন অ্যামাজনের মাধ্যমে। কিন্তু এরই মধ্যে শুরু হয়ে যায় জালিয়াতি। অতিরিক্ত অর্থ উপার্জনের জন্য শুরু হয় নানা অনৈতিক কৌশল। Amazon–এর দাবি, বিশেষত মিয়াঁ চানু (Mian Chanuu) এবং সাহিওয়ালের (Sahiwal) এলাকা থেকে সবচেয়ে বেশি জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়েছে। এ জন্য তারা মিয়াঁ চানু এলাকার আইপি ঠিকানাগুলি (IP Address) বন্ধ করে গিয়েছে। ওখান থেকে আর কোনও অ্যাকাউন্ট খোলা বা পরিচালনা করা যাবে না।
কিন্তু এর পরেও ওই জালিয়াতরা (Scammer) দুবাই বা অন্য কিছু এলাকা থেকে অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করছে।
কী ভাবে হচ্ছে জালিয়াতি?
জাল ট্র্যাকিং
জাল বিক্রেতারা ক্রেতাদের কাছে দাবি করে যে, অর্ডারটি ১৫-২০ দিনের মধ্যে তাঁদের হাতে পৌঁছে যাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। Amazon সাধারণত ১৪ দিনের মধ্যে বিক্রেতাদের বিক্রয় মূল্যের অর্থ দিয়ে দেয়। তাই এই জালিয়াতরা অর্ডারের জাল ট্র্যাকিং তৈরি করে ফেলে। ক্রেতার সন্দেহ করার কোনও কারণই থাকে না। ফলে তাঁরা Amazon-এর কাছে রিপোর্টও করেন না। ১৪ দিন পরে, Amazon বিক্রেতাকে টাকা দিয়ে দেয়। এ দিকে ক্রেতা তাঁর অর্ডার আসার জন্য অপেক্ষা করতেই থাকেন। Amazon-এর আর কিছুই করার থাকে না।
কার্ডিং
এই কৌশলটির সঙ্গে ডার্ক ওয়েব জড়িত। এই ডার্ক ওয়েব থেকে সমস্ত বিবরণ নিয়ে প্রায় ১০০ ডলারে জাল কার্ড কিনে ফেলে জালিয়াত বিক্রেতারা। তারপরে তারা সেই কার্ডগুলি থেকে কিছু উপহার কিনে গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করে। এতে জালিয়াতি ধরা আরও কঠিন হয়ে যায়, কারণ ক্রেতারা যা অর্ডার করেছেন তা পেয়ে যান, ফলে রিপোর্ট করার কেউ থাকে না।
ফিলিং
এই বিষয়টির সঙ্গে সরাসরি বেআইন জড়িয়ে নেই। কোথাও প্রতারিত হচ্ছেন না ক্রেতা। কিন্তু এটি ভয়ঙ্কর বেআইনি কাজ। এ ক্ষেত্রে ফিলাররা (Filler) প্রথমে Amazon-এ তাঁদের পণ্যটি তুলে দেন। তারপর গ্রাহকের কাছ থেকে অর্ডার সংগ্রহ করে নেয়। এরপর এরা অন্য বিক্রেতা যেমন স্যাম'স ক্লাব (Sam’s Club) বা ওয়ালমার্ট (Walmart) থেকে পণ্য কিনে ক্রেতার ঠিকানায় পাঠিয়ে দেয়।
এর পর পাকিস্তানে Amazon-এর ভবিষ্যত কী?
পরিসংখ্যান বলছে গত এক বছরে প্রায় ৮০ হাজার পাকিস্তানি বিক্রেতা Amazon-এ যুক্ত হয়েছেন। কিন্তু এদের বেশির ভাগই জালিয়াত। ফলে তা থেকে সংস্থার কোনও লাভ হয়নি। ফলে মনে করা হচ্ছে Amazon পাকিস্তানের বিক্রেতার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিতে পারে।
এটা একদিক থেকে ভালই হবে। Amazon ইতিমধ্যেই ইঙ্গিত দিয়েছে যে মিয়াঁ চানু এবং সাহিওয়াল এলাকার কাউকে অ্যাকাউন্ট খুলতে দেওয়া হবে না। এরপর এটা গোটা পাকিস্তানেই লাগু হবে। সে ক্ষেত্রে টাকা দিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন সৎ বিক্রেতারা। আশার কথা Amazon পাকিস্তান থেকে উঠে যাচ্ছে না।