মুর্শিদাবাদের নবাবরা আমের সৌখিন ছিলেন। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হরেক প্রজাতির আমগাছ এনে নিজেদের বাগানে লাগাতেন। শোনা যায়, নবাবদের বাগানে দুই শতাধিক প্রজাতির আম গাছ ছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে অনেক আমবাগান কেটে বসতি গড়ে উঠেছে। কিছু বাগানের অস্তিত্ব থাকলেও হরেক প্রজাতির আমগাছের দেখা পাওয়া যায় না। ফলে নবাবদের পছন্দের একাধিক প্রজাতির আম মুর্শিদাবাদের মাটি থেকে হারিয়ে গিয়েছে।
advertisement
আরও পড়ুনঃ ১৬৮ বছর আগে আজকের দিনেই ভবতারিণী মায়ের প্রথম পুজো, দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের অজানা ইতিহাস জানুন
জানা গিয়েছে, বর্তমানে বেশ কিছু প্রজাতির আমের অস্তিত্ব সঙ্কটে। নবাবি আমলের বিভিন্ন প্রজাতির আমের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে প্রায় আড়াই দশক ধরে সংরক্ষণের কাজে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন জিয়াগঞ্জ বাগডহরের আমচাষি তথা গবেষক কুশল ঘোষ। গ্রাফটিং প্রক্রিয়ায় একই গাছে সর্বাধিক ১৬৫ প্রজাতির আম ফলন করে রীতিমতো নজির সৃষ্টি করেছেন। পাশাপাশি সঙ্করায়নের মাধ্যমে বেলচম্পা, ল্যাম্বো, শ্যামভোগ প্রভৃতি নতুন প্রজাতির আম উৎপন্ন করেছেন। মিশ্র প্রজাতির আমগুলিও স্বাদে ও গন্ধে অতুলনীয়।
জিয়াগঞ্জ শহরের বাগডহর মোড় থেকে উত্তরে ১০০ মিটার দূরে কুশল ঘোষের আমবাগান। জিয়াগঞ্জ, লালবাগ, ডোমকল, জঙ্গিপুর সহ জেলার বিভিন্ন প্রান্তে আমবাগান থাকলেও বাগডহরে কুশলবাবুর আমবাগান উদ্ভাবনী বৈশিষ্ট্যে স্বতন্ত্র। বাগানের বেশ কয়েকটি আম গাছের কোনওটিতে ১৬৫ প্রজাতির, কোনওটিতে ১৩০ প্রজাতির, আবার কোনওটিতে ১০০ প্রজাতির আম ফলিয়েছেন বলে দাবি।
আরও পড়ুনঃ কলকাতায় বসে ফের বোমা ফাটালেন সৌমিত্র খাঁ! কনভয়ে হামলা নিয়ে বিস্ফোরক অভিযোগ
কুশল ঘোষ বলেন, মুর্শিদাবাদের মাটি থেকে বিভিন্ন প্রজাতির আম ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছিল। আর এই বিষয়টি আমাকে খুব ভাবিয়ে তুলেছিল। আমের বিভিন্ন প্রজাতির সংরক্ষণের তাগিদে ২০০০ সালে এক উদ্যান পালন আধিকারিকের কাছে গ্রাফটিং-এর মাধ্যমে একই গাছে একাধিক প্রজাতির আম ফলানোর হাতেকলমে শিক্ষা লাভ করি। ২০০০ সাল থেকে গ্রাফটিং প্রক্রিয়ায় একই গাছে বিভিন্ন প্রজাতির কলম বসানোর কাজ শুরু করি। দুই বছর পরে থেকে ফল পাওয়া শুরু হয়। সাফল্য উৎসাহকে বাড়িয়ে তোলে। একই গাছে কোহিতুর, বোম্বাই, হিমসাগর, ল্যাংড়া, সারেঙ্গা, বিমলি, বিরা, চম্পা,রানিপসন্দ, আনারস, আলফানসো, ফজলি, গোলাপখাস, পাঞ্জাপসন্দ প্রভৃতি সর্বাধিক ১৬৫ প্রজাতির আম ফলিয়েছি।
চলতি বছরে দুটি গাছে প্রায় ১০০টি প্রজাতির আম ফলেছে। সংরক্ষণের পাশাপাশি সঙ্করায়নের মাধ্যমে বেলচম্পা, শ্যামভোগ, ল্যাম্বো প্রভৃতি কয়েকটি নতুন প্রজাতির আম তৈরি করেছি। আরও বেশ কিছু নতুন প্রজাতির আম তৈরির প্রক্রিয়া জোরকদমে চলছে। আশা করছি আগামী দুই-তিন বছরের মধ্যে দু-তিনটি উন্নত শঙ্কর প্রজাতির আমের ফলন হবে।
কৌশিক অধিকারী