স্মৃতিতেও এখনও টাটকা ৷ ২০১৭ সালের ৭ জুন ৷ ডাফরিন রোডে ডিউটি করার সময়ে বেপরোয়া এক মিনিবাস ধাক্কা মেরেছিল সুদীপবাবুকে। মিনিবাসের চাকা পিষে দিয়েছিল সুদীপের ডান পা। টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়া কোমরের জয়েন্ট বা পেলভিস জয়েন্ট, থেঁতলে যায় ডান পা নিয়ে ৷ এই অবস্থায় সুদীপকে ভর্তি করা হয় একবালপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। চিকিৎসকদের চেষ্টায় প্রাণে বেঁচে গেলেও বাদ যায় তাঁর ডান পা।
advertisement
তখন মনে হয়েছিল সব শেষ ৷ কীভাবে চলবে সংসার? কীভাবে এগোবে জীবন ৷ কিন্তু হারেননি সুদীপ ও তাঁর পরিবার ৷ মনে জোর রেখে গিয়েছেন ৷ ভেঙে পড়তে দেননি নিজের আত্মবিশ্বাস। ঠিক একদিন নিজের পায়ে উঠে দাঁড়াবেন এই ভরসা ও বিশ্বাস দু’ই ছিল অটুট ৷ শেষমেশ জিতলেন সুদীপই ৷
আরও পড়ুন
অবশেষে সাময়িক স্বস্তি দিল বৃষ্টি, জেনে নিন কলকাতার কোথায় বৃষ্টিপাত
২০১৪ ব্যাচের এই সার্জেন্ট একবছরের কিছু সময়ের বিরতির পর ফের কলকাতার রাস্তায় স্বমহিমায়। ডিউটিতে যোগ দেওয়ার পর পার্ক স্ট্রিটের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার যান নিয়ন্ত্রণের ভার ট্রাফিক ডিপার্টমেন্ট তুলে দেয় সার্জেন্ট সুদীপ রায়ের হাতে।
সুস্থ হয়ে ফের নিজের পোস্টে জয়েন করার এই লড়াইয়ে সুদীপ পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ দিয়েছেন কলকাতা ট্রাফিক পুলিশের কর্তাদের। সুদীপের কথায়, হাসপাতালে এক দিন তাঁকে দেখতে এসেছিলেন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার। ভরসা দিয়েছিলেন ৷ বলেছিলেন, ‘আমরা তোমার পাশে আছি।’ কমিশনারের নির্দেশ মতোই বেনিয়াপুকুরের একটি সংস্থার মাধ্যমে জার্মানি থেকে উন্নত মানের কৃত্রিম পা আনানো হয়। গত বছর ১৬ অক্টোবর অস্ত্রোপচার করে কৃত্রিম পা বসানো হয় সুদীপের শরীরে। আত্মীয়রা জানিয়েছেন, টাকা দিয়েই দায়িত্ব মেটায়নি লালবাজার। নিয়মিত ফোন করে খোঁজ নিয়েছেন পুলিশকর্তারা।
সুদীপের দুই চিকিৎসক জানিয়েছেন রোগীর মনের জোরটাই আসল । তাঁদের কথায়, ‘মনের জোরে কৃত্রিম অঙ্গ নিয়ে অনেকেই অসাধ্যসাধন করেছেন। সুদীপবাবুও মনের জোরেই স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন।’ আর লালবাজারের পুলিশ কর্তারা বলছেন, তাঁর ‘অবিশ্বাস্য ঘটনা! এত মনোবলও কারও থাকতে পারে!’
এই মনের জোরকে সম্বল করেই আটমাস ব্যাপী লড়াইয়ে নিজেকে একটু একটু করে প্রস্তুত করেছেন আবার কাজে যোগ দেওয়ার জন্য। এক্সারসাইজ, ক্রিকেট খেলা, সংসারের জন্য বাজার, বাইক চালিয়ে ছেলেকে পড়াতে নিয়ে যাওয়া সবই করেছেন তিনি। অবশেষে নার্সিংহোমের ডাক্তার ও পুলিশ হাসপাতালের ফিট সার্টিফিকেট নিয়ে ফের কাজে নেমে পড়েছেন অদম্য সাহসী এই ট্রাফিক সার্জেন্ট। ঘরের ছেলের এমন কঠিন লড়াইয়ে জয়ে উচ্ছ্বসিত তাঁর পরিবার ও সহকর্মীরা।
