মোহিনী একাদশীর উপবাস এই বছর পালিত হল ৮ মে, ২০২৫ তারিখে, বৃহস্পতিবারে। বৃহস্পতিবার মোহিনী একাদশী পড়া একটি শুভ কাকতালীয় ঘটনা, কারণ এই দিন ঘরে ঘঢ়ে মা লক্ষ্মী এবং ভগবান বিষ্ণুর পূজা করা হয়, উপবাস পালন করা হয়। এই বছর এই বৃহস্পতিবার উপবাস পালন এবং মোহিনী একাদশী উদযাপন করলে একজন ব্যক্তি দ্বিগুণ পুণ্যফল লাভ করেবেন। তবে, এবার মোহিনী একাদশীতে ভাদ্র যোগ আছে, যা ভোর ৫:৩৫ থেকে দুপুর ১২:২৯ পর্যন্ত অবস্থান করবে। ভাদ্র যোগে কোনও শুভ কাজ সম্পন্ন হয় না, তবে এবার এই যোগের নিবাস পাতালে। সুতরাং, এই ভাদ্র যোগ পৃথিবীর উপর কোনও প্রতিকূল প্রভাব ফেলবে না। এতে, পূজা বা অন্যান্য শুভ কাজ সম্পন্ন করা যাবে। যে কোনও ব্রত উদযাপন করার সময়ে সংশ্লিষ্ট ব্রতকথা শুনতে হয়, তিরুপতির জ্যোতিষী ড. কৃষ্ণ কুমার ভার্গবের কাছ থেকে মোহিনী একাদশীর ব্রতকথা, শুভ সময় এবং পারণের সময় জেনে নেওয়া যাক ।
advertisement
মোহিনী একাদশীর ব্রত কথা:
জ্যোতিষী ড. ভার্গব বলছেন যে, বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের একাদশী তিথিতে মোহিনী একাদশীর উপবাস পালন করা হয়। যে ব্যক্তি মোহিনী একাদশীর উপবাস পালন করেন, তিনি পুণ্য ও মোক্ষ লাভ করেন। যাঁরা মোহিনী একাদশীর ব্রতকথা পাঠ বা শ্রবণ করেন, তাঁরা এক হাজার গরু দান করার পুণ্যফল লাভ করেন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যুধিষ্ঠিরকে এই মোহিনী একাদশীর গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেছিলেন, এর ব্রতকথা নিম্নরূপ-
একসময় সরস্বতী নদীর তীরে ভদ্রাবতী নামে এক অতি মনোহর নগরী ছিল, সেখানে রাজা দ্যুতিমান রাজত্ব করতেন। চন্দ্রবংশীয় রাজা দ্যুতিমানের নগরীতে ধনপাল নামে একজন বণিক বাস করতেন। তিনি যেমন ধনী ছিলেন, তেমনই ধার্মিকও ছিলেন। তিনি ধর্মীয় কার্যকলাপ এবং উপাসনার প্রতি আগ্রহী ছিলেন। তিনি ভগবান বিষ্ণুর পূজা করতেন এবং যথাচারে যথালগ্নে উপবাস পালন করতেন। তিনি অনেক জায়গায় ধর্মশালা এবং আহারশালা তৈরি করেছিলেন। তাঁর দাতব্য কাজের অংশ হিসেবে তিনি প্রচুর সংখ্যক গাছপালাও রোপণ করেছিলেন।
এহেন ধর্মবুদ্ধি ধনপালের ৫ পুত্র ছিল, যাদের মধ্যে কনিষ্ঠ পুত্র ধৃষ্টবুদ্ধি সর্বদাই পাপ কর্মে লিপ্ত থাকত। সে প্রতিদিন খারাপ কাজ করত। সে তার বাবার সঙ্গে সঙ্গে তার পূর্বপুরুষদেরও অপমান করত। মাংস এবং মদ খাওয়া তার জন্য পবিত্র তিথিতিও অতি স্বাভাবিক ছিল। সে তার বাবার টাকা অন্যায় কাজে নষ্ট করত। ধনপাল তাঁর ছোট ছেলে ধৃষ্টবুদ্ধির উপরে সাতিশয় বিরক্ত ছিলেন। একদিন তিনি ধৃষ্টবুদ্ধিকে ঘর থেকে বের করে দেন। গয়না বিক্রি করে ধৃষ্টবুদ্ধি কয়েকদিন টিকে থাকে। যখন তা শেষ হয়ে যায়, সে চুরি শুরু করে।
একদিন সে চুরি করতে করতে ধরা পড়ে এবং ফলস্বরূপ তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। শাস্তি হিসেবে তাকে নানা ধরনের নির্যাতন করা হয়েছিল। তার শাস্তি শেষ হওয়ার পর রাজা তাকে রাজ্য থেকে বহিষ্কার করেন। একদিন সে ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় কাতর হয়ে পড়ে। খাবারের সন্ধানে কৌদিন্য ঋষির আশ্রমের দিকে যাত্রা করে।
গঙ্গায় স্নান করে ঋষি কৌদিন্য তখন আশ্রমে ফিরছিলেন। যখন তিনি কাছে এলেন, তখন গঙ্গাজলের কয়েক ফোঁটা ধৃষ্টবুদ্ধির শরীরে পড়ল। গঙ্গার পবিত্র জলবিন্দু তার উপর পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ধৃষ্টবুদ্ধির ইন্দ্রিয় ও মতি শুদ্ধ হয়েছিল। তিনি কৌদিন্য ঋষিকে প্রণাম করেন এবং বলেন যে তিনি এখনও পর্যন্ত তাঁর জীবনে অনেক পাপকর্ম করেছেন। এর থেকে মুক্তির উপায় জানতে চান তিনি।
তখন ঋষি কৌদিন্য বললেন, “বৈশাখ শুক্লা একাদশী আসতে চলেছে, যা মোহিনী একাদশী নামে বিখ্যাত। তোমার মোহিনী একাদশীর উপবাস পালন করা উচিত এবং সঠিকভাবে ভগবান বিষ্ণুর পূজা করা উচিত। মোহিনী একাদশী উপবাস পালন করলে বিষ্ণুর কৃপায় তোমার পাপ দূর হবে এবং তুমি পুণ্য লাভ করবে। শ্রীহরি তোমার মঙ্গল করবেন”। কৌদিন্য ঋষির উপদেশ অনুসারে ধৃষ্টবুদ্ধি মোহিনী একাদশীর উপবাস ও পূজা পালন করেন। ভগবান বিষ্ণুর কৃপায় তাঁর পাপ মোচন হয়েছিল। জীবনের শেষ প্রান্তে তিনি মোক্ষ লাভ করেন। তিনি গরুড়ের পৃষ্যে আসীন হয়ে ভগবান বিষ্ণুর আবাস বৈকুণ্ঠে চলে যান এবং সেখানে স্থান পান।
মোহিনী একাদশী ২০২৫-এর শুভ মুহুর্ত
বৈশাখ শুক্লা একাদশী তিথি শুরু হচ্ছে: ৭ মে, বুধবার, সকাল ১০.১৯ থেকে
বৈশাখ শুক্লা একাদশী তিথি শেষ হচ্ছে: ৮ মে, বৃহস্পতিবার, দুপুর ১২.২৯ মিনিটে
ব্রাহ্ম মুহুর্ত: ভোর ০৪.১০ থেকে ভোর ০৪.১৩ এবং ভোর ০৪.১৩ থেকে দুপুর ১২.৪৫
মোহিনী একাদশী ব্রত পারণের সময়: ৯ মে, শুক্রবার, ভোর ০৫.৩৪ থেকে সকাল ০৮.১৬
দ্বাদশী তিথি শেষ হচ্ছে: দুপুর ০২.৫৬ মিনিটে
(Disclaimer: প্রতিবেদনের লেখা তথ্য News18 বাংলার নিজস্ব মত নয় ৷ সঠিক ফল পাওয়ার জন্য বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করুন ৷ )