অনেকেই হয়তো রোন্ডা বায়ার্নের (Rhonda Byrne) দ্য সিক্রেট (The Secret) বইটি পড়েছেন, যেখানে এই ল অফ অ্যাট্র্যাকশনের কথা বলা হয়েছে। তা ছাড়া এখন অনেকেই বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা রকম ভিডিও প্রকাশ করে থাকেন যেখানে, আধ্যাত্মিক চেতনায় ভাবিত কিছু মানুষ দেখানোর চেষ্টা করেন কী ভাবে কেউ তাঁর স্বপ্নের চাকরি, বাড়ি বা গাড়ি পেতে পারেন। তা-ও শুধু ইচ্ছে শক্তির মাধ্যমে। সেখানে জোর দেওয়া হয় প্রকাশ বা Manifest-এর উপর।
advertisement
সাইকিক ডিভাইনার এবং সার্টিফাইড রেইকি অনুশীলনকারী অ্যাম্বার ফিনি (Amber Finney) বলেছেন, "এই প্রকাশ হল একটি নির্দিষ্ট ইচ্ছের মাধ্যমে একটি পছন্দসই ফলাফল বের করার প্রয়াস। এর জন্য যা করতে হবে তা হল মহাবিশ্বের সঙ্গে একত্রে কাজ করা এবং তার অনুশীলনের মধ্যে দিয়ে যাওয়া। কোনও মানুষ তাঁর মনের শক্তি, তাঁর কর্মের শক্তি এবং একটি চিন্তাকে বাস্তবে পরিণত করার জন্য আত্মার সঙ্গে সংযোগ করার শক্তি নিয়ে কাজ করবেন এক্ষেত্রে।" এ কেমন অনুভব? ধরা যাক কোনও গানের সুরের মতো। অনেকটা কোনও কল্পনাকে একটি শব্দে পরিণত করার মতো বা একটি মনের মধ্যে অনুরণিত কোনও সুরকে গানে রূপ দেওয়ার মতো। আবার হতে পারে কারও স্বপ্নের জীবন কেমন হবে তা কল্পনা করার মতোই সহজ এই বিষয়। মাইন্ডসেট ও ম্যানিফেস্টেশন বিশেষজ্ঞ (Mindset And Manifestation Coach) সামান্থা চুং (Samantha Chung) বলেন, তার পর তাকে বাস্তবায়িত করার জন্য কাজ করতে হবে।
এই প্রকাশ ভঙ্গি কাজে লাগতে পারে কোনও লোভনীয় চাকরির অফার থেকে শুরু করে এক বাটি পছন্দের খাবারের জন্যও। আজ অবশ্য যে বিষয়টি নিয়ে কথা বলা হচ্ছে, তা একান্তই কোনও মানুষের জীবনের রোমান্টিক প্রেমের প্রকাশ সম্পর্কে। এর জন্য আধ্যাত্মিক বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে কয়েকটি পথ তৈরি করার কথা ভাবা হয়েছে। ধাপে ধাপে ঠিক কী করতে হবে, এটি কতক্ষণ সময় নেবে এবং কী ভাবে তা ম্যানিফেস্ট হচ্ছে- এই সবই বিশেষজ্ঞরা ছকে দিয়েছেন ফর্মুলার মতো করে।
কী ভাবে ভালবাসা প্রকাশ করতে হবে?
নিজের প্রেম প্রকাশ করার বিভিন্ন উপায় রয়েছে। তবে একটি সাধারণ পদ্ধতি হল প্রেমের প্রকাশের প্রচলিত নিয়মের মাধ্যমে। এই আচরণগুলো যে কোনও ভাবে, যে কোনও স্থানে সঞ্চালিত হতে পারে। তবে জ্যোতিষী এবং প্রত্যয়িত রেইকি অনুশীলনকারী জেসমিন আলেজান্দ্রেজ-প্রসাদের (Jasmin Alejandrez-Prasad) মতে, এই কাজগুলো করার সেরা সময় হল শুক্রবার (‘শুক্রবার চালিত হয় শুক্র গ্রহ দ্বারা। এই শুক্রগ্রহ হল রোমান্স এবং সম্পর্কের গ্রহ’) রাত (‘কারণ চাঁদ প্রেমের সম্পর্কের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা এবং সাদৃশ্য তৈরি করে’)।
দেখে নেওয়া যাক কী করতে হবে—
১. একটি চিঠি
প্রথমে, নিজের আদর্শ সঙ্গীর কাছ থেকে ঠিক কী চাওয়া হচ্ছে, তা পরিষ্কার করে নিতে হবে নিজের কাছে। এই ব্যক্তি কে? তাঁর কী কী গুণাবলী রয়েছে? সেই সব কিছু ঠিক করে নিয়ে তার পর একটি চিঠিতে এই চাহিদাগুলো সম্পর্কে লিখে ফেলতে হবে। অ্যাম্বার ফিনি বলেন, সবটা লিখতে হবে। কোনও রকম দ্বন্দ্ব বা অপরাধ বোধ যেন কাজ না করে। একেবারে অকপটে প্রেমাস্পদের শারীরিক আকর্ষণ, তাঁর আর্থিক সম্বল বা সাবলম্বন সম্পর্কে যতটা সম্ভব নির্দিষ্ট করে লিখতে হবে। চাইলে সেই মানুষটির নামও উল্লেখ করা যেতে পারে।
আরও পড়ুন- রথের পরেই জ্যোতিষচক্রে স্থান পরিবর্তন করবে বুধ; এই ৩ রাশির কপাল খুলতে চলেছে গোচরে!
ফিনি জানান, এমন মনে হতেই পারে, মনের মধ্যে লুকিয়ে থাকা ইচ্ছেগুলো প্রকাশ করে ফেললে হয় তো চিঠিটি বেশ অগভীর হয়ে যাবে। তবে নির্দিষ্ট ইচ্ছে বা চাওয়াগুলো গোপন করে রাখা যাবে না। কারণ মহাবিশ্বের সঙ্গে সংযুক্ত হতে গেলে চাওয়া-পাওয়ার বিষয়টা খুব স্পষ্ট হয়ে ওঠা দরকার। তবে এই চিঠিটি পরিষ্কার, স্পষ্ট এবং সংক্ষিপ্ত রাখতে হবে। সম্ভব হলে শেষ বাক্য হিসেবে লিখতে হবে ‘আমার এবং সংশ্লিষ্ট সকলের ভালোর জন্য প্রকাশিত ফলাফল’।
২. কল্পনায় দেখা
চিঠিটা লেখার পরে, গোটা বিষয়টি কল্পনা করতে হবে। আলেজান্দ্রেজ-প্রসাদ বলেন, "সেই নির্দিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনও ব্যক্তি যে জিনিসগুলো উপভোগ করবেন বা প্রশংসা করবেন তা এই বার কল্পনা করে নিতে হবে। তাঁর নাম, তাঁর ছবি মনে মনে ভেবে তাঁর জন্য শুভকামনা পাঠাতে হবে। মনে মনেই তাঁর কাছে ভালোবাসার উদ্যম পাঠিয়ে দিতে হবে।"
৩. মহাবিশ্বে মিলবে বার্তা
একবার কল্পনা করা হয়ে গেলে, নিজের এই বার্তাটি মহাবিশ্বে পাঠিয়ে দিতে হবে। চিঠি রাখার জন্য একটা সুন্দর বেদির মতো স্থান তৈরি করতে হবে এবং একটি গোলাপি মোমবাতি জ্বালাতে হবে। আলেজান্দ্রেজ প্রসাদ বলছেন, গোলাপি রঙ ব্যবহার করা হয় আত্মপ্রেম, প্রেমের প্রতীক হিসেবে। মোমবাতি ভেনাস বা শুক্র সংক্রান্ত আচার-অনুষ্ঠানের জন্য ব্যবহার করা হয়। এর জন্য একটি সাধারণ, সুগন্ধহীন মোমবাতি জ্বালালেই হবে। এ বার চিঠিটি মোমবাতির কাছাকাছি বা নিচে রাখতে হবে। তবে সাবধান, কাগজটা যেন পুড়ে না যায়। প্রতিদিন এই মোমবাতিটা জ্বালিয়ে দিতে হবে- যত দিন না সম্পূর্ণরূপে মোমবাতিটি জ্বলে যায় এবং প্রেম প্রকাশিত হয়। ফিনি জানিয়েছেন, এই চিঠিটা বেদিতে রাখার আগে, এটাকে তিনবার ভাঁজ করতে হবে। তিনটে ভাঁজই হবে নিজের দিকে, যেন কোনও শক্তিকে আবাহন করা হচ্ছে।
এরই সঙ্গে আরও কিছু কাজ করা যেতে পারে যা ভীষণ ভাবে কাজে লাগবে। বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান যেমন গোলাপ, দারচিনি, ক্যাটনিপ, ফরেস্ট রুট এবং কমলার নির্যাস গলিত মোমে ছিটিয়ে দেওয়া যেতে পারে। এই জিনিসগুলো সৌন্দর্য এবং প্রেমে সাহায্য করে। ফলে শক্তি আরও বৃদ্ধি পাবে বলে দাবি করেছেন ফিনি। এরই সঙ্গে হিবিস্কাস বা জবা ফুলের চা পান করাও যেতে পারে, সঙ্গে এক চামচ মধু। আলেজান্দ্রেজ প্রসাদ বলেন, মধু আকৃষ্ট করতে এবং সমস্ত আচরণগুলোকে মিষ্টি করার জন্য ব্যবহার করা হয়।
রোজ কোয়ার্টজ (এটি একটি প্রেমের পাথর যা হৃদয় অবারিত করে এবং প্রেমের ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য করে তোলে), মালাকাইট (হৃদয় অবারিত করার পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর সম্পর্ক গড়ে তোলে), এবং লেপিডোলাইট-এর মতো স্ফটিকগুলো ট্রমা, উদ্বেগের বিরুদ্ধে কাজ করে বলে জানিয়েছেন ফিনি। এগুলো ধারণ করতে পারলে তাই ভাল হয়।
৪. মূর্ত হোক তালিকা
এটিই হল চূড়ান্ত এবং সম্ভবত সবচেয়ে কঠিন পদক্ষেপ। চুং বলেন, কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তির কাছ থেকে যা চাওয়া হয়েছে ওই চিঠিতে তা নিজেকেই দিতে হবে নিজের কাছ থেকে। এটি চুম্বকের মতো কাজ করবে। নিজেকে নিজে ভালোবাসলে, ভালোবাসা আকৃষ্ট হয়ে আসবে।
চুং বলেন, আমরা প্রেমের ফ্রিকোয়েন্সিতে কম্পন তৈরি করি, তখন আমরা অন্যদের কাছে খুব আকর্ষণীয় হয়ে উঠি। ভালোবাসা প্রকাশ করার জন্য সব থেকে ফলপ্রসূ হতে পারে নিজের ভাবনা। যেখানে মনে করতে হবে ইতিমধ্যেই সেই ভালোবাসা রয়েছে যা আমরা মনের মানুষের কাছ থেকে পাওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে রয়েছি।
ভালোবাসা প্রকাশ করতে কতক্ষণ লাগে?
এর কোনও নির্দিষ্ট সময়সীমা হয় না। ফিনি বলেন, ‘যখন আমরা মহাবিশ্ব এবং অন্য আধ্যাত্মিক জগতের সঙ্গে কাজ করি, তখন সময়ের অস্তিত্ব থাকে না।’ তবে সুদিন আসবেই। আলেজান্দ্রেজ-প্রসাদ বলেন, এমন হতেই পারে যে বিষয়টি অবিশ্বাস্য ভাবে দ্রুত ঘটে গেল। অথবা তেমন হল না। তবে হবেই।
প্রেমের প্রকাশের লক্ষণ কী কী?
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যে আপনা-আপনি জানতে পারা যাবে পথ চলা শুরু হয়ে গিয়েছে। কারণ দৈনন্দিন জীবনে কিছু ইঙ্গিত বা সিঙ্ক্রোনিসিটি (অর্থপূর্ণ কাকতালীয়তা) লক্ষ্য করতে শুরু করবেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, যেমন-
কাঙ্ক্ষিতের জন্মদিন, নাম বা তাঁর সঙ্গে বিশেষ ভাবে সংযুক্ত কিছু দেখতে পাওয়া যাবে চারপাশে৷ আলেজান্দ্রেজ-প্রসাদের দাবি, এটি নিশ্চিত করে যে শক্তিটি গতিশীল এবং পার্থিব রাজ্যে তা আসছে।
ক্ষণিক দেখা হওয়ার মুহূর্তে তাৎক্ষণিক আকর্ষণ অনুভব করা যাবে। কারও প্রতি একটি অমোঘ টান অনুভব করা যাবে। ফিনি বলেন, তাঁর সম্পর্কে চিন্তা করা বন্ধ করা যাবে না। হয় তো সম্পর্কে স্বপ্ন দেখা যাবে বা ডেজা ভ্যু (Deja Vu) হবে।
বিশেষ কোনও শুভ সংখ্যা দেখা। যেমন, ২২২-কে প্রেমের বার্তা হিসাবে দেখা হয়।