JOIN US

আপনার শহর নির্বাচন করুন

    আলিপুরদুয়ার
    বাঁকুড়া
    বীরভূম
    কোচবিহার
    দক্ষিণ দিনাজপুর
    দার্জিলিং
    হুগলি
    হাওড়া
    জলপাইগুড়ি
    মালদহ
    মুর্শিদাবাদ
    নদিয়া
    উত্তর ২৪ পরগণা
    পূর্ব বর্ধমান
    পূর্ব মেদিনীপুর
    পুরুলিয়া
    শিলিগুড়ি
    দক্ষিণ ২৪ পরগনা
    উত্তর দিনাজপুর
    পশ্চিম বর্ধমান
    পশ্চিম মেদিনীপুর
    হোম / খবর / Uncategorized / তবু বেঁচে থাকে ‘ বিষন্ন সানাই’

    তবু বেঁচে থাকে ‘ বিষন্ন সানাই’

    কে এই আলি আহমেহ হুসেন? আপনারা নিশ্চয় দূরদর্শনের সেই পুরনো সিগনেচার টিউনটির কথা মনে রেখেছেন। সেই যে সাতের দশক থেকে টিভি খুললেই একটা পৃথিবী ঘুরত আর একটা সানাইয়ের সুর বেজে উঠত। পন্ডিত রবিশঙ্কর সেই সিগনেচার টিউনটি কম্পোজ করেছিলেন। আর এই টিউনটি বাজানোর জন্য যাঁকে দিল্লি নিয়ে গিয়েছিলেন, তিনি এই আলি আহমেদ হুসেন ।

    বিজ্ঞাপন
    বিজ্ঞাপন
    News18 বাংলা আরও খবর পড়তে ফলো করুন

    লালবাজার টপকে নাখোদা মসজিদ। মসজিদকে সামনে রেখে বাঁ-দিকে টার্ন নিলেই ক্যানিং স্ট্রিট। সকাল থেকে হাটের মত বাজার। ফুটপাত দখল হয়ে যায় ভোরের আলো ফোঁটার আগেই। দখল থাকে রাত পর্যন্ত। এর মধ্যে দিয়েই মাঝে মাঝে উঁকি মেরে যায় শীর্ণকায় গলিগুলো। অন্ধকার, স্যাঁতস্যাঁতে।  এমন এক গলির ভিতর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে গেলাম ৬১ বি ক্যানিং স্ট্রিটের এক বিশাল ফটকের সামনে। সেই ফটক টপকে বাঁ-হাত বরাবর একটা সরু সিঁড়ি। সিঁড়ি বেয়ে দোতলা। দোতলার ঝুল বারান্দা টপকে ফের আরও একটা লোহার প্যাঁচানো সিঁড়ি। খুব সরু। দু’জন সেই সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে পারবে না। কোনওক্রমে উঠলাম সিঁড়ি বেয়ে। ডানদিকে ছোট্ট একটা ঘর। দশ ফুট বাই দশ ফুট। ভুল বললাম হয়তো। ঠিক করে মাপলে কিছু ছোট হবে তার থেকেও। সেই ছোট্ট ঘরটাতে দেখি শুয়ে আছেন উস্তাদ। উস্তাদ কেন বলি, বলা উচিৎ উস্তাদকা উস্তাদ। দেশের একমাত্র জীবিত কিংবদন্তী সানাই বাদক উস্তাদ আলি আহমেদ হুসেন খাঁ সাহেব।

    কে এই আলি আহমেহ হুসেন? আপনারা নিশ্চয় দূরদর্শনের সেই পুরনো সিগনেচার টিউনটির কথা মনে রেখেছেন। সেই যে সাতের দশক থেকে টিভি খুললেই একটা পৃথিবী ঘুরত আর একটা সানাইয়ের সুর বেজে উঠত। পন্ডিত রবিশঙ্কর সেই সিগনেচার টিউনটি কম্পোজ করেছিলেন। আর এই টিউনটি বাজানোর জন্য যাঁকে দিল্লি নিয়ে গিয়েছিলেন, তিনি এই আলি আহমেদ হুসেন । যাঁকে ১৯৭৫ সালে কলম্বিয়া পিকচার্সের জন ফোরম্যান চিঠি দিয়ে ক্যলিফোর্নিয়াতে গিয়ে হলিউড ছবি ‘দ্য ম্যান হু উড বি কিং’ ছবি-সহ একাধিক হলিউড ছবিতে কাজ করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু ভেতো ঘরকুনো বাঙালি, কখনই বাংলা ছাড়তে পারেননি পাকাপাকিভাবে। আর তার জন্যই অর্থকষ্টে কোনওক্রমে মৃতপ্রায় হয়ে টিকে রয়েছেন এই কিংবদন্তী। দেহের দুটো কিডনিই খারাপ তাঁর। সপ্তাহে তিনদিন ডায়লেসিস করতে হয় বেঁচে থাকার জন্য। তাঁর ছেলেদের হাত পাততে হয় দ্বারে দ্বারে। আমরা তো এভাবেই বেঁচে থাকি, তাই না ?

    যে বাড়িটার কথা আপনাদের বললাম। সেটাও ওর নিজের বাড়ি নয়। ভাড়া থাকেন। এই ছোট্ট ঘরে সেই ৭৫ সাল থেকেই রয়েছেন তিনি। শুধু হলিউডি প্রস্তাবই নয়। মহম্মদ রফি, আর ডি বর্মন, মান্না দে- সহ মুম্বইয়ের একঝাঁক তারকার সঙ্গে কাজ করার সুবাদে তাঁকে মুম্বইতে থাকতেও প্রস্তাব দিয়েছিলেন তাঁরা। সেই একই কারণ ঘরকুনো বাঙালির, ক্যানিংস্ট্রিটের স্যাঁতস্যাঁতে দেওয়াল পাকাপাকিভাবে ছেড়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি।

    সম্পর্কিত খবর

    বিজ্ঞাপন

    উস্তাদ ভালো নেই। আর আমাদের মনে নেই। তাঁকে মনে নেই। এই দশ ফুট বাই দশ ফুট ঘরে শুয়ে থাকা এখন নিত্য নৈমিত্যিক রুটিন। এখন আর জার্মানি, আমেরিকা থেকে মানুষ ছুটে আসেনা তাঁর এই ঘরটাতে। একটা সময় আসত। বিদেশিদের আবদার থাকত সানাই শেখার। সারাজীবনে একটা স্কুলও খুলতে পারেননি তিনি। আজ আশির কোঠায় এসে চান একটা সানাইয়ের স্কুল। কিন্তু কে শোনে তাঁর আওয়াজ?

    বিজ্ঞাপন
    aliahmed

    একটা দিন কাটালাম উস্তাদের সঙ্গে। সকাল সকাল উপর থেকে চেয়ারে করে তাঁকে নামানো হল ডায়লাসিস করানোর জন্য। সেখান থেকে হুইল চেয়ারে করে নাখোদা মসজিদের সামনে আনা। তারপর গাড়ি করে হাসপাতাল। কলকাতার জনবহুল রাস্তায় যখন হুইল চেয়ারে বসেছিলেন এক শীর্ণকায় বৃদ্ধ। হাজার হাজার পথচারির কোনও আগ্রহই ছিল না তাঁকে নিয়ে। কে এই অতশীপর বৃদ্ধ। তখনই মানুষের কৌতুহল জাগল যখন আমার ক্যামেরাম্যান তাঁর ছবি করতে গেল ক্যামেরা নিয়ে। মানুষ খোঁজ নিলেন কেন দাদুর ছবি তোলা হচ্ছে। রাস্তার ট্র্যাফিক সার্জেন্ট বলে গেলেন রোজই ওনাকে হাসপাতালে যেতে দেখেন এভাবেই কিন্তু এত বছরেও জানতেন না মানুষটা কে ? হাসপাতালেও একই চিত্র। দীর্ঘ ছ’বছর ধরে সপ্তাহে তিনদিন তাঁকে আনা হয় এই হাসপাতালে যারা চিকিৎসা করেন তাঁরাও জানেন না কে এই মানুষটা ? ছবি উঠছে দেখে খেয়াল পড়ল। কৌতুহল জাগল। এটাই আমাদের বাস্তব।

    বিজ্ঞাপন

    এখন আর সানাই থেকে সুর বেরোয় না। বিসন্ন সানাইয়ে ক্রমশ ঝুল ঝড়ছে। তাও বন্ধু ওরা। উস্তাদকে কোনওভাবে বিছানার উপর বসিয়ে দিলে আজও সানাইগুলোকে ঠোঁটে ছোঁয়ায়। আঙুলগুলো ডামি রান করে। আওয়াজ বেরোয় না। কারণ গলার কাছে চ্যানেল করা আছে। সেখানে চাপ পড়লে রক্তপাত হতে পারে। অথচ আজও সানাই হাতে উঠলে কালো ‘টোপি’ তাঁর মাথায় পরা চাই। আমার সামনেও তাঁর ব্যতিক্রম হল না।

    বিজ্ঞাপন

    পুরস্কার? কি না পান নি। রাস্ট্রপতি পুরস্কার থেকে আরম্ভ করে তানসেন পুরস্কার , ভুয়ালকা, সঙ্গীত নাটক আকাডেমি পুরস্কার, বঙ্গবিভূষন-সহ আমেরিকা, আর্মেনিয়া থেকে স্বীকৃতি পেয়েছেন। তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি সানাই বাজিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। আমেরিকা, জার্মানি, মস্কো, ফ্রান্স, হল্যান্ড, তিউনিশিয়া, ফিলিপিন্স, কানাডা, ইন্দোনেশিয়া, হংকং, থাইল্যান্ড, ইংল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, আর্মেনিয়া-সহ বিশ্বের একাধিক শহরের সঙ্গীতপ্রিয় মানুষকে মুগ্ধ করেছেন তাঁর সানাইয়ের জাদুতে। পরবর্তী কালে তাঁদের কেউ কেউ ছুটে এসেছেন ক্যানিংস্ট্রিটের এই এঁদো গলিতে। একটু শিখবেন বলে। বাজিয়েছেন উস্তাদ বিলায়েত খাঁ, উস্তাদ মনওয়ার আলি খাঁ ( উস্তাদ বড়ে গুলাম আলির ছেলে), পন্ডিত ভিজি যোগ, পন্ডিত ভি বালসারা, পিটার মাইকেল হ্যামল (জার্মানির বিখ্যাত পিয়ানোবাদক)-সহ একাধিক বিখ্যাত মানুষের সঙ্গে।

    colombia pictures

    অতীত ছেড়ে ফিরে আসা যাক বর্তমানে। এই মানুষটা ভালো নেই। দীর্ঘ ছ’বছর চিকিৎসার ব্যয় বহন করতে করতে তাঁর পরিবার একেবারে নিঃস্ব। তারমধ্যে প্রায়শই তাকে ভর্তি হতে হয় হাসপাতালে। কারণ এই রোগের সঙ্গেই কখনও নিউমোনিয়া বা কখনও অন্য রোগের শিকার হন তিনি। তখন আরও খরচ।

    আজও পন্ডিত রবিশঙ্করের কথা মনে পড়লে তাঁর চোখ চিকচিক করে ওঠে। মনে পড়ে যায় সেই সিগনেচার টিউন রেকর্ডিংয়ের স্মৃতি। কলম্বিয়া পিকচার্সের জন ফোরম্যানের টাইপ করা চিঠি হাতে নিয়ে বলতে থাকেন, “সেদিন আমি চলে গেলে আজ আমার ফেমিলিটা বেঁচে যেত।” পরক্ষণেই বলে ওঠেন “এটাও ঠিক, আমি কলকাতা ছাড়তে পারতাম না।” আক্ষেপ আর কিছু নেই, শুধু একটা সানাইয়ের স্কুল যদি দেখে যেতে পারতেন তাহলে ভালো লাগত। সেখানে ছোট ছোট ছেলেরা সানহাই বাজাচ্ছে। এই স্বপ্ন আজও দেখেন। এই প্রবল অর্থকষ্টের মধ্যেও। এটাই বাস্তব। বড় রূঢ় বাস্তব। অবশ্য যারা প্রকৃত সঙ্গীত পিপাসু হন তারা বোধহয় অর্থ চিন্তা করতে পারেন না খুব একটা। কিন্তু এটা কি করে সম্ভব? দেশের জীবিত এক কিংবদন্তী এভাবে দিনযাপন করবেন? এটার নামই স্বচ্ছ ভারত? কি জানি? ভাবতে পারি না। শুধু চোখে ভাসে একটাই দৃশ্য একটা বয়স্ক মানুষ নাখোদা মসজিদের সামনে হুইল চেয়ারে বসে আছে গাড়ির অপেক্ষায়। ডায়লাসিস করতে যাচ্ছেন। একটা ক্যামেরাম্যান তাঁর ছবি তুলছে। তখন আমাদের মনে প্রশ্ন জাগছে দাদু কে? কেন তাঁর ছবি তোলা হচ্ছে। কার দোষ খুঁজতে চাই না। শুধু বলতে চাই এই ভদ্রলোকের ঠাকুর্দার হাত ধরেই ব্যাকিংহাম প্যালেসে শোনা শুরু হয়েছিল ভারতীয় মার্গ সঙ্গীত। আলি আহমেদ হুসেনের ঠাকুর্দা উয়াজির আলি খাঁ প্রথম ভারতীয় যিনি ব্যাকিংহাম প্যালেসে সানাই বাজিয়ে ভারতীয় মার্গসঙ্গীতের ডেমোস্ট্রেশান দিয়েছিলেন। যাইহোক উস্তাদ ভালো নেই। বেঁচে আছে। তবে এভাবে কি তাঁর বাঁচার কথা ছিল? তিনি তো দিয়েছেন উজাড় করে। কিন্তু আমরা দিলাম কতটা ?

    ব্লগ: প্রসূণ বিশ্বাস

    সেরা ভিডিও
    • December 1, 2023, 9:15 pm IST বিদ্যুৎ বিলের নাম করে অ্যাকাউন্ট থেকে লাখ লাখ টাকা চুরি! আতঙ্কে পুলিশ-কর্মী!
    নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।

    ছবি

    লেটেস্ট খবর