T20 World Cup for Blind: ২০০৫ সালে সম্পূর্ণ দৃষ্টিহীণ হয়ে যান, বাংলার শুভেন্দু এবার খেলবেন ভারতের হয়ে টি টোয়ন্টি বিশ্বকাপে
- Published by:Debalina Datta
- news18 bangla
Last Updated:
T20 World Cup for Blind: নিঃশব্দে ভারতের হয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন বাংলার শুভেন্দু মাহাতো, অ্যাডিলেডে সেমি যুদ্ধের আগে বাংলা ক্রিকেটে সুখবর৷
#কলকাতা: অ্যাডিলেডে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের মহড়ায় ব্যস্ত রোহিত-বিরাটরা। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেমিফাইনালে ভারতের লড়াই দেখার জন্য তাকিয়ে রয়েছে গোটা দেশ। আরো একটা বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন। অস্ট্রেলিয়া থেকে টিম ইন্ডিয়ার প্রস্তুতির খবর নিয়ে টেলিভিশনের এয়ার টাইম কিংবা সংবাদপত্রের পাতার পর পাতা ভরে যাচ্ছে। বিরাট কী করছেন? রোহিত কী খাচ্ছেন? ভারতীয় টিমের একের পর এক খবর নিমিষেই ভাইরাল হচ্ছে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দিকে হাজার হাজার আলোর রশ্নি। রোহিতরা যখন নিজেদের প্রস্তুত করছেন ঠিক তখন কয়েক হাজার মাইল দূরে পশ্চিমবঙ্গে ঝাড়গ্রামে বসে নিঃশব্দে একটা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতি নিয়ে ফেললেন শুভেন্দু মাহাতো।
advertisement
ঠিকই শুনছেন। ভারতের জার্সিতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন বাংলার শুভেন্দু। অবাক হওয়ার কিছু নেই। মনে হতেই পারে একটা বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল যখন হচ্ছে তখন আরও একটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ কীভাবে হবে? আসলে এই বিশ্বকাপটা দৃষ্টিহীনদের বিশ্বকাপ। অস্ট্রেলিয়া দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তানের মতো শক্তিশালী দেশ অংশ নেয় এই বিশ্বকাপে। চার বছর আগে শেষবার এই টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন ভারত। এবার ফের বিশ্বসেরা হওয়ার লড়াই। ঘোষিত ভারতীয় দলে বাংলার একমাত্র প্রতিনিধি শুভেন্দু। মঙ্গলবার বেঙ্গালুরু পাড়ি দিচ্ছেন ডানহাতি এই ব্যাটার। প্রচারের আলো থেকে বহু দূরে শুভেন্দু। বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার আগে স্থানীয় প্রশাসন কিংবা কিছু মানুষের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা পেয়েছেন বটে। তবে সিএবি কিংবা বাংলার প্রাক্তন তারকা ক্রিকেটারদের শুভেচ্ছা বার্তা জোটেনি।
advertisement
আসলে অনেকেই শুভেন্দুর খবরই জানেন না। ঝাড়গ্রামের গড় শালবনির কৈমা গ্রামে বাড়ি শুভেন্দু মাহাতোর। বর্তমানে শান্তিপুর বিএড কলেজে পড়েন। সেইসঙ্গে জোরকদমে চলছে ক্রিকেট। ব্যাটিং অলরাউন্ডার শুভেন্দু টিম ইন্ডিয়ার বড় ভরসা। B1 ক্যাটাগরি অর্থাৎ সম্পূর্ণ দৃষ্টিহীন বিভাগে পড়েন শুভেন্দু। B2, B3 আরো দুটো বিভাগে ক্রিকেটার থাকেন দলে। যারা অল্প বিস্তর দেখতে পারেন। তবে শুভেন্দু একেবারে দৃষ্টিহীন। বলের ভেতরে থাকা শব্দ শুনে একের পর এক বাউন্ডারি মারতে পারেন শুভেন্দু।
advertisement
১৯৯৭ সালে জন্ম এক দরিদ্র পরিবারে। বাবা চাষের কাজ করেন আর মা অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী। জন্ম থেকেই চোখে কম দেখতেন শুভেন্দু। তার মধ্যেই আরো বড় বিপদ ২০০১ সালে। এক দুর্ঘটনায় দৃষ্টিশক্তি প্রায় পুরোটাই নষ্ট হয়ে যায়। ২০০৫ সালে সম্পূর্ণ দৃষ্টিহীন হয়ে যান। অনেক চিকিৎসা করেও কোন লাভ হয়নি। তবে দৃষ্টি চলে গেলেও জীবন যুদ্ধে হারতে রাজি ছিলেন না শুভেন্দু। মনের জোরকে পাথেয় করে পড়াশোনার পাশাপাশি শুরু করেন ক্রিকেট খেলা। দৃষ্টিহীনদের ক্রিকেট খেলার বিষয়ে জানতে পারেন। হলদিয়ায় পড়াশোনা করতেন যে আশ্রমে সেখানেই ক্রিকেট শুরু। দরিদ্র পরিবারের এই ছেলে ২০১৪ সালে প্রথম বাংলা টিমে সুযোগ পান। তারপরে জাতীয় দল আর এবার বিশ্বকাপ টিম। ভারতীয় দলে তিনিই একমাত্র বাঙালি ক্রিকেটার। ৬ ডিসেম্বর থেকে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে প্রতিযোগিতা। এবার আয়োজক ভারত। ১৭ জনের ভারতীয় দল বেঙ্গালুরুতে প্রস্তুতি শিবির করবে। ভারত, পাকিস্তান অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও নেপাল সহ মোট সাতটি দেশ অংশগ্রহণ করছে। নেপালের বিরুদ্ধে ফরিদাবাদে ভারতের প্রথম ম্যাচ। বেঙ্গালুরুর ক্যাম্পে যোগ দিয়ে প্রথম একাদশে নিজের জায়গা পাকা করাই লক্ষ্য শুভেন্দুর।
advertisement
দৃষ্টিহীনদের বিশ্বকাপে এবার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর যুবরাজ সিং। শুভেন্দু ইচ্ছে একবার যুবরাজের সঙ্গে দেখা করবেন। আর যে ম্যাচেই সুযোগ পাবেন সেখানে নিজের ১০০% দেবেন। ভালো খেলার আত্মবিশ্বাস ছাড়াও শুভেন্দু বিশ্বাস করেন এখন খুব বেশি মানুষ চিনতে না পারলেও দেশের হয়ে ট্রফি জিতে ফিরলে প্রচুর মানুষ তাকে বিরাটদের মতোই চিনতে পারবেন। তাই বিশ্বকাপে যাওয়ার আগে সাহায্য কিংবা বড় সংবর্ধনা না পেলেও আক্ষেপ করতে রাজি নন শুভেন্দু মাহাতো। Input- ERON ROY BURMAN