বাগানে বাদুড়, কুমির, মেছোবিড়াল! প্রকৃতির স্বর্গ এই বাড়ি! নিজের চোখেই দেখে আসুন একবার
- Published by:Nayan Ghosh
- hyperlocal
- Reported by:Madan Maity
Last Updated:
লোধা শবর অধিবাসীদের চিরাচরিত জ্ঞান থেকে শিখেছেন প্রকৃতির সঙ্গে সহাবস্থানের পাঠ।
৭৮ বছর বয়সেও প্রকৃতি ও প্রাণীকূল রক্ষায় অদম্য উদ্যমে কাজ করে চলেছেন পটাশপুরের সোমনাথ দাস অধিকারী। ছাত্রজীবনে রাজনৈতিক কারণে আত্মগোপনে থাকাকালীন সময়েই জন্ম নেয় পরিবেশের প্রতি গভীর ভালোবাসা। পড়াশোনা প্রাণীবিদ্যা নিয়ে। পরে জীবনের সমস্ত সময় ব্যয় করেন প্রকৃতি রক্ষা ও পরিবেশ সচেতনতায়। বৃদ্ধ বয়সেও সাপ ধরায় তাঁর বিশেষ দক্ষতা রয়েছে। বিভিন্ন বিপজ্জনক সাপ উদ্ধার করে তিনি প্রাণ বাঁচানোর কাজ করেছেন বহুবার। (তথ্য ও ছবি: মদন মাইতি)
advertisement
নিজের বসতভিটা ও বাস্তুজমিকে তিনি তৈরি করেছেন এক জীববৈচিত্র্যের ক্ষেত্র হিসেবে। তার বাগানে ঝুলে থাকে বাদুড়, আশ্রয় পায় আহত সাপ, এমনকি চন্দ্রবোড়া, গোখরা বা কালচে কেউটে সাপও। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উদ্ধার হওয়া প্রাণীদের অস্থায়ী আশ্রয় মেলে এই বাগানে। পরে বনদফতরের হাতে তুলে দেওয়া হয় তাদের। একবার তিনি কেউটে সাপের ৪২টি ডিম কাচের বাক্সে রেখে সাপের বাচ্চা ফুটিয়েছিলেন এবং পরে সেগুলি প্রকৃতিতে ফিরিয়ে দেন। (তথ্য ও ছবি: মদন মাইতি)
advertisement
আশপাশের এলাকায় যদি কোনও আহত পশুপাখি পাওয়া যায়, গ্রামবাসীরা নির্দ্বিধায় পৌঁছে দেন সোমনাথ বাবুর বাড়িতে। কারণ সকলেই জানেন এখানে তারা সঠিক যত্ন ও চিকিৎসা পাবে। একবার পটাশপুর থেকে উদ্ধার হয়েছিল কুমিরের ছানা, যা রাখা হয়েছিল তার বাড়িতেই। এছাড়াও উদ্ধার হয়েছে আইড টার্টল এবং রাজ্য প্রাণী মেছোবিড়াল। তার বাগানে ৭০০ বেশি গাছ রয়েছে, যার মধ্যে বহু বিরল ও বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতি আজও জীবিত। (তথ্য ও ছবি: মদন মাইতি)
advertisement
সোমনাথ বাবুর বাগান শুধু আশ্রয়স্থল নয়, প্রকৃতি শিক্ষার কেন্দ্রও। স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা এখানে এসে পরিবেশ শিক্ষা গ্রহণ করে। তিনি নিজে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে আশা ছাত্র-ছাত্রীদের প্রকৃতি সংরক্ষণের পাঠ দেন। পরিবেশ রক্ষার বার্তা ছড়িয়ে দিতে তিনি পোস্টার, ফ্লেক্স ও লিফলেট বিতরণ করেন। তার প্রচেষ্টায় এলাকায় পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি হয়েছে এবং অনেক মানুষ সক্রিয়ভাবে কাজেও শামিল হয়েছেন। (তথ্য ও ছবি: মদন মাইতি)
advertisement
প্রকৃতি রক্ষার কাজ করতে গিয়ে একাধিক প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েছেন তিনি। কোথাও প্রাচীন গাছ কাটার খবর পেলে তা থামাতে প্রশাসনের সহযোগিতায় এগিয়েছেন। অনেকবার সফল হলেও, কখনও কখনও ব্যর্থ হতে হয়েছে। তবে ব্যর্থতায় দমে যাননি তিনি। বরং আরও দৃঢ় মনোভাব নিয়ে প্রকৃতিকে রক্ষা করার কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। পাশাপাশি লোধা শবর অধিবাসীদের চিরাচরিত জ্ঞান থেকে শিখেছেন প্রকৃতির সঙ্গে সহাবস্থানের পাঠ এবং সেই জ্ঞান তিনি সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেন। (তথ্য ও ছবি: মদন মাইতি)
advertisement
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পটাশপুর এক নম্বর ব্লকের অমরপুরের এই পরিবেশকর্মী শুধু প্রকৃতি নয়, প্রাকৃতিক শিকড় ও কাঠের টুকরো দিয়ে নানারকম কাঠের মূর্তি ও তৈরি করে ফেলেন। সোমনাথ বাবু বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, মানুষ যদি প্রকৃতিকে রক্ষা না করে তবে মানুষও কোনওদিন বাঁচতে পারবে না। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত আমি চাই প্রকৃতি ও প্রাণীকূলের পাশে থাকতে। আমার এই ছোট্ট চেষ্টায় যদি এলাকাবাসীও সচেতন হয়ে একসঙ্গে কাজ করেন, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সবুজ ও নিরাপদ পৃথিবী রেখে যেতে পারব।” (তথ্য ও ছবি: মদন মাইতি)